সফর শেষে এসে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিচ্ছেন বোলাররা!


প্রকাশিত: ১২:৫২ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

কথায় বলে ‘গাইতে গাইতে গায়েন, বাজাতে বাজাতে বায়েন।’ শুধু প্রবচন নয়, পুরোপুরি বাস্তব। একটা বিষয় যত চর্চা হবে, তত তার ওপরে দখল বাড়বে। এবারের নিউজিল্যান্ড সফরের একদম শেষ ভাগে এসে সে প্রবচন যেন নতুন করে সত্য মনে হচ্ছে।

নেলসন, নেপিয়ার ও মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে তুলনামুলক ব্যাটিং সহায় উইকেটে ব্যাটসম্যানরা জানা ও পারা অংক ভুল করার মত সঠিক সময়ে সঠিক বিষয়টা প্রয়োগ করতে পারেননি। বোলিংয়ের অবস্থাও ছিল তথৈবচ।

ব্যাটসম্যানরা একটু রয়ে-সয়ে উইকেটে নিজেদের মানিয়ে নেবার আগেই তড়িঘড়ি করে মারতে গিয়ে অকাতরে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। এছাড়া বাউন্সের সাথে মানিয়ে নিতেও সমস্যা হয়েছে তাদের।

নিউজিল্যান্ডের উইকেটে বাউন্সার ছুড়তে খুব বেশি শর্ট লেন্থে বল ফেলার দরকার পড়ে না। ফাস্ট বোলারদের যাদের হাই আর্ম অ্যাকশন আছে, তারা কাঁধের ব্যবহার করেই বাড়তি বাউন্স আদায় করে নেন। যা রীতিমত বাউন্সার হয়ে আসে। আর থ্রি কোয়ার্টার ডেলিভারিও বুক ও মুখ সমান উচ্চতায় চলে আসে।

Babuবাংলাদেশের উইকেটে যা কল্পনাও করা যায় না। একই সমস্যা হয়েছে বোলারদেও ক্ষেত্রেও। তারাও ঠিক কোন লাইন ও লেন্থে বল করলে ব্যাটসম্যানকে একটু দমিয়ে রাখা যাবে, সাফল্যের দেখা মিলবে- তা ঠাউরে উঠতে পারেননি।

যে কারণে সীমিত ওভারের সিরিজে অকাতরে মার খেয়েছেন সব বোলার। সেই ব্যাটসম্যান ও বোলাররাই সফরের শেষ দিকে এসে সত্যিকার করনীয় কি? তা ঠাউরে উঠতে শুরু করেছেন। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতে হলে কি কি করতে হবে? তা ভাল জানা হয়েছে বলেই ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ৩৫৯ রানের বিশাল পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে পেরেছেন ব্যাটসম্যানরা।

উইকেটের চরিত্র এবং পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়া ছাড়া এতবড় পার্টনারশিপ গড়ে তোলা অসম্ভব। সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে বোলিংটাও মন্দ হয়নি।
এবার ক্রাস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে এসে বোলাররাও নিজেদের খুঁজে পেয়েছেন যেন। তারাও জেনে গেছেন অফস্ট্যাম্পের আশপাশে ভাল জায়গায় বল ফেলে সুইং করাতে পারলেই কিউইদের ঠান্ডা রাখা যাবে, সাফল্যেরও দেখা মিলবে।

তাই প্রথম টেস্টে ব্যাটসম্যানরা ৫৯৫ রানের অত বড় স্কোর করার পর এবার দ্বিতীয় টেস্টে বোলাররাও জ্বলে উঠেছেন। পেসাররা একটা চেইনে বল করা আত্মস্থ করে ফেলেছেন।

braverdrink

ঠিক ড্রাইভিং জোনের একটু বাইরে ক্রমাগত বল করতে পারলে সাফল্যের দেখা মিলবে- এ সত্য জানা হয়ে গেছে বোলারদের। তাই তো আজ সাকিব, কামরুল ইসলাম রাব্বি, তাসকিন ও মেহেদী হাসান মিরাজদের বল সামলাতে কষ্ট হয়েছে রাভাল, ল্যাথাম, রস টেলর, উইলিয়ামসনদের।

ব্যাটিং ও বোলিংয়ে করণীয় ও অত্যবশ্যকীয় কাজগুলো জানা হয়েছে খেলে খেলে। দেখে ও বুঝে। উইকেট সম্পর্কে যে ধারনা জন্মেছে সেটা শুধু বোলিং ডিপার্টমেন্টের বোলিংয়ে নয়, ওয়েলিংটনে টেস্ট অভিষেক হওয়া ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদের কথায় আরও পরিষ্কার হবে।

আজ খেলা শেষে ক্রাইস্টচার্চ এবং ওয়েলিংটনের উইকেটের তুলনা করে তাসকিন বলেন, উইকেটে আহামরি কিছু নেই। আমার মনে হয় এটা স্পোর্টিং উইকেট। বোলার ও ব্যাটসম্যান- উভয়েরই পক্ষে কাজ করে। ভাল জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করতে পারলে সাফল্য আসবে। আবার ব্যাটসম্যান দেখে খেললে রান পাবে।’

তবে জানাতে ভোলেননি, ওয়েলিংটনের চেয়ে ক্রাইস্ট চার্চের উইকেটে সুইং বেশি হয়। ‘আমরা সবাই আজ ভাল বোলিং করেছি। আমি আর রুবেল ভাই বাড়তি গতিতে বল করেছি। সুইংও পেয়েছি।’

এখানেই শেষ নয়। আজ বাংলাদেশের বোলাররা শর্ট বলও করেছেন। রুবেলের এক্সপ্রেস বাউন্সারে মাথা সরাতে না পেরে হেলমেটের পেছনের অংশে লেগে হতচকিত হয়ে গেছেন কিউই ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ ল্যাথাম।

ভাগ্য ভাল হেলমেটের পিছনের অংশেও ওয়েজার (জালির মত) লাগানো ছিল। না হয় মাথায় কঠিন আঘাত পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। ওই একবার মাথায় লাগানো ছাড়াও আজ সারা দিনে রুবেল, তাসকিন অন্তত পাঁচ-ছয় বার ব্ল্যাক ক্যাপসদের বাউন্সারে বিচলিত করে ছেড়েছেন।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এ সফরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে শরীরে আসা ডেলিভারিতে সমস্যা হচ্ছে, প্রথম ইনিংসেও বাইরে থেকে ভিতরে আসা বুকের পাঁজর সোজা ডেলিভারিকে বিচলিত তামিম ও সাকিবের মত অভিজ্ঞ এবং পরিণত পারফরমাররাও। দুজনই বলের লাইন থেকে ব্যাট ও শরীর না সরিয়ে ফ্লিক আর গøান্সের মাঝাাঝি শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ তুলে বিদায় নিয়েছেন।

আজ রুবেল, কামরুল ইমলাম রাব্বি ও তাসকিন আহমেদ বেশ কবার ওই ধরনের ডেলিভারিও ছুড়েছেন। এর সবই হয়েছে পরিবেশের সাথে ধীরে ধীরে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারায়।

শুধু পেসারদের কথা বলা কেন, বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসানও সিরিজে প্রথমবারের মত ছন্দ ফিরে পেয়েছেন। সেই ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর প্রথম বিদেশ সফর।

প্রায় আড়াই বছর পর বিদেশ-বিভুঁইয়ে খেলতে আসা। তাও নিউজিল্যান্ডে। যেখানে উপমহাদেশের সব দল এসে খাবি খায়। সেখানে ছয় সাত বছর খেলতে আসলে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সময় লাগবেই।  

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।