বোলারদের নয় মূল চ্যালেঞ্জটা ব্যাটসম্যানদের : মুশফিক


প্রকাশিত: ০৩:০৯ এএম, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

সমালোচক ও নিন্দুকেরা বার বার ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে টানা ছয় ম্যাচ হেরে টেস্টে মাঠে নামাকে বড় করে দেখছেন। তাদের দাবি, মনের দিক থেকে দূর্বল ও ভাঙা চোরা থাকবে বাংলাদেশ। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছেন, কিংবা মনে থাকলেও মাথায় আনছেন না যে , নিউজিল্যান্ডে এসে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নাকাল হওয়াই শেষ কথা নয়। বেসিন রিজার্ভে প্রথম টেস্ট খেলতে নামার সময় ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালি দলের বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট ম্যাচ জয়ের সুখ-স্মৃতিও সঙ্গে থাকবে টিম বাংলাদেশের।

Babuকেউ কেউ হয়ত ফোরন কেটে বলতে চাইবেন, আরে সেটা তো ঘরের মাঠের স্লো ও লো ট্র্যাকে। স্পিনারদের সহায়তায়। আর বেসিন রিজার্ভের ঘাসের উইকেটে গিয়ে সামলাতে হবে কিউই ফাস্ট বোলারদের তোপের মুখে। সব মিলে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কি ভাবছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ? ইংলিশদের টেস্টে হারানোর স্মৃতি নিশ্চয়ই এখনো মনে জাগরুক। বৃহস্পতিবার থেকে যে নতুন চ্যালেঞ্জ শুরু হচ্ছে, তাতে ঐ স্মৃতিটাও কতখানি কাজে দেবে? অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে? আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠলো।

মুশফিকুর রহিমও খুব ভেবে চিন্তে হিসেব কষেই জবাব দিলেন। তার কথার সারমর্ম হলো, একটা টেস্ট জয়ের স্মৃতি অবশ্যই অনুপ্রেরণা। তারপরও একদম তরতাজা। সেটা উদ্দীপক দাওয়াই হিসেবে কাজ করবে অবশ্যই। তবে কন্ডিশন সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই পুলকিত ও রোমাঞ্চিত হবার কিছু নেই। করণীয় কাজগুলো করতে হবে ঠিকমত। বোলার ও ব্যাটসম্যানদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে দিতে হবে শতভাগ নিষ্ঠা ও দায়িত্ব সচেতনতার ছাপ।

তবে মুশফিক শেরে বাংলায় ইংলিশদের হারানোর সুখ স্মৃতির চেয়ে অন্য বিষয়কেই বড় করে দেখতে চাইছেন। তার কথা, ‘সবার আগে মাথায় রাখতে হবে, খেলাটা ভিন্ন কন্ডিশনে। আমাদের দেশের আবহাওয়া, উইকেট ও মাঠ কোনটার সঙ্গেই যার কোনই মিল নেই। তবে একটা সন্তুষ্টি আছে আমাদের। শেষ টেস্টে আমরা প্রমাণ করেছি যে বোলিং গ্রুপ হিসেবে ২০ উইকেট নেবার ক্ষমতা আছে আমাদের। ইংল্যান্ডকে দু`বার অলআউট করে দেখিয়েছি আমরাও পারি। প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেবার সামর্থ্য আছে আমাদের বোলারদেরও। সেটা অবশ্যই সন্তুষ্টির। একরকম অনুপ্রেরণাও। তারপরও এটা ভিন্ন পরিবেশ। আমরা শেষ কবে টেস্ট খেলেছি, তাও অনেক দিন আগে। এখানে সিমিং কন্ডিশন থাকবে। পুরো বিষয়টাই চ্যালেঞ্জিং।’

mushfik

এছাড়া বাংলাদেশ অধিনায়কের মাথায় আরও একটি বিষয় কাজ করছে। ঘরের মাঠে স্লো ও লো ট্র্যাকে জয়ের রূপকার ছিলেন স্পিনাররা। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে দিশেহারা ছিল ইংলিশরা। কিন্তু এখানে সবুজ ঘাসের উইকেট। এবার আর স্পিনারদের হাত ধরে বৈতরণী পার হবার কোনই সুযোগ ও সম্ভাবনা নেই। যা করার করতে হবে পেসারদের।

