নির্বাচক কমিটির সদস্য আসলে কতজন?


প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

নিউজিল্যান্ডের হাতে আজ আমরা হোয়াইটওয়াশ হলাম। ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচের মধ্যে একটিতেও জিততে পারলাম না। তারপরও আমি বলবো, এটা ক্রিকেট খেলা, এমনটা হতেই পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা ভাবি, একটা দল সব সময়ই জেতে না। ক্রিকেট খেলায় এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। এখনও পুরোপুরি বিশ্বাস করি, আমাদের দল অনেক শক্তিশালী। খু্বই ভালোমানের একটি দল। ভালো করার ক্ষমতা এবং ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তাদের আছে।

আমার কাছে যেটা ভয়ের ব্যাপার, সেটা হচ্ছে- এই জায়গাটা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ফরম্যাট- দুটো বড় বড় ফরম্যাট এখনও সামনে বাকি আছে। এখানে আমরা কীভাবে রিকভারি করি, সেটাও দেখার বিষয়। আমাদের কোচিং স্টাফরা সেখানে আছে, ম্যানেজমেন্ট আছে। তাদের বড় একটা দায়িত্ব হবে, এই দলটাকে চাঙ্গা করে তোলা। কারণ, এই দলটাই আমাদের শক্তি এবং এই দলটার মধ্যে যারা আছে সবাই অভিজ্ঞ। তারা কীভাবে ভালো খেলতে পারে এ বিষয়টা বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। কেননা আমরা জানি, এলিট ক্রিকেটারদের এই মুহূর্তে কোচিংয়ের কিছু নেই। তাদের মেন্টাল ম্যানেজমেন্টই বড় একটি ব্যাপার।

খেলার বিস্তারিত যদি বলি তাহলে বলবো- আমরা প্রথমে ব্যাট করলেও ভালো স্কোর গড়তে পারিনি। এজন্য সবাই হয়তো মিডল অর্ডারকে দোষারোপ করবে; কিন্তু আমি দোষারোপ করবো না। আমি দোষ দেব টপ অর্ডারদের। কারণ, এক-দুই-তিন যারা ব্যাটিং করেছে, সবাই ফিট ছিল। সবাই দারুণ সেট হওয়ার পর আউট হয়েছে।

তামিম যে ফিফটিটা করে আউট হয়েছে সেটা হওয়া উচিত ছিল একশ প্লাস। ইমরুল যে জায়গায় আউট হয়েছে, তার উচিত ছিল অন্ততপক্ষে ৭০-৮০ রানের একটা ইনিংস খেলা। সাব্বির যেভাবে সেট হয়ে আউট হয়েছে, সেটাও একটি বড় স্কোর হতে পারতো।

উপরে এরা ভালো সেট হওয়ার পরও বড় স্কোর গড়তে পারেনি বিধায় মিডল অর্ডার চাপটা সামলে উঠতে পারেনি। রান করতে পারেনি। মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক এবং সাকিব রান করতে পারেনি। তাদের ওপরও বড় একটা দায়িত্ব ছিল। তারপরও আমি দোষারোপ করবো টপ অর্ডারদেরকে।

আরেকটা জায়গায় আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, আমরা অত্যন্ত সন্দিহান ছিলাম সোহানকে নিয়ে। মুশফিকের জায়গাটা সে কতুটু রিকভার করতে পারবে, তা নিয়ে। কিন্তু আমাদের সবাইকে সে দেখিয়ে দিয়েছে যে, যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সে উঠে আসছে। একটা সময় হয়তো আসবে, সোহানকে আমরা শুধু উইকেরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে দেখতে পাবো। সঙ্গে মুশফিক থাকবে ফুলটাইম ব্যাটসম্যান হিসেবে। সোহানের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচটা দেখে ভালো লেগেছে।

