অভিজ্ঞতা কখনও দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না


প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৭

আরেকটি হতাশাগ্রস্ত দিন পার হলো। আবারও পরাজয়। এই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছিলাম, যখন আমরা টস জিতেও প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নিয়েছি। এই উইকেটের বিষয়টা যদিও আমাদের অজানা ছিল। তবে, আমাদের সবারই জানা ক্রিকেটে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে রান তাড়া করা। নিউজিল্যান্ডের এসব উইকেটে টি-টোয়েন্টিতে প্রচুর রান ওঠে। নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে আমরা খোঁজ-খবর নিয়েই মাঠে নেমেছি; কিন্তু কী কারণে টস জিতেও আমরা ফিল্ডিং নিলাম তা সঠিক আমাদের জানা নেই। নিউজিল্যান্ডে যারা ছিল, তারাই ভালো বলতে পারবেন।

ক্রিকেট পরিসংখ্যান বা মানুষের সাধারণ জ্ঞানে বলে যে, টস জিতলে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিতে হয়। প্রথমে ব্যাট করার সুবিধাটা কিভাবে আদায় করতে হয় তার প্রমাণ কিন্তু রেখেছে নিউজিল্যান্ড। তাদেরকে আমরাই প্রথমে সে সুযোগ করে দিয়েছি।

বোলারদের মধ্যে প্রথম বলেই আমরা একটা উইকেট নিতে পেরেছিলাম। এরপর কিন্তু বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কী পার্থক্য সেটা তারা বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রথম বলেই উইকেট পড়ার পরও তাদের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়নি। খুব স্বাভাবিক ক্রিকেটই খেলেছে এবং ১৯৬ রানের বিশাল একটি টার্গেট গড়ে তুলেছে।

এর মাঝে মাশরাফি, সাকিব, রুবেল যথেষ্ট চেষ্টা করেছে কিছু ভালো বল করার। মাহমুদউল্লাহ যদিও ভালো বল করতে পারেনি। রুবেলের প্রথম ওভারটা বাদ দিলে সেও যথেষ্ট ভালো বল করেছে। বলতে গেলে আমাদের সেরা বোলারই ছিল সে। এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে মোস্তাফিজ এবং রুবেল বেশ ভালো বল করেছে।

তারপরও বলবো যে, আমরা কিন্তু এখনও অরিজিন্যাল মোস্তাফিজকে দেখতে পাইনি। এর কারণ হতে পারে, সে এখনও পুরোপুরি ফিট হয়নি। আরেকটা কারণ হতে পারে, সে জোর করে খেলছে। অথ্যাৎ, খেলতেই হবে তাই খেলছে। তার একটি বলেও সেই ঝাঁঝ দেখতে পাইনি। মনে হচ্ছে এখনও পুরোপুরি ফিট নয়। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, মোস্তাফিজ যেন পুরোপুরি ফিট হয়ে যেতে পারে এবং সেরা ফর্মে ফিরতে পারে। কারণ, সে আমাদের দেশের একটি বড় সম্পদ। আমাদের বোলিংয়ে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

ফিল্ডিং আগের মতই। চমৎকৃত হওয়ার মত কিছু দেখতে পাইনি। এর আগেও আমি বারবার বলেছি যে, ফিল্ডিং এবং রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে আমরা নিউজিল্যান্ডের চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে আছি, যার প্রমাণ আজ আবারও পেলাম। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে, কাছে এবং দুরে কখনোই ফিল্ডারদের কাছ থেকে চোখ জুড়ানো কিছু দেখিনি। আমাদের কিন্তু একজন ফিল্ডিং কোচ কাজ করছে বহুদিন ধরে এবং কী কারণে সেই ফিল্ডিং কোচটি একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ হয়ে গেলেন, সে ব্যাখ্যাও আমরা কখনও জানতে চাইনি এবং জানতে চাইও না।

