নিজেদের দায়িত্বটাই বুঝতে পারছে না ব্যাটসম্যানরা


প্রকাশিত: ০৩:৫৯ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

ঘটনাবহুল একটি টেস্ট ম্যাচ অতিবাহিত করলো বাংলাদেশ। যে ম্যাচটাতে প্রথমে হয়তো খেলার আগে ছিল হারের শঙ্কা। এরপর প্রায় চারদিন ছিল অবধারিত ড্র এবং শেষ দিন এসে আমরা হেরে গেলাম। এই টেস্ট ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য একটা বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে এ জন্য যে, প্রথম টেস্টের (২০০০ সালে) প্রথম ইনিংসে আমরা ৪০০ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে বেশি রান করতে পারিনি। ফলে হেরেছিলাম। এর প্রায় ১৬ বছর পর বেসিন রিজার্ভে এই টেস্টে প্রথম ইনিংসে প্রায় ৬০০ (৫৯৫) রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে বেশি রান করতে না পারায় আমরা হেরে গিয়েছি। দুই টেস্টের মধ্যে তুলনা করলে কখনোই বলা যায় না যে, এই ১৬ বছরে টেস্টে বাংলাদেশের উন্নতি ঘটেছে।

তারপরও এই টেস্ট ম্যাচটাতে প্রায় চারদিন মনে হচ্ছি ড্র হবে; কিন্তু এরপর এসে আমরা হেরে গেলাম। এর মূল কারণটা যদি বের করা হয়, তাহলে দেখবো যে আমরা আসলে জয়ের পরিস্থিতি কখনোই সৃষ্টি করতে পারিনি। সে তুলনায় নিউজিল্যান্ড অল্প একটু যে সুযোগ পেয়েছিল, সে সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে তারা আমাদেরকে হারিয়ে দিয়েছে।

এখানে বলা বাহূল্য যে, এই টেস্টে তিন পেসারের অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশের। যে ভেন্যুতে খেলা হয়েছে, ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ। এখানে নিউজিল্যান্ড এই টেস্টের আগে ১৯টা ম্যাচ হেরেছে এবং ১৬টা জিতেছিল। সব কিছু কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। যদিও বলেছি যে, তিনটা নতুন অভিষেক হয়েছে। এতে প্রমাণ হচ্ছে যে, বাংলাদেশে নতুন খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি; কিন্তু প্রকৃত টেস্ট ক্রিকেটারের সংখ্যা কম।
braverdrink
আর যে জায়গায়টায় এই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে সেটা হচ্ছে- দায়িত্ববোধের অভাব। সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি, মুশফিকের বড় সেঞ্চুরি কিংবা তামিম-মুমিনুলের ঝড়ো ব্যাটিং, পক্ষান্তরে প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের টম লাথামের ১৭৭ রানের ইনিংস। তবে ম্যাচের ফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনটি সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সেটা আগে দেখতে হবে। লাথাম করেছে ১৭৭ আর দ্বিতীয় ইনিংসে উইলিয়ামসন করেছে গুরুত্বপূর্ণ সেঞ্চুরি। প্রয়োজন অনুসারে ব্যাটিং করার যে বিষয়, সেটাই করেছে নিউজিল্যান্ড। আমরা অনেক বড় বড় ইনিংস খেলেছি সত্য। তবে এগুলো কোনো কাজেই লাগেনি এবং প্রয়োজন অনুসারে আমরা ব্যাটিং করতে পারিনি।

সাকিব আল হাসান ডাবল সেঞ্চুরি করেছে প্রথম ইনিংসে; কিন্তু সে কি দ্বিতীয় ইনিংসে তার নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিল? দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম কী তার দায়িত্বটা বুঝতে পেরেছিল? তাদের দায়িত্ববোধের তুলনায় নিউজিল্যান্ডের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখবেন রস টেলর আর কেন উইলিয়ামসন কী দায়িত্বটা পালন করেছেন! উইলিয়ামসনের যে দায়িত্বটা ছিল, সে সেটা পুরোপুরি পালন করেছে।

এই যে, দু’দলের মধ্যে দায়িত্ববোধের পার্থক্য এ জায়গাতেই আমরা অনেক বেশি পিছিয়ে পড়েছি। আজ সকালে ম্যাচের যে অবস্থা ছিল, সেখানে পরিস্থিতি বলছিল সাকিব আল হাসান, সাব্বির কিংবা মুশফিক- যারা ব্যাটসম্যান ছিল তাদের দায়িত্ব ছিল যতক্ষণ পারা যায় ততক্ষণ টিকে থাকা। পরিস্থিতির চাহিদাই ছিল এটা; কিন্তু আমরা করেছি তার উল্টোটা।

এর আগেও আমি বলেছি যে, টেস্ট ম্যাচে আধা ঘণ্টা যদি আমরা খারাপ খেলি, তাহলে যে কোন সময় ম্যাচে পিছিয়ে পড়তে পারি। তারই প্রমাণ আমরা দেখতে পেলাম। একটা ভালো সুযোগই আমরা হারালাম। সম্মানজনক ড্র অন্তত করতে পারতাম একটা ম্যাচ। অথচ এই ম্যাচটাতে নিজেদের দোষেই আমরা হারলাম।

