এখনও আমাদের জয়ের সুযোগ আছে


প্রকাশিত: ০২:৫০ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

একটা সম্মানজনক অবস্থায় আমরা ইনিংস ঘোষণা করেছি এবং তৃতীয় দিনের শুরুতে যখন আমরা ইনিংস ঘোষণা করলাম, তখন ভাবছিলাম যে এই ম্যাচটায় হয়তো জয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অ্যাপ্রোচটা ছিল খুবই পজিটিভ এবং বেশ চমকপ্রদ; কিন্তু অতিরিক্ত অ্যাটাকিং হওয়ার কারণে আমরা প্রথম দিকে বেশ কিছু রান দিয়ে ফেলেছি। যদিও একেবারে নতুন তিন ফাস্ট বোলার দিয়ে শুরু করেছি, তারপরও তারা তিনজনই যথেষ্ট ভালো বল করেছে। তাদের বলে ছিল যথেষ্ট এনার্জি এবং তাদের ভ্যারিয়েশনও ছিল যথেষ্ট ভালো।

দলে মুশফিকুর রহীমের ইনজুরির কারণে ইমরুল কায়েসকে উইকেটের পেছনে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে দায়িত্ব সে পরিপূর্ণভাবে পালন করতে পেরেছে। দুটো ক্যাচ নিয়েছে এবং আমার কাছে মনে হয়েছে, উইকেটের পেছনে মুশফিকের যে অভাবটা ছিল সেটা পুষিয়ে দিয়েছে ইমরুল। পেসাররা ভালো বল করলেও আমরা সাকিবকে দেখেছি অনেক পরে এসেছে বল করতে। মুশফিকের পরিবর্তে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করা তামিম যে ভালো নেতৃত্ব দিতে পারেনি, এর প্রমাণ পেলাম, তার বোলিং পরিচালনা দেখে।

সাকিবকে আনা হয়েছে প্রায় ৩০ ওভারের সময়, অথচ তাকে আমরা নতুন বলে ট্রাই করাতে পারতাম। মিরাজকেও দ্বিতীয় স্পেলে আনা হয়েছে বেশ পরে এবং তার পরের স্পেলটা ছিল দেখার মতো। এতটুকু বয়সের একটা ছেলে, এই কন্ডিশনে এতো সুন্দর করে বাতাসে বল ড্রিফট করাচ্ছিল, যেটা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আমি বলবো- আজকের দিনে সবচেয়ে দুর্ভাগা বোলার হচ্ছে মিরাজ। শেষ ওভারেও একটা সুযোগ এসেছিল তার উইকেট নেয়ার; কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্যাচটা ধরতে পারেনি ফিল্ডাররা।

ফাস্ট বোলার যারা, তাদের মধ্যে শুভাশিস এবং তাসকিন যথেষ্ট ভালো বল করেছে। রাব্বি ২টা উইকেট পেলেও শুভাশিস এবেং তাসকিন তার চেয়ে এগিয়েছিল। রস টেলরের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, যেকোনো সময় আউট হয়ে যাবে এবং তারা যে তাড়াতাড়ি একটা বড় স্কোর গড়ার চেষ্টা করছে সেটা বোঝা যাচ্ছে তাদের ব্যাটিং দেখে। ল্যাথামের সেঞ্চুরি হয়তো স্বাভাবিক। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, আমরা যদি তিনটা দিন হিসেব করি, তাহলে প্রথম দিন আমরা ধরে নেবো ড্র। দ্বিতীয় দিন ধরে নেবো আমরা জিতেছি এবং আজকের দিনটা আমার কাছে মনে হয়েছে ড্র।

এই পর্যন্ত টেস্টের যে অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে আমরাই এগিয়ে আছি নিউজিল্যান্ডের চেয়ে। এই বেসিন রিজার্ভে যে টেস্ট ম্যাচগুলো খেলেছে তারা, সে পরিসংখ্যান বলে, ১৯টা টেস্ট ম্যাচে তারা হেরেছে এবং ১৬টা জিতেছে। জেতার সংখ্যা কিন্তু কম। সেই সুযোগটা এবার আমাদের কাছে এসেছে। জেতার জন্যই বাংলাদেশ খেলতে নেমেছে, জেতার চেষ্টা করছে।

braverdrink

এখনও কিন্তু একটা বড় সুযোগ আমাদের সামনে। কারণ, এখনও আমরাই ড্রাইভিং সিটে বসে আছি। ইচ্ছা করলেই হয়তো এই ম্যাচটা জিততে পারবো। তবে, আজ শেষের দিকে ক্রিকেটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হচ্ছে যে, তারা ড্র করলেই আমরা বরং খুশি। কেননা, আমরা সবাই জানতাম যে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টেও হয়তো হারতে যাচ্ছি। বিশেষ করে প্রথম টেস্টে হয়তো আমরা দাঁড়াতেই পারবো না। টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডেতে বাজে খেলার পর কোনভাবেই আশা জাগছিল না।

