টেস্ট বোঝা গিয়েছে সাদা ড্রেস আর লাল বল দেখে


প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

আজকে প্রথম দিন শেষ হলো। এখানে কিছু ব্যাপার আছে। এক নম্বর হলো, প্রথম টেস্টে আমরা ভালো খেলতে খেলতে এক পর্যায়ে এসে ছোট কিছু কারণে হেরে যাওয়ার পর ভেবেছিলাম হয়তো এই ম্যাচটাতে আমরা ফিরতে পারবো; কিন্তু মাঝে দলের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড ঝড় গিয়েছে। আমরা বলতে পারি ওয়েলিংটন টেস্ট শেষে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ শিবির একটা মিনি হাসপাতাল হয়ে গিয়েছিল। অনেকগুলো ক্রিকেটার ইনজুরিতে পড়েছিল।

এ পর্যায়ে এসে আমরা বলতে পারি, হাথুরুসিংহে কিংবা আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট যে ২১-২২ জনের একটা বিশাল বহর নিয়ে নিউজিল্যান্ড গিয়েছিল, তারা হয়তো আগে থেকেই জানতেন, নিউজিল্যান্ড গিয়ে আমাদের এতগুলো খেলোয়াড় ইনজুরির শিকার হবে। এ কারণেই হয়তো এতবড় বহর নিয়ে তারা সফর করেছে।

অথচ, ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের আগে একাদশ গঠন করার জন্যই খেলোয়াড় হাতে নেই টিম ম্যানেজমেন্টের। আমাদের চরম সৌভাগ্য যে দলের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত ছিল। এটা হচ্ছে মূলতঃ আমাদের পরিকল্পনায় যে অনেক বড় ভুল ছিল তারই পরিণতি। সেই মারাত্মক ভুলেরই খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ।

টস জিতেছে নিউজিল্যান্ডই এবং যেটো ভেবেছিলাম তারা সেটাই করেছে। বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে ফিল্ডিং নিয়েছে। টসের সময় আমার কাছে একটা জিনিস খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে। সাধারণত প্রতিটা টেস্ট দলের অধিনায়ক যখন টস করতে যায়, তখন তারা তাদের ক্রিকেট বোর্ডের লোগো অঙ্কিত ব্লেজার পরে মাঠে নামে।

কিন্তু আজ দেখলাম কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে ব্লেজার ছাড়াই টস করতে গেলো আমাদের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তাকে ব্লেজার ছাড়া দেখে খুবই আশ্চর্য লেগেছে আমার। কারণ, একটা জাতীয় দলের অধিনায়ক টস করতে যাচ্ছে ব্লেজার ছাড়া। এটা খুব বেমানান লাগছিল আমার কাছে। এটা খুবই লজ্জাজনক একটা বিষয়। আমাদের ক্রিকেটারদের পেশাদারিত্বের যে কতটা অভাব, সেটাই দেখা গেলো এই ঘটনার মধ্য দিয়ে। সেই অভাবের ফলেই হয়তো আমরা টসে হারলাম।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখে সাদা ড্রেস আর লাল বল ছাড়া কখনোই মনে হয়নি যে আমরা টেস্ট খেলছি। একেবারে ওয়ানডে স্টাইলে খেলেছি। যার ফলশ্রুতিতে ৫০-৬০ ওভারের পর ওয়ানডেতে যে রান হয়, আমরা সেটা করেছি।

টেস্ট ক্রিকেট তাহলে আমরা আর কবে শিখবো? ১৬ বছর পার হওয়ার পরও টেস্ট ক্রিকেট যে ওজন নিয়ে খেলতে হয়, সেটা আমরা এই ম্যাচেও দেখতে পেলাম না। তারপরও আমরা কিন্তু ৩০০’র কাছাকাছি রান করেছি।

উইকেটের যে অবস্থা, একেবারে পুরোপুরি ব্যাটিং উইকেট। এখানে এমন কোনো কিছুই নেই। আবহাওয়ার কারণে হয়তো বল কিছুটা লেগ সুইং করছিল। এছাড়া উইকেটে কিছুই নেই। পুরোপুরি ব্যাটিং উইকেট। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, যেখানে আমরা নিউজিল্যান্ডের উইকেটকে ভয় পাচ্ছিলাম, সব ভয় দুর হয়ে গেলো আজকের উইকেটটা দেখে।

এই উইকেটে সাকিব এবং সৌম্য মিলে ভালো একটা জুটি গড়েছে। এই একটা বড় জুটিই আমরা দেখেছি এবং তারা ওয়ানডে স্টাইলে ক্রিকেট খেলেছে বলেই এ রানগুলো করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা জানি যে, টেস্ট ক্রিকেটে ফিল্ডিং অনেক সময় আক্রমণাত্মক থাকে। সে সুযোগে বড় শট খেলে আমরা এ রানগুলো করে ফেলতে সক্ষম হয়েছি।

সৌম্য ভালো ব্যাটিং করেছে সত্য। তবে সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে সেটাকে তিন অংকের ঘরে নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা সেটা তার মধ্যে দেখিনি। সাকিবের পঞ্চাশ করার পর ইনিংসটাকে যে বড় করতে হবে, এটার জন্য যে চেষ্টা থাকা দরকার সেটাও দেখতে পাইনি আমরা। পরবর্তীতে তো দেখলামই যে আমাদের ব্যাটিংয়ে টেকনিকের কী অবস্থা!

