তবুও সৌম্যর পক্ষে মাশরাফি!


প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০১৭

কথায় বলে ‘বিপদ কখনো একা আসে না। যখন আসে তখন সবদিক থেকেই আসে। একইভাবে ক্রিকেট সংস্কৃতিতেও অনুরূপ একটা কথা প্রচলিত আছে, তা হলো- যখন কারো খারাপ সময় যায়, তখন নাকি সব কিছুই প্রতিকূলে থাকে।

দেখা যায় দিনের বা ম্যাচের সেরা ডেলিভারিটি তার বিপক্ষেই হয়। খারাপ সময়ে থাকা ব্যাটসম্যানের একটি ভালো শটও ফিল্ডারের অসামান্য দক্ষতায় দিনের সেরা ক্যাচে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এমনকি আম্পায়ারের ভুলের সিদ্ধান্তও নাকি অনেক সময় সেই ব্যাড প্যাচে থাকা ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে চলে যায়।

সৌম্য সরকারের অবস্থা হয়েছে সেরকম। বোঝাই যাচ্ছে, তার শনির দশা চলছে। ব্যাট কথা বলছে না। রান নেই। দিনের সেরা ডেলিভারিটি তার বিরুদ্ধে হচ্ছে। আবার ফিল্ডিংয়ের সময় বলের ফ্লাইট মিসের মত ছোট-খাট ভুলও তার কাছ থেকেই হচ্ছে।

নিষ্ঠুর হলেও কঠিন সত্য এই যে, সাধারণ দর্শক, ভক্ত-সমর্থকরা কিন্তু এত কিছু খুঁটিয়ে দেখবেন না। দেখার কথাও না। তারা দেখছেন সৌম্য সরকার চরম ব্যর্থ। ব্যাটে রান নেই। আবার ফিল্ডিং করতে গিয়ে বল আকাশে থাকা অবস্থায় পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বুঝতে পারে না।

কাজেই আজকের ম্যাচের পর সৌম্য সরকারই ‘খলনায়ক’ বনে গেছেন। তার আউট হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় সৌম্য বিরোধী সমালোচনামূলক কথা-বার্তা আর ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপে ভরা। কম-বেশি সবার মুখেই সৌম্যর সমালোচনা।

কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, সৌম্য আজকের ম্যাচের প্রায় ২২৫টি ডেলিভারির মধ্যে সেরা বলে আউট হয়েছেন, তার ভাগ্যেই পড়েছে ফার্গুসনের এক এক্সপ্রেস ডেলিভারি। ঘন্টায় ১৪৭/১৪৮ কিলোমিটার গতির বল ঠিক ড্রাইভিং জোনের সামান্য নিচে পিচ পড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত গতিতে একটু বেশি বাউন্স নিয়ে চলে গেল সৌম্যকে পরাস্ত করে। সেটাই শেষ নয়। বাড়তি সুইংয়ে সৌম্যর ব্যাট ও গ্লাভসের জায়গাটুকু চুমু খেয়ে গেল সেটা।

হতভম্ব সৌম্য শুধু চেয়ে চেয়ে নিজের করুণ পরিনতিটা দেখলেন। ফার্গুসনের করা ওই বলটা যে দিনের সেরা ডেলিভারি ছিল, তা আর কেউ বিচারে আনতে নারাজ। কেউ সহানুভতির চোখে দেখছেনও না।

babuবরং প্রথম বলে আউট হবার পর কেন উইলিয়ামসনের ভাইটাল ক্যাচ ধরা বহুদুরে, বলের ফ্লাইট মিস করে রীতিমত জাতীয় খলনায়ক বনে গেছেন সৌম্য। অনেকেরই প্রশ্ন, আচ্ছা সৌম্যকে খেলানো কি এখন বাড়াবাড়ি কিংবা বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে না? তার প্রতি কী একটু বেশি দরদ দেখানো হচ্ছে না?

কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সমালোচকদের কথায় কর্ণপাত করতে নারাজ। এত কিছুর পরও সৌম্যকে এতটুকু খাটো করে দেখতে নারাজ। আজ ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সেও সৌম্যর পক্ষ নিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। শুধু পক্ষই নেননি। সৌম্যর মেধা-প্রজ্ঞা কেমন? তার কার্যকারিতাই বা কতটা, তিনি কি পারেন, জাতীয় দলে তার অবদানই বা কতটা? এসব তুলে ধরেন মাশরাফি।

প্রশ্ন ছিল, ‘আচ্ছা এখন কী সৌম্যকে খেলনো বিলাসিতা কিংবা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? মাশরাফির নির্লিপ্ত জবাব, ‘নাহ আমি তা মনে করি না। সৌম্যকে খেলানো কোনভাবেই বিলাসিতা নয়। হয়তো তার খারপ সময় যাচ্ছে; কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, সৌম্য অনেক বড় খেলোয়াড়। রিয়াল ম্যাচ উইনার। যেদিন সে নিজেকে খুঁজে পাবে, সেদিন আর কেউ তাকে আটকে রাখতে পারবে না। সেই হবে ম্যাচ জয়ের নায়ক।’

braverdrink

সৌম্যর খেলা বেশ কটি ইনিংসের উপমা তুলে মাশরাফি আরও বলেন, ‘সে হলো রিয়াল ম্যাচ উইনার। তার হাত ধরে কয়েকটি ম্যাচ জিতেছি আমরা। আমরার বিশ্বাস, সৌম্যর নিজেকে ফিরে পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। একটি ভাল ও লম্বা ইনিংসই পারে তার হারানো আত্মবিশ্বাসকে চাঙ্গা করতে।’

খারাপ সময়ের সৌম্যকে বারবার সুযোগ দেয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে মাশরাফির জবাব, ‘প্রথম কারণ হলো সৌম্যর প্রতি আমাদের আস্থা বেশি। কারণ আমরা সবাই তাকে চিনি, জানি। সে যে মেধাবি ব্যাটসম্যান এবং তার সামর্থ্য-শক্তিও যে যথেষ্ঠ সেটাও আমাদের জানা। কাজেই আমি সৌম্যকে খেলাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, সৌম্য যে দিন খেলবে সে দিন তার ব্যাট প্রতিপক্ষ বোলিংকে শাসন করবে। আর ওই ম্যাচে জিতব আমরা। আমার বিশ্বাস ও বদ্ধমূল ধারণা সৌম্য ফিরে আসবেই। হয়ত একটা ভাল ইনিংসই তাকে আবার পুরনো ও চেনা ফর্মে ফিরিয়ে নিতে পারে।’

সে না হয় নয় দিল; কিন্তু এখন সৌম্যর যে খারাপ ফর্ম, তার বিকল্প খোঁজা কী বুদ্ধিমানের কাজ নয়? এ প্রশ্নের জবাবে মাশরাফির বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে সে মানের বিকল্প পারফরমার নেই। বারবার আমদের পাইপ লাইনের ক্রিকেটার আছে- বলে চেঁচামেচি হয়; কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস, আমাদের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠিত পারফরমারের সে অর্থে কোনই বিকল্প নেই। দক্ষ ও মেধাবি বিকল্প নেই বলেই আমরা সৌম্যকে খেলিয়ে যাচ্ছি। সে রকম কাউকে পেলে নিশ্চয়ই পরখ করে দেখা হতো; কিন্তু আমাদেও তো সেই মানের কোন বিকল্পই নেই।’

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।