সে বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন মুশফিক, ‘আমাদের দেশের আবহাওয়া ও উইকেটের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া এবং পিচের চরিত্রগত পার্থক্য অনেক। সম্পূরূর্ণ ভিন্ন। দেশে স্লো ও লো ট্র্যাকে সিরিজ জয়ে মূল ভূমিকা ছিল স্পিনারদের। আর এখানে ঘাসের উইকেটে মূল ভূমিকা রাখতে হবে পেসারদের। তবে আমার মনে হয় না আমাদের পেস অ্যাটাক দূর্বল। সৌম্য সরকারকে ধরে আমাদের পেসার সংখ্যা ৫। আমার বিশ্বাস তারা যথেষ্ঠ ক্যাপেবল। তাদের সামর্থ্য আছে এই কন্ডিশনে ভালো করার। শুধু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেই নয় যে কোন ব্যাটিং শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের পেসারদের ভালো করার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে। তারা যদি বেস্ট বোলিংটা করতে পারে তাহলে অবশ্য সে সুযোগটা থাকবে।  এখানে পেসারদের মূল কাজ হলো ভালো জায়গায় বল ফেলা। পিচে ঘাস আছে, তা দেখে আবেগ তাড়িৎ হলে চলবে না। কাজের কাজ করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে ভালো লাইন-লেন্থে বল করে যেতে’ এমন তাগিদও মুশফিকের কণ্ঠে।

braverdrink

রুবেল হোসেন (২৩ টেস্ট) ছাড়া পেস ডিপার্টেেমন্টের বাকি তিনজনের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার খুবই জীর্ণ-শীর্ণ। কামরুল ইসলাম রাব্বি খেলেছেন দুটি মাত্র টেস্ট। আর তাসকিন ও শুভাশীষ আছেন অভিষেকের অপেক্ষায়। এমন এক অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণ নিয়ে মাঠে নামার আগেও মুশফিক মনে করেন মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে ব্যাটসম্যানদের। অধিনায়কের অনুভব, পেসারদের চেয়েও মূল চ্যালেঞ্জটা ব্যাটসম্যানদের। তাদের এমন স্কোর গড়তে হবে, যাতে বোলাররা লড়াই করার মতো পুঁজি পায়। মূল চ্যালেঞ্জটা সামলাতে  হবে ব্যাটসম্যানদের। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যও অনেক বেশি।’

ব্যাটসম্যানদের প্রতি অধিনায়কের বার্তা ‘ঘাসের উইকেটে কিউই বোলারদের সামলানো এবং বোলারদের লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে দেয়ার দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে ব্যাটসম্যানদের। অধিনায়ক বোঝাতে চেয়েছেন, ব্যাটসম্যানরা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিলে বোলাররা হালে পানি পাবেন।

নিজেদের মেলে ধরার শক্তি সামর্থ্য ও রদস মিলবে। আর ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলে বোলারদের শক্তি ও সামর্থ্য কমে যাবে অনেক। কাজেই তামিম, ইমরুল, মমিনুল, মাহমুদউল্লাহ , সাকিব ও সাব্বিরের কাছেই তার প্রত্যাশা বেশি। সঙ্গে তিনি নিজেও আছেন। এই সাতজন মিলে যদি অধিনায়কের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন, তাহলেই কেবল বোলাররা লড়তে পারবেন।

ব্যাটসম্যানরা কি তা পারবেন? ইতিহাস আশা জাগাচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ২০১০ সালে শেষ টেস্টে সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে মাহমুদউল্লাহ (১১৫) ও সাকিবের (১০০)। তার মানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে সেঞ্চুরি করতে পারেন, এ সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আগের বারই। ছয় বছর পর এবার ব্যাটসম্যানরা সেই ধারা অব্যাহত রাখলে বোলারদের ভালো করার পথও খুলে যাবে।

এআরবি/এমআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।