খুব ভালোভাবে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছি : তামিম


প্রকাশিত: ১১:৪২ এএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

ওয়েলিংটনের ‘পাগলা হাওয়ার’ তোড় কেমন ছিল? বাংলাদেশে মাঝারিমানের ঝড়ে যেমন বাতাসের ঝাপটা আসে ঠিক তেমনি। প্রবল বাতাসে বারবার স্ট্যাম্পের বেলস পড়ে যাচ্ছিল। তাও একবার দুবার নয়, সাত আটবার। বাতাসের তোড়ে দাঁড়িয়ে থাকাই দায়। তারওপর উইকেটে সবুজ ঘাস। আদর্শ ‘সীমিং কন্ডিশন’।

টস হারের পর অনেকের মনেই জেগেছিল অজানা শঙ্কা- কী জানি কী হয়? কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। বরং অতিবড় সমালোচকও এখন মানছেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশ ভালোভাবেই সব প্রতিকুলতা অতিক্রম করে দেখিয়েছেন।

যারা এ কঠিন কাজটি করে দেখালেন, সেই টাইগাররা কি ভাবছেন? দিন শেষে তাদের অনুভুতি কী? জানতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়ই। তাহলে শুনুন তামিম ইকবালের কথা, ‘আমি মনে করি আমরা ভাল ব্যাট করেছি। উইকেটে কিছু ছিল। আর কিছু ছিল বলেই কিউইরা আগে ব্যাটিং না নিয়ে বোলিং করেছে। সব কথার শেষ কথা, আমরা ভালো মত পরিবেশ পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছি। যদি রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) মমিনুলের সাথে শেষ করে আসতে পারতো, তাহলে বলতাম আমরা খুব ভাল করেছি।’

Babuবাংলাদেশ টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক সাহসী নাবিকের মত দলকে পথ দেখিয়েছেন। কিভাবে  অনভ্যস্ত ও প্রতিকুলতাকে জয় করা যায়, সে সাহস জুগিয়েছেন। আদর্শ সিমিং কন্ডিশনে ঘাবড়ে গেলে বিপদ। সাহস হারালে কিউইরা আরও চেপে বসবে।

এই বোধ আর উপলব্ধিটা ছিল ভেতরে। অন্তত এক দিক থেকে স্বাভাবিক ও সাবলীল ব্যাটিং খুব জরুরী। অন্তত আলগা ডেলিভারিগুলো থেকে সর্বাধিক রান তুলতে পারলে স্কোরবোর্ডটা সচল থাকবে। এই চিন্তাও ছিল মাথায়।

শুধু মাথায় থাকা নয়। এ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশনটাও ছিল তেমন। সেই ইতিবাচক মানসিকতা থেকেই ব্ল্যাক-ক্যাপস বোলিংকে চেপে বসতে না দেবার দৃঢ় সংকল্প। আদর্শ টেস্ট ইনিংস যেমন হয়, তামিমের আজকের ৫৬ রানের ইনিংসটা মোটেই তা নয়। ৫০ বলে সাজানো ওই ইনিংসের ৪৪ রানই এসেছে শুধুই বাউন্ডারি দিয়ে।

তামিমের আক্রমনাত্মক উইলোবাজি কেমন ছিল, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে একটা ছোট্ট পরিসংখ্যানে।  এ বাঁ-হাতি ওপেনার যখন বোল্টের বলে ডিআরএসে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়িয়ে ফিরে আসেন তখন বাংলাদেশের রান ৬০। যার ৫৬‘ই এলো তামিমের ব্যাট থেকে।

এমন এক আক্রমনাত্মক অথচ সাবলীল ইনিংস বাকি ব্যাটসম্যানদের বুকে সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে। তামিম-মুমিনুলের ৪৪ রানের পার্টনারশিপ ছিল তামিমময়। যেখানে মমিনুলের অবদান ছিল ৪ মাত্র।

braverdrink

তামিম আউট হবার পর সেই মমিনুল খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। তার ব্যাটও সচল হয়ে ওঠে। আর তাতেই রানের চাকা হয় আরও সচল। তামিমের আত্ববিশ্বাসী ও আক্রমনাত্মক উইলোবাজি আর মমিনুল হকের সত্যিকার টেস্ট আদলের ব্যাটিংয়েই দিন শেষে স্বস্তি। তাই তো কিউই ফাস্ট বোলাররা এতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি।    

হঠাৎ কেন এ আক্রমনাত্মক মেজাজে ব্যাট চালানো? এটা কি টিম প্ল্যানের অংশ? দিনের খেলা শেষে প্রশ্ন উঠল সংবাদ সম্মেলনে। তামিমের সোজা সাপ্টা জবাব, ‘নাহ। মোটেই টিম প্ল্যান নয়। আমি নিজেই ওভাবে ব্যাট চালিয়েছি।’

পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল পুরোটাই প্রতিকুলে। এমন পরিবেশে নিজেদেও কীভাবে মানিয়েছেন? সে কথা জানালেন তামিম, ‘আসলে পরিবেশ ও পরিস্থিতি খুব প্রতিকুল ছিল। এমন বাতাসে কখনো খেলিনি। কখনো কখনো দাড়িয়ে থাকাই ছিল কঠিন। মনে হচ্ছিল, কেউ আমাকে তাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েকবার আমরা থমকে দাঁড়িয়েছি। এমন পরিবেশ আমাদের জন্য একদমই নতুন। অন্তত ৭/৮ বার বেলস বাতাসে পড়ে গেছে।’

এমন পরিস্থিতিতেও ভালো ব্যাট করেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তামিমের কথায় সেটা পরিস্কার, ‘সামগ্রিক পরিবেশ বিবেচনায় আমরা ভাল খেলেছি। সনাতন চিন্তায় ব্যাট করলে লাভ হতো না। আমি একটা পথ খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমার লক্ষ্য ছিল, কোনোভাবেই যাতে আলগা বলগুলো হাতছাড়া না হয়। আলগা বল থেকে সর্বোচ্চ ফায়দা নিতে হবে। সারাক্ষণ মাথায় ছিল খারাপ বল যেন মিস না হয়। খারাপ বল থেকে বাউন্ডারি হাঁকাতে হবে। মোদ্দা কথা, যখনই রান করার সুযোগ আসবে, তা কাজে লাগাতে হবে। আমি চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয়, আমি ও দল খুব ভাল খেলেছি। রিয়াদ ভাই শেষ পর্যন্ত থাকলে অসাধারণ হতো।’  

প্রশ্ন উঠল, আপনার এমন হাত খোলা ব্যাটিং দেখেই কী বাকিরা উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত? তারা কী খানিকটা নির্ভার হয়ে পড়েছিলেন? তামিমের ব্যাখ্যা, ‘নাহ তা হবে কেন? রিল্যাক্সড বলবো না। তবে অস্বস্তির ঘোর কেটে থাকবে হয়ত। আসলে অমন ইনিংসের পর আমিও খানিক স্বস্তিতে থাকতাম।’

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।