হতে পারে এটাই আমাদের ফিরে আসার ম্যাচ


প্রকাশিত: ০৩:১২ পিএম, ০৫ জানুয়ারি ২০১৭

দেখতে দেখতে আমরা নিউজিল্যান্ডে একটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলে ফেললাম এবং এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচে হারলাম। নিউজিল্যান্ড সিরিজে এখন পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখতে পাইনি। সুতরাং আমরা একটি জয়ের আশায় তাকিয়ে আছি আগামীকালের ম্যাচের দিকে।

আমার বিশ্বাস, জয় পাওয়াটা অত্যন্ত সম্ভব। সম্ভব এ কারণে বলছি যে, আমরা প্রতিটি ম্যাচেই কিছু কিছু ক্ষেত্র সৃষ্টি করছি, যেখানে জয়ী হতে পারতাম; কিন্তু সেগুলোতে শেষ পর্যন্ত ফেল করছি। প্রতিটি ম্যাচের পরই পরাজয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে একেবারে ক্লিয়ার হয়ে যাচ্ছে যে, হয়তো একাদশ নির্বাচনে ভুল ছিল কিংবা ব্যাটসম্যানদের সেট হয়ে আউট হওয়া, হয়তো ক্যাচ মিস কিংবা দ্রুত রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যাওয়া- এই যে ছোট ছোট ভুলগুলো করছি, এগুলো যদি পরের ম্যাচে আমরা শোধরাতে পারি, তাহলে জয়ের ধারা হয়তো আগামীকালের ম্যাচ দিয়েই শুরু হতে পারে।

নিউজিল্যান্ডের দিক থেকে যদি বলি, তাহলে বলবো আমাদের দুর্বল জায়গাগুলো কিন্তু তারা জেনে গেছে এবং এই জানার সঙ্গে সঙ্গে তারাও ওই জায়গাগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই কাজ করবে। নিউজিল্যান্ড এমন একটা দল, যারা ম্যাচ জিতলেও নিজেদের খেলার মধ্যে যদি কোনো দুর্বল জায়গা ধরা পড়ে, তাহলে তারা সেগুলো নিয়ে প্রচুর কাজ করে। এ কারণে তারাও হয়তো ভুল কম করবে। সুতরাং আমাদের একটি জয় পেতে হলে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ভুলগুলো কম করতে হবে।

নতুন ভেন্যু মাউন্ট মঙ্গানুই। এ ভেন্যুটা বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন। এখানে বাংলাদেশ কখনোই খেলেনি। নিউজিল্যান্ডের বড় অ্যাডভান্টেজ হচ্ছে তাদের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের হোম গ্রাউন্ড। সে নিজেই হোম গ্রাউন্ড হিসেবে সুবিধাটা বেশি আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করবে।

এখানে আমরা যদি ফ্রি ক্রিকেট খেলি, তাহলে আমাদের যে শক্তি আছে এবং যে অভিজ্ঞতা আছে, তাহলে অবশ্যই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবো। তবে আমি একটু অবাকই হয়েছি যে, আমরা যে ১১ জন নিয়ে কাল খেলতে নামবো, তাতে নাকি আগের একাদশের সবাই থাকছেন। অর্থাৎ আগের ম্যাচের একাদশে কোনোই পরিবর্তন আসছে না। আমার মতে, এটা কোনোভাবেই একটা ভালো সিদ্ধান্ত নয়। অন্তত দু-একটি জায়গায় দু-একজন খেলোয়াড়ের পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। এই পরিবর্তনটা হলে অবশ্যই দলের জন্য ভালো হতো।

একাদশে পরিবর্তন আনা খুবই প্রয়োজন ছিল; কিন্তু কেন পরিবর্তন আনা হচ্ছে না, কোচ কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট কারও ওপর জিদ করে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কি না সেটাও চিন্তার বিষয়। একটা ব্যাটসম্যানকে এতগুলো সুযোগ দেয়ার কারণও বুঝতে পারছি না। এত সুযোগ যদি একজন বোলারও পেয়ে থাকে, তাহলে সে নিশ্চিত ব্যাটসম্যান হয়ে যাবে। একজন বোলারকে ব্যাট করার জন্য এত সুযোগ দেয়া হলে, আমি নিশ্চিত দু-একদিন সে রান করে দেখিয়ে দিতো।