এই টেস্ট ম্যাচটি ড্র করলে কিংবা জিতে গেলে আমরা বলতে পারতাম অনেক সাফল্য পেয়েছি। টেস্ট ক্রিকেটে অনেক এগিয়ে গিয়েছি; কিন্তু হারার ফলেই বোঝা গেলো আমাদের সামর্থ্যের ঘাটতি কোথায়। যেখানে ব্যাটিং লাইনআপে তৃতীয় ওপেনার নেই। একেবারে অনভিজ্ঞ তিনজন পেসার নিয়ে আমরা নেমেছি, যেখানে স্পেশালাইজড টেস্ট খেলোয়াড় রাখতে হয়, সেখানে আমাদের নেই বললেই চলে। এর মানে হচ্ছে যে আমরা টেস্ট খেলোয়াড় গড়ে তুলতে পারিনি। ফলশ্রুতিতে আমরা তিন ফরম্যাটেই হেরে চলেছি।

টেস্ট ম্যাচটির দিকে তাকালে দেখবো সাকিব ডাবল সেঞ্চুরি করেছে, মুশফিক বড় ইনিংস খেলেছে। এগুলোতে কিন্তু কোনো লাভই হয়নি। কারণ, এগুলো টেস্টের ফলাফলে কোনই প্রভাব ফেলতে পারেনি। আমার মনে হয় ব্যাটসম্যানরা এখনও তাদের দায়িত্বটাই ঠিক মত বুঝতে পারছে না। কোথায়, কোন জায়গায় ভালো খেলতে হবে, সেটাই তারা বুঝতে পারছে না।

আরেকটা প্রশ্ন আমার মনে উদয় হয়েছে। সেটা হলো, সাকিব যেভাবে আউট হয়েছে, সাব্বির যেভাবে আউট হয়েছে কিংবা মিরাজ যেভাবে রানআউট হয়েছে- তা দেখে মনে হয়েছে আসলে কী কোনো গেম প্ল্যান ছিল আমাদের? গেম প্ল্যান যদি থেকে থাকে, তাহলে সেটাকে আমরা ফলো করিনি কেন?

ইমরুল-মুশফিকের ইনজুরিতে পড়াকে অনেকেই এখন ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এখানে মুশফিকের ইনজুরি নিয়ে আমি বলবো, এটা একটা টেকনিক্যাল ইস্যু। একটা ব্যাটসম্যানের মাথায় বল লাগতেই পারে; কিন্তু এখানে ব্যাটসম্যানের বোঝার ভুলও আছে। কারণ, সাউদি রাউন্ড দ্য উইকেটে কোন থেকে এসে বল করছিল। তার টার্গেটই ছিল ব্লাইন্ড এরিয়ায় বল করা। সেদিক বিবেচনা করলে মুশফিকের রেসপন্স ছিল একেবারে শূন্য। সে বলের লাইনই যেন বুঝতে পারছিল না। এ কারণেই হয়তো বলটা লেগেছে।

তবুও এক্সিডেন্টালি আঘাতটা লেগে গেছে এবং তার জন্য খুব শঙ্কিতও ছিলাম। আল্লাহর রহমত যে, বিষয়টা খুব ভয়ঙ্কর কিছুর দিকে যায়নি। তবে আপনি যদি ইমরুলের ইনজুরি বলেন আর পেসারদের এনার্জি বলেন- এসব দেখে আমার মনে হয়েছে অনেক বেশি বিপিএল খেলে, অনেক বেশি শর্টার ভার্সনের ক্রিকেট খেলে গিয়ে এত লম্বা একটি সফরের জন্য ক্রিকেটারদের সঠিক কোনো প্রস্তুতি ছিল না। বিষয়টাকে যেন আমরা সহজভাবে নিয়েছিলাম। যে কারণে সফরের শেষ দিকে এসেও নিজেদের দায়িত্বটা বুঝতে পারছে না তারা।

আর বোলিংয়ের কথা যদি বলি, আমরা আসলেই খুব ভালো বল করতে পারিনি। আমাদের অনভিজ্ঞ বোলিং যে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে সেটা দেখেই বোঝা গেছে। তার ওপর পুঁজি ছিল একেবারেই কম। এমন চাপের মুখে সঠিকভাবে বল করতে পারেনি একজন বোলারও। বিশেষ করে পেসাররা। চাপের পরিস্থিতি ছাড়া যখন তাদের বল করতে দেয়া হবে, তারা যেন ফাটিয়ে ফেলবে। আর যখনই চাপের মুখে বল করতে দেবেন তখন তারা ফেল করবে। তাসকিনকে মনেই হয়নি চাপের মুখে বল করার মত মানসিক শক্তি তার আছে। রাব্বি-শুভাশিস এরাও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এসব জায়গায় অভিজ্ঞতার অনেক ব্যাপার আছে।

এছাড়া মিরাজ যখন উইকেট পাচ্ছিল তখন দেখলাম তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণেই আমি বলছিলাম, আমাদের বোলিং পরিচালানাটা হয়েছে খুবই বাজে।

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।