টেস্টের ভাগ্য নির্ভর করছে শেষ দিন সকালের ওপর


প্রকাশিত: ০৩:২২ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হলো। খেলা শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা আগেও মনে হচ্ছিল যে, এই ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশই কিছুটা সমস্যায়। এখন বলতে গেলে ড্রাইভিং সিটে নিউজিল্যান্ড। আগামীকালের সকালটা আমাদের জন্য হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কাল সকালে যদি আমরা লাঞ্চের আগ পর্যন্ত উইকেট না হারাই, তাহলে ম্যাচকে ড্র’র দিকে নিয়ে যেতে পারবো। এমনকি কোনোভাবে আমরা জেতার জন্যও চেষ্টা করতে পারবো।

অন্যদিকে যদি কোনোভাবে সকালের দিকে দুটি উইকেট হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমরাই বিপদে পড়ে যাবো। কারণ, খেলা এখনও ৯৮ ওভার বাকি এবং উইকেটের যে কন্ডিশন, এই কন্ডিশনে কিন্তু আমাদের অবশ্যই দায়িত্বশীল এবং অনেক ধৈর্য সহকারে ব্যাটিং করতে হবে।

এই ম্যাচে ইতোমধ্যেই কিন্তু একটু চাপে পড়ে গেছি। এই চাপ থেকে বের হওয়ার একটাই উপায়- এখন ব্যাটসম্যানদের ভালো ব্যাটিং করতে হবে। তারা যদি লাঞ্চ পর্যন্ত ভালো করে ব্যাটিং করতে পারে, এরপর হয়তো আমরা বুঝতে পারবো যে, ম্যাচটা কোন দিকে যাচ্ছে। হয়তো ড্র’র দিকেই যাবে।

আজকের দিনে আমরা দেখলাম, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের তুলনায় আমাদের বোলিং যথেষ্ট ভালো হয়েছে। যদিও উইকেটের অনেক সহযোগিতা পেয়েছে ব্যাটসম্যানরা। একই সঙ্গে আমরা তাদের অতিরিক্ত ৩০ রান দিয়েছি। টেস্ট ম্যাচের জন্য এটা অনেক রান। এটা অনেকটা আমাদের পেছনে ঠেলে দিতে পারে। তারপরও বলবো, ইমরুল কায়েসকে যে কাজের জন্য নামানো হয়েছিল, সে তার কাজ শতভাগ সম্পন্ন করতে পেরেছে। অনিয়মিত একজন উইকেটরক্ষক ৫টি ক্যাচ নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে, এটা কিন্তু অনেক বড় একটি অর্জন।

তবে দিনের শেষ দিকে ইমরুলের ইনজুরিটার অন্যতম কারণ হতে পারে টানা ব্যাটিং করা এবং ১৪৮ ওভার কিপিং করে আবার ব্যাটিং করতে নামা। সে তো সাধারণত এভাবে কিপিং করতে অভ্যস্ত নয়।

আমাদের ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল যেভাবে আউট হয়েছে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেভাবে আউট হয়েছে বা শেষ দিকে মিরাজ যেভাবে আউট হয়েছে- এগুলো কিন্তু খুব একটা ভালো দিক নয়। ম্যাচ জিততে হলে বা ড্র করতে হলে, এর আগেও বলেছি কোনো একটা সময় আধ ঘণ্টা খারাপ খেললেও ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়বো। জাস্ট সে কাজটাই এখন করেছি নিজেরা নিজেরাই। আমরা নিজেরাই নিউজিল্যান্ডকে ড্রাইভিং সিটে বসতে সাহায্য করেছি।

ফাস্ট বোলাররা ভালো বল করেছে। প্রত্যেকটা বোলারই দারুণ বল করেছে। তবে সাকিবকে যে কম ব্যবহার করা হয়েছে তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তাকে ইচ্ছা করলে হয়তো আরও বেশি ব্যবহার করতে পারতাম। কেউ কেউ বলবে হয়তো ব্যাটিংয়ে তার মনোযোগটা বেশি বাড়ানোর জন্য বোলিংয়ে কম ব্যবহার করা হয়েছে; কিন্তু আমি বলবো এটা কোনো সমস্যা নয়। সে যখন বল করতে নামে তখন বিশ্বের এক নম্বর বোলার। ব্যাটিং করতে আসলে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একজন পারফরমার। এ কারণে তার বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

braverdrink

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে উইকেটে রয়েছে মুমিনুল। বাইরে রয়েছে সাকিব-মুশফিক-সাব্বির। এদের নিয়ে কতটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারে বাংলাদেশ? এ প্রশ্নটা যখন সামনে উঠে যাচ্ছে, তখন আমি বলবো, নিউজিল্যান্ড কাল সকালে একটা মরণ কামড় দেবে। এ জন্য বলছি, সকালে ৩০টা ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। মনে রাখতে হবে, এর আগেও আমি বলেছি- এখনও ৯৮ ওভার খেলা বাকি। এটা বিশাল একটি ব্যাপার। এই ৯৮ ওভার খেলতে হলে আমাদের কিন্তু লাঞ্চ পর্যন্ত অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করতে হবে। না হয় আমরা সত্যিই বিপদে পড়ে যাবো।