ব্যাটিংয়ে যদিও আমরা একটা বড় রান তাড়া করতে নেমেছি। সে তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই কিছু উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। তবুও সৌম্য এবং সাব্বির সুন্দর গতিতে এগিয়ে চলছিলো। সেই প্রথম কথা আবারও বলতে হচ্ছে, রান তাড়া করা অবশ্যই সব সময় একটি কঠিন কাজ। তার প্রমাণ দেখতে পেলাম, সাব্বির এবং সৌম্যর উইকেটটা যখন আমরা হারালাম। এটা খুব কঠিন কাজ যে, প্রতিটা ওভারে সাড়ে ৯ এর ওপর রান তোলা। যদিও, সাব্বির-সৌম্য কিছুক্ষণ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা অনেক্ষণ ধরে, অথ্যাৎ ২০ ওভার ধরে টানা করাটা অত্যন্ত কঠিন এবং একটা অসাধ্য ব্যাপার।

নিউজিল্যান্ডের বোলাররা তাদের ফিল্ডারের কাছ থেকে যে সহায়তা পেয়েছেন, সেটা আমাদের বোলাররা পায়নি। আবার তাদের ফিল্ডিং ছিল দুর্দান্ত। বিশেষ করে মোসাদ্দেক সৈকতের ক্যাচটা ছিল দেখার মত। এছাড়া আমাদের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা। এ দুটোই হারের মূল কারণ।

আগের ম্যাচে হেরে যাওয়ার পরও আমরা যখন অপরিবর্তিত একটি দল নামালাম, তখন ফলাফল ভিন্ন কিছুর চিন্তা করার সাহস কমে গিয়েছিল। কী কারণে আমরা অপরিবর্তিত দল নামালাম সেটা বুঝতে পারছি না। যে দলটি হারছে, কিছু ভুল করছে, সে ভুলগুলো শোধরানোর জন্য কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল; কিন্তু আমরা সেগুলো ঠিক না করে আগের দলটাকেই নামিয়ে দিলাম। কোন একজন ব্যাটসম্যানের পরিবর্তে একজন ভালো বোলারকেও খেলাতে পারতাম।

আমরা জানি স্কোয়াডে যারা আছে, এদের মধ্যে রুবেল কিন্তু প্রথম ২২জনেও ছিল না। সেখান থেকে কিন্তু আমরা রুবেলকে নিয়ে গিয়েছি। এখনও সময় আছে, যদি মনে করি তাহলে মুমিনুল এবং দেশ থেকে নাসির, সেখানেই অবস্থান করছে মিরাজ- এদেরকে যদি আমরা একটা করে সুযোগ দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমরা আরও ভালো খেলতে পারতাম।

braverdrink

আমি আশাবাদী একজন মানুষ। যদিও ইতোমধ্যে আমরা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ- দুটোই হারলাম। এরপরও শেষ ম্যাচটা আমরা যদি জিততে পারি, তাহলে হয়তো আমরা টেস্টে ভালো করার একটা অনুপ্রেরণা পাবো। এ কারণে আশা করছি যেন শেষ ম্যাচটা ভালো খেলতে পারি। আমি বলছি না যে জিততেই হবে। আমাদের ধারাবাহিকতা, টপ অর্ডারের ব্যাটিং, বোলিং করানোর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলার বাছাই, ফিল্ডিং ঠিক করা। একই সঙ্গে পেসারদের লাইন এবং লেন্থ ঠিক করে নেয়া। মোট কথা আমি চাই প্রতিদ্বন্দ্বীতাটি অন্তত তৈরি করা হোক। তাহলেই আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে এবং সেটা টেস্টে কাজে লাগবে।

নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগেই যদিও বড় গলায় বলেছিলাম যে, আমরা যাচ্ছি বিপিএল খেলে। কিন্তু আমাদের খেলার যে ধাঁচ, সে ধাঁচ দেখে মনে হয়নি যে, আমরা অনেক প্র্যাকটিসের মধ্যে আছি। শারীরিকভাবে আমরা ক্লান্ত। স্পষ্ট ধরা পড়ছে খেলার মাঝে। সামনের খেলার মাঝে আশা করবো, গ্যাপগুলো কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করা। তাহলে আমরা স্বরূপে ফিরতে পারবো।