যদিও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা বড় স্কোর গড়তে পারিনি। যে ধরনের উইকেটে আজ খেলেছি, সেটা দেশে আমরা যে ধরনের উইকেটে খেলি তার চেয়েও সহজ ছিল ব্যাটিং করার জন্য। এরপর যখন বোলিং শুরু করলাম, তখন মাশরাফিকে সেই মাশরাফির মত দেখতে পাইনি। বলে গতি ছিল না। বলের লাইন-লেন্থ কিছুই দেখতে পাইনি এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তাকে দেখে বেশ হতাশ হতাশ লাগছিল।

মোস্তাফিজের কথা বলবো, সেই অরিজিন্যাল মোস্তাফিজকে আমরা পাচ্ছি না। সেই গতি দিয়ে বল করতে পারছে না। যদিও প্রথম উইকেটটা সেই নিয়েছে এবং পরবর্তীতে ইমরুল নেইল ব্রুমের একটা সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছে। না হয়, মার্টিন গাপটিল রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে উঠে যাওয়ার পর যদি ইমরুল ক্যাচটা ধরতে পারতো, তাহলে নিশ্চিত ওই জায়গায় নিউজিল্যান্ডকে আরও চেপে ধরা যেতো।

braverdrink

নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা অত্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে, উইকেটে যেভাবে খেলা উচিৎ সেভাবেই খেলেছে। আমি আরেকটা কথা বলতে চাই এখানে, তাসকিন ভালো বল করছে; কিন্তু তার মানসিক ব্যাপরটা, যেমন- তার ধারাবাহিকতা, অর্থ্যাৎ ওভারের ৫ম বল, ৬ষ্ঠ বল, কিংবা টানা চতুর্থ ওভার, পঞ্চম ওভারে তাকে সংগ্রাম করতে দেখা গেছে। এ জায়গাগুলোতে তাকে আরও মনযোগী হওয়া উচিৎ।

আর সাকিবের কথা বলবো, সে আজ যে লেন্থে  বল করেছে, আমি মনে করি সে লেন্থ ছিল সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, সে হয়তো ভাবছিল যে উইকেটটা একটু ফাস্ট হবে। কিংবা উইকেট থেকে যতটুকু সাহায্য পাওয়ার কথা ছিল, সে লেন্থ অনুযায়ী বল করতে পারেনি। যার ফলশ্রুতিতে সাকিব কিন্তু আজ বেশ খরুচে বোলার ছিল।

আমরা যদিও ম্যাচটা ৮ উইকেটে হেরেছি, তবুও আমি বলতে চাই যে এর আগে যে সিরিজগুলো জিতেছিলাম, সে সিরিজগুলোর সময় বেশ কিছু দুর্বল এরিয়া ছিল বা ভুল কিছু প্রটোকল ছিল যেগুলো ওই সময় জয়ের কারণে আলোচনায় উঠে আসেনি। আমরা হয়তো ম্যাচ জিততে পেরেছি। যে কারণে আমাদের দুর্বল দিকগুলো ফুটে ওঠেনি। আজ হেরে গিয়েছিলাম বলে আজ সব বের হয়ে পড়েছে।

কয়েকটি বিষয় সামনে আনা প্রয়োজন। একটা হচ্ছে যে, দল নির্বাচন। আমাদের নির্বাচকরা কিন্তু একটা দল গঠন করে দিয়ে রেখেছেন। অথচ একাদশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা সব সময় দেখছি যে, কোচের একটা অগ্রবর্তী ভুমিকা। সেটা এর আগেও দেখেছি। তবে, আগে আমরা ম্যাচ জিতেছি বলে এসব প্রকাশ পায়নি বা কেউ তুলে ধরেনি।

তবে এটা একেবারেই ভুল। কোচের কাজ শুধু কোচিং করানো। সিলেক্টরদের কাজ সিলেক্ট করা। আর ম্যাচে যে ১১জন খেলবে, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে অধিনায়কের ওপর। অধিনায়ক যেটা ভালো মনে করবে, যে দল নিয়ে খেললে ভালো করতে পারবে সেটাই করা উচিৎ; কিন্তু এই সিরিজে অধিনায়ককে দেখা যাচ্ছে একেবারেই নিষ্ক্রিয়। এটা কিন্তু একটা দলের জন্য সুখকর খবর নয়।