আমরা জানি যে, স্পিনার হোক, মিডিয়াম পেসার হোক কিংবা পেসার হোক, পঞ্চম দিন সকালে সবাই উইকেটের সাহায্য পায়। সে জায়গাটায় কিন্তু তারা এগিয়ে থাকবে আমাদের চেয়ে। তার ওপর ইনজুরির কারণে ইমরুল নেই। যদিও ইমরুলকে নিয়ে আমি মনে করি শঙ্কার কোনো কারণ নেই। আমরা নিজেরাই কিন্তু নিজেদের ওপর চাপটা নিয়ে ফেলেছি। এখন ব্যাটসম্যানদেরই সে চাপটা কমিয়ে আনতে হবে।

নিউজিল্যান্ডও কিন্তু খারাপ ব্যাটিং করেনি। টম লাথামের ১৭৭ রান, সঙ্গে মিচেল স্যান্টনারের ৭৩- তারা আসলে খুবই সুন্দর ব্যাটিং করেছে। তাদের ব্যাটিংয়ে অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে চাই। কারণ ৫০০ ওপর রান করা সহজ ব্যাপার নয়। তাদের ব্যাটিংও ছিল বেশ মনোমুগ্ধকর। বল এবং শট সিলেকশন থেকে শুরু করে সব কিছু।

এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তও তাদের ব্যাটিংয়ের জন্য সহায়ক হয়েছে। যখন আমরা দেখলাম তাদের উইকেট পড়ছে না, তখন আমরা অকেশনাল বোলারগুলোকে ব্যবহার করতে পারতাম। মাহমুদউল্লাহকে এখন ব্যবহারই করা হয় না বলতে গেলে। অবশেষে যখন তাকে আনা হলো, প্রথম বলেই উইকেট এবং প্রথম ওভারেই সে নিলো ২ উইকেট। আমাদের মুমিনুল ছিল, সাব্বির ছিল। তাদের বোলিংটাকে ব্যবহার করতে পারতাম।

এ কারণেই বলি, আমাদের বোলিং পরিচালনাটা ছিল একেবারেই নিম্নমানের। আমরা যখন পেস বোলার ব্যবহার করেছি, তখন শুধু পেসই ধরে রেখেছি। যখন স্পিনার ব্যবহার করেছি তখন স্পিনারই ধরে রেখেছি। কোনো বৈচিত্র্য ছিল না। রিস্ক নেয়ার যে মানসিকতা থাকা দরকার সেটা দেখিনি। সাব্বিরকে দিয়ে দু-এক ওভার ট্রাই করাতে পারতাম। মাহমুদউল্লাহকে আরও আগে আনতে পারতাম। মনস্তাত্ত্বিক চাপ দেয়ার মতো কোনো কাজই করতে পারিনি। বরং নিউজিল্যান্ড যে সুযোগগুলোর অপেক্ষায় ছিল, আমরা যেন সে সুযোগগুলোই দিয়েছি।

তবুও আমি বলবো, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তো আমরা পঞ্চম দিন পর্যন্ত টেস্ট ম্যাচটা নিয়ে যেতে পেরেছি এবং পাঁচ দিনই কিন্তু আমরা ডমিনেট করতে করতে এগিয়ে নিয়েছি। তবে শেষ মুহূর্তে যদি ভিন্ন কিছু ঘটে, তাহলে সেটা নিজেদের দোষেই। আমাদের যে টেম্পারমেন্টের অভাব তার জন্যই ভিন্ন কিছু ঘটতে পারে।

তারপরও আমি বলবো যে, বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। ভালো খেলছে এবং টেস্ট ম্যাচটা যদি আমরা শেষ পর্যন্ত ড্রও করতে পারি। তাহলে এটাকে বলবো উইনিং ড্র। আজ (চতুর্থ দিন) বিকালবেলা যে বাজে ব্যাটিং করেছি, তার খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের। টেস্ট ম্যাচে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার।

আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।