রোদেলা সকালে সাউদির বুদ্ধির কাছে হার মুমিনুলের


প্রকাশিত: ০১:০২ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

পাগলা হাওয়ার দৌরাত্ম্য কমেছে অনেকটাই। মেঘও গেছে কেটে। ওয়েলিংটনে সুন্দর নীল আকাশ আর সোনালি রোদেলা সকাল; কিন্তু টিম বাংলাদেশের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা ভাল হয়নি। শুক্রবারের খেলা ১৫ মিনিট না যেতেই ভাঙল মমিনুল হক আর সাকিব আল হাসান জুটি। টিম সাউদির দারুণ এক ডেলিভারিতে আউট মুমিনুল।

Babu-Vaiআগের দিন ৬৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে নট-আউট থাকা এ ছোট-খাট গড়নের বাঁ-হাতি আজ ফিরে গেলেন কোন রান না করেই। নিজের সামর্থ্য, ঘাটতি ও দূর্বলতা সম্পর্কে খুব সচেতন মুমিনুল। অযথা এবং অপ্রয়োজনীয় শট খেলার ইচ্ছেটাই খুব কম তার। অফ স্ট্যাম্পের আশপাশে ছেড়ে খেলার মানসিকতাটা আছে পুরোপুরি।

যেটা টেস্টে লম্বা সময় উইকেটে থাকার অন্যতম পূর্ব শর্ত! বল ব্যাটে আনতে হবে। আবার ছাড়তেও হবে। সব বল ব্যাটে খেলা চলবে না। দরকারও নেই। এগুলো টেস্টে বেশি সময় ধরে ক্রিজে কাটানোর মন্ত্র। তা যে যত বেশি রপ্ত করতে পারবে, তার বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য ততই বাড়বে।

মমিনুল এ কাজটা করতে পারেন। তাই টেস্টে তিনিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান। প্রথম দিন দমকা বাতাস আর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় কিউই বোলাররা যে বাংলাদেশকে চেপে ধরতে পারেনি, তার অন্যতম কারণ মমিনুলের সতর্ক ও সাবধানি ব্যাটিং।

তামিম শুরু থেকে একটা লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় নেমেছিলেন। যে করেই হোক আলগা বলগুলোকে শাস্তি দিতে হবে। খাট লেন্থের বল, হাফ ভলি আর ওভার পিচ মিস করা যাবে না। সেগুলোকে যতটা সম্ভব সীমানার ওপারে পাঠানোর চেষ্টা করতে হবে।

সে চেষ্টায় তামিম ছিলেন শতভাগ সফল। ৫০ বলে ৫৬ রান। যার ৪৪ শুধু বাউন্ডারি থেকেই। এতেই বোঝা যায় তামিম শুধু অপেক্ষায় ছিলেন কখন বাজে বলবে আসবে, আর সেটাকে সীমানার ওপারে পাঠাবেন।

অন্যদিকে মমিনুল খেলেছেন একদম ভিন্ন অ্যাপ্রোচে। যতক্ষণ তামিমের সাথে ছিলেন, ততক্ষণ মুমিনুল শুধু একদিক আগলে রাখার কাজে ব্যস্ত। ৪৪ রানের জুটিতে মমিনুলের সংগ্রহ ছিল মোটে ৩ রান। তামিম আউট হবার পর ধীরে ধীরে নিজে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মুমিনুল। পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে শটও খেলেন। আর তাই প্রথম দিকে ২৯ বলে ৪ রান করা মুমিনুলের প্রথম দিন শেষে রান গিয়ে দাড়ায় ১১০ বলে ৬৪।

কিউই মিডিয়াও মমিনুলের ধীরস্থির ও পরিপাটি ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ। বৃহস্পতিবার খেলা শেষে টাইগার সহ-অধিনায়ক তামিম আর কিউই ফাস্ট বোলার ওয়েগনার মুমিনুলের উচ্ছসিত প্রশংসা করলেন।

টেলিভিশন ধারাভাষ্যকাররাও এ ছোট-খাট গড়নের বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণ যুগের খর্বকায় বাঁ-হাতি উইলোবাজ অ্যালভিন কালিচরনের সাথে তুলনা করেছিলেন। ভাবা হচ্ছিল দেশে ব্ল্যাক ক্যাপসদের সাথে দারুণ সফল মমিনুল এবার তাদেরই মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে শতরানের কৃতিত্ব দেখাবেন।

কিন্তু তা আর হলো না। দ্বিতীয় দিন সকালে ১৯ নম্বর ডেলিভারিতে আউট মমিনুল। আগের দিন তাকে অফস্ট্যাম্পের বাইরে ভুল শট খেলানোর কত চেষ্টাই না করেছেন কিউই ফাস্ট বোলাররা; কিন্তু বেশিরভাগ সময় বলের লাইন ও লেন্থ দেখে ১৫/২০ বার তা না খেলে ছেড়ে দিয়েছেন। তবে আজ আর ছাড়তে পারেননি। কি করে পারবেন?

মমিনুল বধে হঠাৎ পরিকল্পনা পাল্টে ফেললেন যে বোলার সাউদি! বাঁ-হাতি মুমিনুলের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ সময় ওভার দ্য উইকেটে বল করে সফল হননি। পরে মনে হলো, দেখি না রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে কিছু করা যায় কি না? তাতে একটা অ্যাঙ্গেল তো তৈরি হবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। হঠাৎ রাউন্ড দ্য উইকেটে গেলেন সাউদি। আগের দিন ওভার দ্য উইকেটে তাকে অফস্ট্যাম্পের আশ পাশে বল ছোড়া সাউদির ডেলিভারিগুলোর বেশিরভাগ অফ স্ট্যাম্প ও তার আশপাশে পড়ে বেরিয়ে গেছে। আর আজ রাউন্ড দ্য উইকেট ডেলিভারিতে একটা সুক্ষ্ম কোণ তৈরি হলো। তাতেই খানিক বিভ্রান্ত মুমিনুল।

braverdrink

অফ স্ট্যাম্পের অল্প বাইরে পিচ পড়া ডেলিভারি দ্রুত ভিতরে চলে আসতে পারে ভেবে একটু দুর থেকে ব্যাট পেতে দিলেন। তাতেই বিপত্তি। ভিতরে আসবে? নাকি বেরিয়ে যাবে- ঠাউরে উঠতে পারলে হয়ত না খেলে ছেড়ে দিতেন; কিন্তু মুহূর্তেও তা আর পারলেন না। ব্যাট পেতে দিলেন। যা হবার তাই হল; কট বিহাইন্ড।

সুন্দর রোদ ঝলমলে সকালে মুমিনুলের হাসিমুখ গেল বিষাদে ভরে। টেস্ট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি সফল যে দল, সেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার টেস্ট খেলতে এসে শতরানের স্বপ্নটা গেল ভেঙ্গে। তাতে কি?

এ ভুল কাটিয়ে উঠতে পারলে এ সিরিজে শতরানের দেখা মিলতেও পারে।

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।