এমন কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা মুশফিকের পক্ষেই সম্ভব


প্রকাশিত: ০৬:০৭ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে কি আফসোসটাই না করেছিলেন। একেবারে আফাসোসে পোরা যাকে বলে। বলেই ফেলেছিলেন, ‘ইস হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিটাই যত নষ্টের গোড়া। ইনজুরির কারণে বাইরে ছিটকে না পড়লে নির্ঘাত খেলতে পারতাম। খুব ভালো উইকেট ছিল। খেলতে পারলে হয়তো রান পেতাম।’ এটুকু বলেই থেমে যাওয়া।

Babuমুশফিকের ব্যাট কথা বলা আর হাসা মানেই দল উপকৃত হওয়া। কে জানে মুশফিক সীমিত ওভারের পুরো সিরিজ দুটি খেলতে পারলে হয়তো এতটা নাকাল নাও হতে পারতো বাংলাদেশ। মুশফিক যে সত্যিই বড় নির্ভরতা, এ উইকেট রক্ষক কাম মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকার অর্থ যে বাংলাদেশের ভালো খেলা, তা আবার নতুন করে প্রমাণ হলো আজ ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে।
 
এ যেন সেই চির চেনা জানা প্রবাদ ‘আসলাম, দেখলাম জয় করলাম। মুশফিক দলে ফিরলেন, ভালো খেললেন। ব্যাট হাসলো, রানও উঠল। সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহীমের হাতে তৈরি হলো টেস্টে যে কোন জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের নতুন রেকর্ড। ভাঙলো তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ৩১২ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড। আর সেঞ্চুরি পেড়িয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির পথে পা বাড়ানো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৪১ রান দূরে থেকে ফিরে আসা। কিউই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্টের  অফস্টাম্পের বাইরে পিচ পড়া ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরা। হয়তো আরও একটু মনোযোগি ও মনোসংযোগি হলে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে যেত।

তা হয়নি তাতে কি? হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি কাটিয়ে শতভাগ ফিটনেস না থাকার পরও আজ মুশফিক যে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটিং করেছেন, তার উপমা দেয়া কঠিন। শেষ দুই ওয়ানডে আর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের পুরো সময় ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবেল’ মুশফিকুর রহিমের সার্ভিস পায়নি টিম বাংলাদেশ। অথচ অধিনায়ক না হলেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে টিম বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ তিনি।

কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে প্রথম একদিনের খেলায় হ্যামস্ট্রিং ইনজুুরির শিকার হবার পর থেকে সেই নির্ভরতার প্রতীক দলের বাইরে। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে মাশরাফি, তামিম, ইমরুল, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরদের সঙ্গেই অনুশীলনেও ছিলেন না। সঙ্গীরা সবাই যখন নিবিড় অনুশীলনে মগ্ন, মুশফিক তখন মাঠে ফেরার সংগ্রামে ব্যতিব্যস্ত। সে সংগ্রাম ছিল হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি কাটিয়ে টেস্টে মাঠে ফেরার সংগ্রাম। প্রতিদিন টিম প্র্যাকটিসের আগে শুরু হয়েছে মুশফিকের মাঠে ফেরার লড়াই। রানিং, ফিজিক্যাল ট্রেনিং আর কিপিং প্র্যাকটিসে মগ্ন মুশফিকের একটাই স্বপ্ন ছিল, যে করেই হোক আমাকে টেস্ট নিরিজে মাঠে নামতেই হবে।

টেস্ট অধিনায়কের দৃঢ় সংকল্প আর আত্মবিশ্বাস থাকলেও ভক্ত ও সমর্থকদের কেউ কেউ সংশয় সন্দেহে ছিলেন, অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত টেস্ট খেলতে পারবেন তো ? আর যদিও খেলেন, কিপিং করতে পারবেন? নাকি নুরুল হাসান সোহান গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে দাঁড়াবেন, আর মুশফিক খেলবেন শুধু অধিনায়ক আর ব্যাটসম্যান হিসেবে? যদি মুশফিক খেলতে না পারেন , তাহলে অধিনায়কত্ব করবেন কে? এমন সংশয় সন্দেহও ছিল কারো কারো মনে।  

শেষ পর্যন্ত সব শঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে হ্যামিস্ট্রিং ইনজুরির সঙ্গে লড়েই মাঠে মুশফিক। তারপরও আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল, টেস্ট খেলার মত ফিটনেস কি ফিরে এসেছে আপনার? আপনি কতটা ফিট? মুশফিক খুব সহজ সরল ভাষায়ই জানিয়েছিলেন, ‘আল্লাহর রহমতে শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো। হ্যামিস্ট্রিং ইনজুরির সমস্যা কেটে গেছে । তারপরও নিজেকে ১০০ ভাগ সুস্থ বা ফিট মনে করি না। কারণ হ্যামিস্ট্রং ইনজুরি আবার ফিরে আসে মাঝে মাঝে। তারপরও বলবো, টেস্ট খেলার জন্য ফিট।’  

তার মানে শতভাগ ফিট না মেনেই মাঠে নামা। ফিটনেসে যদি কিছু ঘাটতি থাকেও সেটা মানসিক দৃঢ়তা আর ভালো খেলার দৃঢ় সংকল্প দিয়ে কাটিয়ে দেব, এমন আভাস ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। এবার নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট সিরিজে তার ভালো খেলার ইচ্ছেটা প্রবল হবার একটা বিশেষ কারণও আছে।

তার তিন সহযোগি ও সমসাময়ীক তামিম, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ প্রত্যেকের নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ভালো খেলার রেকর্ড থাকলে এতকাল মানে এই টেস্টের আগে মুশফিক নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ছিলেন ভীষণ অনুজ্জ্বল। সেঞ্চুরি না থাকলেও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সর্বাধীক টেস্ট হাফ সেঞ্চুরির মালিক তামিম ইকবাল। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে একমাত্র টেস্টে শতরান করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ ( প্রথম ইনিংসে ১১৫)। সাকিব ( ১০০) ও ছয় বছর আগে শেষ টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান। সেখানে মুশফিকুর রহীম তিন টেস্টে ছয় ইনিংস খেলে করেছিলেন মোটে ৫০। এই টেস্টে ব্যাট হাতে মাঠে নামার আগে মুশফিকুর রহীমের আগের ছয় ইনিংস ক`টা ছিল এমন ৭ + ২২+৭+৬+ ৮+০।

braverdrink

ইনজুরি কাটিয়ে হয়তো পণ করেই এসেছিলেন, খালি খেলতে পারলেই হয়। দুই ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে না পারার দুঃখ ও আফসোসটা কড়ায় গণ্ডায় মিটিয়ে ফেলবো। ভাগ্য সব সময়ই পরিশ্রমী-অধ্যবসয়ী আর সাহসী বীরদের সঙ্গী। আসলেও তাই। ঠিক সময় মত জ্বলে উঠেছে অধিনায়কের ব্যাট। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবার কাজটিও করলেন দক্ষতার সঙ্গে। পরিশ্রমী ও অধ্যবসয়ী মুশফিকের ব্যাটে অবশেষে রানের ফলগুধারা। ২৬০ বলে ১৫৯ রানের উদ্ভাসিত ইনিংস। এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা যে তার পক্ষেই সম্ভব!

এআরবি/এমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।