নিশ্চিতভাবেই এটা একটা কঠিন সিরিজ। কঠিন এই সিরিজে আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি অনেক বিশ্বাস রাখতে হবে। আর ম্যানেজমেন্টের প্রতি আমার একটা অনুরোধ রইল, আপনারা বেশি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করবেন না। ইতোমধ্যে আপনারা অনেক ভুল করে ফেলেছেন। আপনারা ২২ জনের দল নিয়ে ঘুরছেন। আপনারা বিভিন্ন সময়, অহেতুক নতুন খেলোয়াড় খেলানোর সুযোগ সৃষ্টি করছেন। এগুলো না করে প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ করে দিন। কারণ, অভিজ্ঞতা কখনও দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না।

কারণ, আপনারা দেখলেই বুঝতে পারবেন। নাসির একজন পারফরমার দেশে বসে আছে। শামসুর রহমান শুভ দেশে বসে আছে। এ ধরনের আরও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দেশে বসে রয়েছে। এদেরকে দলেই নেয়া হচ্ছে না। যেমন ধরেন আল-আমিন, দেশে বসে আছে। এদের তো অভিজ্ঞতা আছে, ভালো বল করার। এদেরকে আমরা সুযোগ দেয়ার মানসিকতাই তৈরি করছি না।

আরেকটা বিষয় খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, আজ যেভাবে একেক জনের নামে কথা উঠছে। কোচ এমন করছে, ম্যানেজার তেমন করছে। কিংবা অধিনায়ক এবং ক্রিকেটাররা পারছে না। ম্যানেজমেন্ট ভালো কাজ করতে পারছে না। এগুলো কখনোই উঠতো না, যদি না আমরা জিততে থাকতাম। ঘরের মাঠে আমরা যে সিরিজগুলো জিতেছিলাম, তখন আমাদের দুর্বল এরিয়াগুলো চিহ্নিত হয়নি জয়ের কারণে। ওই সময় অপ্রয়োজনীয় যে জিনিসগুলো করেছিলাম, সেগুলো যে প্র্যাকটিস হয়ে গিয়েছে, কঠিন সময়ে সেগুলো বের হয়ে আসছে। তার প্রমাণ আমরা দেখতে পেলাম এই নিউজিল্যান্ড সিরিজে।

ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার ধরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমি বলবো, টি-টোয়েন্টির ফরম্যাটে ব্যাটসম্যানদের কোনো ব্যাকরণ কাজ করে না। তারা কিভাবে খেলবে, কোন শট কোন দিকে মারবে এসব ভাবার সময় নেই। কারণ, প্রতিটি বলেই থাকে মারার চিন্তা। এই ফরম্যাটে ব্যাটসম্যানের কোনোই দোষ দেয়া যায় না। আমরা কিন্তু আজ প্রায় ২৪ থেকে ২৭টা বল ডট দিয়েছি। ওরা যেগুলো মারার বল, সেগুলো এমনভাবে মেরেছে যে, কনফার্ম হয়েই তবে ব্যাট চালিয়েছে। আমরা কিন্তু এ জায়গায়টায় দুর্বল ছিলাম।

আর রানিং বিটুইন দ্য উইকেট আমাদের খুবই খারাপ, খুবই দুর্বল। শট বলে আমাদের ব্যাটসম্যানরা বেশি আউট হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে শট বল হবেই। তারা সেভাবে পরিকল্পনা করেই আমাদের বিপক্ষে খেলতে নামে; কিন্তু আমাদের উচিৎ ছিল, এই শট বলে নিজেদের আরও তৈরি করে নেয়া। কারণ, এটা নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগেই জানতাম। আপনি পরীক্ষা দেয়ার আগে প্রস্তুতি নেবেন না? এসব কেন হচ্ছে, এর জবাব ব্যাটিং কোচকে দিতে হবে। হাথুরুসিংহে নিজেও কিন্তু একজন ব্যাটিং কোচ।

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।