রানে ফেরা মানে একটা দুটা ম্যাচে রানে ফেরা নয়। রানে ফেরা মানে ধারাবাহিকভাবে ফেরা। নিয়মিত রান করে যাওয়া। কিন্তু আমরা করছি কী, কেউ একটা ম্যাচে ভালো করলো, তার পাওয়ারে সে আরও ১৫-২০টা ম্যাচে টিকে গেলো। নিয়মিত খারাপ খেলে গেলেও আমরা বলি, সে ভালো। এ ধরনের ক্রিকেটারকে ব্যাকআপ দেয়ার কোনো মানে হয় না।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, দলের যে ম্যানেজমেন্টে যারা আছে তারা হয়তো খুব শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। তারা হয়তো দল নিয়ে একটা বাজে অবস্থার মধ্যে আছেন। কারণ এর আগে আমরা কখনও দেখিনি, পৃথিবীর কোন দলই (ক্রিকেটে) ২১-২২ জনের একটা বহর নিয়ে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এভাবে মুভ করেছে। কারণ, এত বড় একটা বহর ম্যানেজ করা খুব কঠিন একটা কাজ, যে কারও জন্য।

আমার মনে হয়, এটা ছিল একটা ভুল সিদ্ধান্ত। যার ফলশ্রুতিতে হচ্ছে কি? একটা ম্যাচে হেরে গেলে অনেক ছোটখাটো দলে যে কোন্দলের সৃষ্টি হয়, সে রকম হয়তো আমাদের দলে প্রকাশ্যে কিছু দেখা যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট কিছু হয়তো জানি না আমরা। তবে আকাশে-বাতাশে অনেক কিছুই তো ভেসে বেড়াচ্ছে। আমরাও সেখান থেকে অনেক কিছু শুনতে পাচ্ছি।  

আমার বিশ্বাস, এই সিরিজে এখনও ফিরে আসার দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে এবং জিততে পারলে তা টেস্ট ম্যাচে আমাদের অনেক বেশি সাহায্য করবে। আমার মনে হয় এই সিরিজে ফিরে আসার বিরাট একটি সুযোগ আগামীকাল আমাদের হাতে রয়েছে। কালকের ম্যাচ যদি হেরে যাই, তাহলে একদিকে যেমন সিরিজ হেরে যাবো, তেমনি আরো বেশি পিছিয়ে পড়বো পুরো সফরেই। এজন্য এই ম্যাচটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

খেলোয়াড়দের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হচ্ছে তারা আগামী ম্যাচে জয় পেতে মরিয়া। গত ম্যাচেও কিন্তু বেশ কিছু পজিটিভ দিক ছিল। যদিও সেগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা আশা করবো, আগামী ম্যাচে সেই পজিটিভ দিকগুলো কাজে লাগাতে পারবো। এজন্য আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলেন কিংবা আত্মবিশ্বাস- সবই উপরে থাকা উচিত।

আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন একটাই পথ, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং সেটা সম্ভব হবে, আমাদের সবাইকে একসঙ্গে জ্বলে ওঠা। শুধুমাত্র চোখের প্রশান্তির জন্য একটা-দুটা ভালো পারফরম্যান্স নয়। পুরো দলেরই একসঙ্গে ভালো খেলতে হবে।

braverdrink

আমাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, দ্বিতীয় ম্যাচের আগে সময় পেয়েছি। এই সময়ের মধ্যে নিশ্চয়ই টিম ম্যানেজমেন্ট খেলোয়াড়দের যথেষ্ট ফিডব্যাক দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে আশা করতে পারি, হয়তো একটি ম্যাচে জয় পেলে পেতেও পারি।

আগের ম্যাচে আমাদের কী কী ভুল হয়েছে। কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল, এগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই কাজ করেছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। কারণ, আমাদের দলে একজন স্পেশালিস্ট ব্যাটিং কোচ রয়েছেন, প্রধান কোচ যিনি তিনি নিজেও একজন ব্যাটিং কোচ, দলের সঙ্গে ফাস্ট বোলিং কোচ আছে, ফিল্ডিং কোচ আছে। অর্থাৎ সব কিছুই রয়েছে এ দলের সঙ্গে। আশা করবো সবাই সবার কাজটা ঠিকমতো করবেন এবং খেলোয়াড়রাও তাদের কাজ করবেন। যদিও এখন পর্যন্ত এর কোনো চাপ আমরা দলের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না।

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।