কোচের প্রধান কাজ কিন্তু কোচিং করানো। এর আগেও আমি অনেকবার কথাটা বলেছি; কিন্তু কোচ যেভাবে দলের প্রধান হিসেবে কাজ করছে সেটা কোনোভাবেই সঠিক নয়। আমরা কয়েকমাস আগে দেখেছি যে, একটা বড় ধরনের বিরোধ হয়েছিল নির্বাচক দল গঠনের ক্ষেত্রে। মূল নির্বাচকদের বাইরে কোচ এবং ম্যানেজারকে নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটা যে কত বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, তার প্রমাণ আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।

যে ম্যানেজারকে আমরা সিলেক্টর হিসেবে বানিয়েছি, তিনি এখন এই সফরেই নেই। তাকে নির্বাচন করার সময় কথা হচ্ছিল যে, কোচ এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবেন। যেহেতু এই সফরে দলের সঙ্গে নেই তিনি, তাহলে কোচের সঙ্গে খেলোয়াড়দের সমন্বয় হচ্ছে কীভাবে? আবার একাদশ নির্বাচনে সব নির্বাচক বসে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটার কী হচ্ছে? ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির একজনকে ম্যানেজার করে পাঠানো হয়েছে। তাহলে পদাধিকারবলে তিনিই কী দল নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত?

এই যে একের পর এক ভুল প্রটোকলে আমরা এগোচ্ছি, তারই খেসারত আমরা একের পর এক দিয়ে যাচ্ছি। প্রথমটা হলো দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে। নির্বাচকদের কাজ দল নির্বাচন, এর আগেও বলেছি। অথচ এই জায়গায়টায় এখন কী হবে? যে ম্যানেজার সাহেবকে আমরা নির্বাচক বানিয়েছি, তিনি তো নেই এখন দলের সঙ্গে! তিনি তো বাংলাদেশে রয়ে গেছেন। তিনি কী বাংলাদেশে বসে দল নির্বাচন করবেন?

একটা দল যখন ভালো খেলে, তখন সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্বটা কিন্তু আমরা কোচকে দেই। আর যখন খারাপ খেলে, তখন সরাসরি  প্লেয়ারদেরকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাই। অথচ, এই খেলোয়াড়দের জন্যই আমরা কিন্তু আজ ৭ নম্বর দল হয়ে র্যাংকিংয়ে অবস্থান করছি। ইনশাআল্লাহ এই খেলোয়াড়রাই আমাদেরকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রকৃত যে ব্যাপারটা আছে, সেটা হলো প্রত্যেকে, যে যার জায়গায় নিজের কাজটা করে যাওয়া উচিৎ। আমি আবারও বলছি যে, কোচের কাজ শুধুমাত্র কোচিং করানো। কারণ, তার সঙ্গে সব ধরনের সাপোর্ট আছে। তিনি ব্যাটিং কোচ নিয়েছেন। ফিল্ডিং কোচ নিয়েছেন। বোলিং কোচ আছে। সব জায়গায় তার সাপোর্ট আছে। তারপরও আমার প্রশ্ন রইলো যে, কেন আমাদের ফিল্ডিংয়ের আজ এই অবস্থা। কেন, আমাদের ব্যাটিংয়ের এই অবস্থা? কেন, বোলিংয়ে ভালো করতে পারছে না বাংলাদেশ? প্রধান কোচ যেহেতু সবকিছু দেখাশোনা করেন, তার কাছেই রইলো।    

২০১৬ শেষ। ২০১৭ সালে পদার্পন করতে যাচ্ছি। ২০১৭ নতুন বছরের শুরুটা হবে আমাদের টি-টোয়েন্টি দিয়ে। ইনশাআল্লাহ, আমার বিশ্বাস টি-টোয়েন্টিতে ভালো ফল করে আমরা বছরটা ভালোভাবে শুরু করতে পারবো, এই আশা রইলো।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।