কিন্তু যেভাবে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি টেস্ট ম্যাচে, সেখান থেকে এই ম্যাচে ড্রয়ের টার্গেট করাটা হবে আমাদের জন্য বড় দুর্ভাগ্য। যদি ড্র হয় এই ম্যাচটা, তাহলে এটা হবে নিউজিল্যান্ডের জন্যই জয়ের সমান ড্র। নিউজল্যান্ড যদি ড্র করার চেষ্টা করে, তাহলে মনে হবে যেন তারা এই ম্যাচে জিতে যাচ্ছে। ক্রিকেটের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় উইনিং ড্র। ম্যাচ ড্র হলে তাদের জন্য এটা উইনিং ড্র।

চতুর্থ দিনে সকাল সকাল, অর্থ্যাৎ অন্তত লাঞ্চের আগে যদি তাদের ইনিংসে বড় ধরনের ধ্স নামাতে পারি, তাহলে আমাদের সামনে বিশাল একটি সুযোগ এসে যাবে টেস্ট ম্যাচটিতে জেতার জন্য। এখানে তাদেরকে ফলোঅন করানো হয়তো সম্ভব হবে না। তারপরও দ্বিতীয় ইনিংসে কত রান লিড নিয়ে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছি পঞ্চম দিনের খেলায়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। অন্যথায় যে মানসিকতা নিয়ে খেলছি, যেভাবে খেলছি, তাতে হয়তো ম্যাচটা ড্র’ই হয়ে যাবে।

আজকের দিনে মুশফিককে অধিনায়ক হিসেবে আমি মিস করেছি। বিশেষ করে বোলিং পরিচালনার জায়গায়। একই সঙ্গে সাকিব এবং মিরাজের একটা জায়গায় বিশেষ একটা সমস্যা হচ্ছিল। এ জিনিসটা আমি বুঝতে পারছিলাম না যে, কেন তারা তাদের নরমাল স্পিনটা করতে পারছিল না এবং আজকে মনে হচ্ছিল যে, সত্যিই আমাদের একজন স্পিন বোলিং কোচ প্রয়োজন। কেননা আমরা সবসময়ই আমাদের কন্ডিশনে ভালো করি; কিন্তু এই কন্ডিশনে কিভাবে বল করতে হয়, একজন অভিজ্ঞ স্পিনার কোচ থাকলে হয়তো আমাদের দুই স্পিনারই জানতে পারতো যে, এই কন্ডিশনে কিভাবে সঠিক স্পিন বোলিং করতে হয়।

বাংলাদেশ জিততে হলে কী করতে হবে এ নিয়ে যদি বলি, তাহলে একেবারে সহজ অংক। তাদেরকে খুব দ্রুত অলআউট করতে হবে বা প্রথম ইনিংসে কত রানের লিড নিচ্ছি বা কতটা সময় আমরা পাচ্ছি সেটা অনেক বড় বিষয়। কারণ, খেলা বাকি আছে আর ২০০ ওভারের মত বা ২ দিন। প্রথম দিন মাত্র ৪০ ওভার খেলা হওয়াতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ওভার বেশি করা হবে। এর মধ্যে একদিনে তাদেরকে কত দ্রুত অলআউট করতে পারছি এবং কত রানের লিড নিয়ে লাস্ট টার্গেটটা ওদের দিতে পারছি, সেটার ওপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু। তবুও জেতার সম্ভাবনাই এখানে আমাদের আছে। তবে, যে গতিতে ম্যাচ চলছে, এভাবে চললে ম্যাচ হয়তো অমিমাংসিতই থেকে যাবে।

বাংলাদেশের বোলিংয়ে, যদিও রাব্বি দুটি উইকেট পেয়েছে, তবুও বলবো তার জায়গায় আমি রুবেলকে খুব মিস করেছি। রুবেলের হাতে বলের যে বৈচিত্র্য আছে, আমার মনে হয় রাব্বির চেয়ে সে ভালো করতো। তিনটা অনভিজ্ঞ পেসার যে বল করেছে সেটা তাদের বোলিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। বিপরীতে ওরা খুব আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছে এবং উইকেট একটা ব্যাটিং সহায়ক যে এখানে আসলে কিছুই করার নেই। আবার ফিল্ড সেটিংয়ে আমরা বেশ আক্রমণাত্মক ছিলাম। লক্ষ্য ছিল তাদের চেপে ধরা। এটাও একটা ইতিবাচক দিক। তাদের মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে টেস্টে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজানোর সাহস আমাদের তৈরি হয়ে গেছে।

আরেকটা বিষয় বলতে হচ্ছে, স্লিপে আমরা কয়েকটা ক্যাচ মিস করেছি। এর একটা কারণ হতে পারে। দেশে আমরা স্পিন বোলিংয়ের সময় স্লিপ ফিল্ডার ব্যবহার করি। পেসে করি না। পেসের সময় আমাদের দেশে তেমন বাউন্সও তৈরি হয় না। কিন্তু দেশের বাইরে এসব উইকেটে তো বাউন্স তৈরি হয়। এখানে স্লিপে আমরা ক্যাচ ধরতে পারছি না, কারণ এসব জায়গায় আমরা স্পেশালাইজড ফিল্ডার তৈরি করতে পারিনি। অথচ, আমাদের একজন ফিল্ডিং কোচ আছেন। তিনি নিজেও এ বিষয়টা  জানেন কি না সন্দেহ আছে।

আইএইচএস/এনইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।