পুরো সফরেই আমরা এমন টেকনিক সমস্যায় ভুগেছি। আজও একইভাবে সংগ্রাম করেছে ব্যাটসম্যানরা। ওয়ানডের মত খেলে হয়তো আমরা তিনশ’র কাছাকাছি রান করেছি। তারপরও বলবো, টেস্ট ক্রিকেটের জন্য এটা কিছুই না।

মুশফিক, ইমরুল এবং মুমিনুল- এই তিনটা মূল ক্রিকেটারকে বাদ দিয়েই আমাদেরকে একাদশ সাজাতে হয়েছে। এখানে একটা কথা বলতে চাই, আমাদের দেশে যে খেলোয়াড়ের সংখ্যা কম, টেস্ট ক্রিকেটারের সংখ্যা যে নাই বললেই চলে কিংবা আমাদের পাইপলাইনে ক্রিকেটারের যে কত অভাব, তারই প্রমাণ দেখলাম এই টেস্টে। শেষ পর্যন্ত খেলোয়াড় না পেয়ে আমাদেরকে শান্তর মত একেবারে অনভিজ্ঞ একজন ব্যাটসম্যানকে নামিয়ে দিতে হলো।

আবারও বলছি আমাদের সিলেকশনে যে কত ভুল ছিল সেটা আবারও প্রমাণ হলো। তিন নম্বর ওপেনার নিয়ে যাইনি। সেখানে আমাদের ব্যাকআপ ক্রিকেটার কে থাকবে সেটা ছিল না। ব্যাকআপে যারা ছিল, তাদের মধ্যে কোনো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নেই। ওয়ানডে বলেন, টি-টোয়েন্টি বলেন কিংবা টেস্ট- তিন ফরম্যাটেই আমাদের খেলোয়াড়ের সংখ্যা খুবই কম। এ জায়গাটায় আমরা কোনো কাজই করিনি।

২১-২২ জনের বিশাল একটি বহর নিয়ে আমরা নিউজিল্যান্ড গেলাম। সেই দলে মোসাদ্দেকের মতো ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভালো রান করা ক্রিকেটার ছিল। তাকে আবার টেস্টের আগেই দেশে পাঠিয়ে দিলাম। শেষ পর্যন্ত খেলোয়াড় সঙ্কট দেখা দিল। এসব আসলে সেই পরিকল্পার অভাবেরই ফসল।

এখানে একটা বিষয় আমাকে আবারও বলতে হচ্ছে। যে বিষয়টা সিলেকশন কমিটিকে বড় সমস্যায় ফেলেছে, সেটা হলো কোচ এবং ম্যানেজারকে সিলেকশন কমিটির ভেতর ঢোকানো। তাদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেয়া হলো। এ কারণেই নির্বাচকরা তাদের কাজটা স্বাধীনভাবে করতে পারেনি। নির্বাচকদের আমি দোষ দেবো না। তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছে; কিন্তু তাদের কাজের ওপর হস্তক্ষেপের কারণেই আজ দলের এই অবস্থা এসে দাঁড়িয়েছে।

braverdrink
বাংলাদেশের হয়ে আজ দু’জনের অভিষেক হয়েছে। নুরুল হাসান সোহান, নাজমুল হোসেন শান্ত। এ দু’জন ভালো ব্যাটিং করেছে। ২০ ওভারেরমত জুটি গড়ে টিকেছিল উইকেটে। তাদের সঙ্গে কামরুল ইসলাম রাব্বি টেস্ট ব্যাটিং করেছে। ৬৩ বল টিকেছিল সে। আসলে সোহান-শান্ত-রাব্বি- এই তিনজনকে দেখেই আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। আর কাউকে মনে হয়নি টেস্ট খেলতেছে।

২৮৯ রানের ইনিংস নিয়েই দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশকে লড়াই করতে হবে। এই রানটা রক্ষা করতে হলে আমাদের তিনটা ডিপার্টমেন্টকে খুব ভালো করতে হবে। সেই ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে পেস এবং স্পিন বোলিং। আশা করছি বাংলাদেশের পেসাররা ঘুরে দাঁড়াবে। বিশেষ করে রুবেল হোসেনের ওপর অনেক ভরসা আমাদের। সে দলে ফিরে এসেছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে দিনের খেলা শেষ হওয়ার এক ওভার আগে ডান হাতের কনুইতে বল লেগে সে কিছুটা আহত হয়েছে। আমি জানিনা তার কী অবস্থা কিংবা আগামীকাল বল করতে পারবে কি না। আশা করি, সে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।

দ্বিতীয় দিন সকালে আমাদের বোলারদের বেশ দায়িত্ববান হতে হবে। তাড়াতাড়ি উইকেট নিতে হবে। যদিও টেস্ট ম্যাচে উইকেট নেয়াটা অনেক কঠিন। তার চেয়ে বরং খেলায় তাদেরকে চেপে ধরাটাই হবে বড় কাজ। কারণ মনে রাখতে হবে, টেস্ট ম্যাচকে আমরা ভাবি রানের খেলা; কিন্তু সেখানে রানের চেয়েও বড় একটা বিষয় হলো সময় সেটাই প্রমাণ করতে হবে আমাদেরকে।

শুভ কামনা রইলো বাংলাদেশ দলের জন্য। এই টেস্টে আমরা হারি-জিতি যাই করি না কেন, আমরা লড়ে হারতে চাই।

আইএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।