টি-টোয়েন্টি মানসিকতার কারণেই হেরেছে টাইগাররা


প্রকাশিত: ০১:২৩ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

এই ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কয়েকটা কারণে। এর আগেও বলেছিলাম যে, সিরিজে সমতায় আসার জন্য, টিকে থাকার জন্য এই ম্যাচে জয় প্রয়োজন; কিন্তু সেটা আমরা পারিনি। আপনি যদি পুরো ম্যাচটা দেখেন তাহলে দেখবেন- নিউজিল্যান্ড জেতেনি, আমরাই নিউজিল্যান্ডকে জিতিয়ে দিয়েছি। কিংবা এভাবে বলা যায়, নিউজিল্যান্ড জিতেনি, আমরাই হেরেছি।

যে মাঠে খেলা হয়েছে, ওই মাঠে এর আগে নিউজিল্যান্ড যে ম্যাচ খেলেছিল, তারা কিন্তু শ্রীলংকার সাথে ২৭৬ রান করেও হেরে গিয়েছিল। সেখানে আমাদের বোলিং-ফিল্ডিং এত ভালো হয়েছিল যে, নিশ্চিত ম্যাচটা আমরা জিতে যেতে পারতাম; কিন্তু ব্যাটিং অ্যাপলিকেশন্সে ভুল থাকার কারণেই হেরে গেছি। উইকেট-কন্ডিশন সব কিছুই আমাদের পক্ষে ছিল। তামিম আর ইমরুল যখন শুরু করলো, তখন দেখে একবারও মনে হয়নি যে ম্যাচটা আমরা হারবো।

প্রথম ইনিংসের দিকে তাকালে দেখবেন, মাশরাফি, তাসকিন, সাকিব- চমৎকার বল করেছে। তবে লেগ স্পিনারটাকে দলে নেয়াটা আমার কাছে বিলাষিতাই মনে হয়েছে। সেখানে যদি রুবেলকে নেয়া হতো, তাহলে হয়তো তাদের আরও আগে বেঁধে রাখা যেতো। কারণ আমাদের দলে সাপোর্ট স্পিনার মোসাদ্দেক রয়েছে। মাহমুদউল্লাহ রয়েছে। তাকে দিয়ে তো বলই করানো হয়নি। মোসাদ্দেককে দিয়ে মাত্র ২ ওভার বল করানো হয়েছে। তারপরও আমাদের ফাস্ট বোলিং যথেষ্ট ভালো হওয়ায় আমরা তাদের ২৫১ রানের বেঁধে রাখতে পেরেছিলাম।

সবকিছুই ভালো ছিল। ক্যাপ্টেন্সিও ছিল অসাধারণ। তাসকিন প্রতিটা স্পেলে ভালো বোলিং করেছে। মাশরাফি তো এক কথায় চমৎকার। তারপরও আমরা যখন ১০৭ রানে তাদের ৫ উইকেট ফেলে দিলাম, তখন যদি আরেকটু আক্রমণাত্মক হতাম, তাহলে হয়তো তাদের আরও কম রানে বেঁধে ফেলতে পারতাম।

এরপর আমাদের ব্যাটিং দেখে যেটা মনে হয়েছে যে, আমরা একেবারেই পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং করেছি। তামিম যেভাবে ব্যাট করছিল, যেভাবে উইকেট দিয়ে এসেছে, পরবর্তীতে সাব্বির যেভাবে উইকেট দিয়ে আসলো, এরপর যেভাবে একের পর এক আমরা নিজেদের দোষে আউট হওয়া শুরু করলাম, সেখানে নিউজিল্যান্ডের না জেতার কোনো কারণই ছিল না।

আমাদের ব্যাটিংটা ছিল অনেকটা টি-টোয়েন্টিকেন্দ্রিক। টি-টোয়েন্টিতে আমরা যে ধরনের ব্যাটিং করে থাকি, সে ধরনের ব্যাটিং করেছি এই ম্যাচে। সাব্বির, সাকিবের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, কত তাড়াতাড়ি সম্ভব ২৫২ রান তাড়া করে ফেলতে হবে। মাহমুদউল্লাহ এই মুহূর্তে ফর্মে নেই। তারপরও বলবো, তার দায়িত্ব নেয়া দরকার ছিল। এছাড়া কেউ কেউ ২০ থেকে ৩০ রানের মধ্যে সেট হয়ে আউট হয়ে গিয়েছে। আসলে টি-টোয়েন্টি মনোভাবের কারণেই আমরা এই ম্যাচটি হেরে গেলাম।

আমাদের পরিকল্পনার যে অভাব ছিল, তার অন্যতম মুখ্য কারণ হচ্ছে টি-টোয়েন্টি খেলে আমরা এই সিরিজে এসেছি। বিপিএলের পর হঠাৎ করেই ৫০ ওভারের ম্যাচে গিয়ে পড়লাম। এ কারণেই টি-টোয়েন্টি মানসিকতা থেকে বের হতে পারিনি। আমাদের প্র্যাকটিসের অভাব, প্ল্যানিংয়ের অভাব এবং ব্যাটিংয়ে যে গেম প্ল্যান থাকে সেটা একেবারে ছিল কি না জানি না। তবে থাকলে সেটা ফেল করেছে।

মোটকথা পরিকল্পনায় একটা বড় অভাব ছিল। আর একদিনের ক্রিকেট আমরা জানি যে সিঙ্গেলস এবং ডাবলসের খেলা। ৩০০ বলে টার্গেট থাকে সাধারণত ৩০০ রান। কিন্তু ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে যে আমরা কত তাড়াতাড়ি খেলাটা শেষ করতে পারবো।

যদিও আমরা সিরিজটা ইতোমধ্যে হেরে গেছি। তারপরও বলবো, আমাদের আরও বড় দুটো জায়গা আছে ভালো করার। টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ম্যাচ। আগামী ম্যাচটাতে আমাদেরকে তারই প্রস্তুতি নিতে হবে। ওই ম্যাচে ভুলগুলোকে শুধরে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ভুলগুলো শোধরাতে পারলে আমাদের টি-টোয়েন্টি এবং টেস্টের প্রস্তুতিটা ভালো হবে।

আমার কাছে যেটা মনে হয়, এক ম্যাচে তিনজনের যে অভিষেক হলো, এর মধ্যে সোহানের অভিষেকটা ছিল খুব স্বাভাবিক এবং সোহান ডেব্যুট্যান্ট হিসেবে যতটুকু করা দরকার তার মধ্যে যথেষ্ট সে ভালো করেছে। কিপিংয়ে তাকে আমরা ফুল মার্কস দিতে চাই। ব্যাটিংয়ে মুশফিকের জায়গায় আসলে দুটো ব্যাটসম্যান নেয়ার দরকার ছিল। তারপরও সোহান তার কাজটা পুরোপুরি করেছে।

শুভাশিসের কাছে যে পারফরম্যান্স আশা করা হচ্ছিল, সে পারফরম্যান্সই তার কাছ থেকে পেয়েছি আমরা। তানবিরের কথা যদি বলি তাহলে বলবো, তাকে দলে নেয়াটা ছিল বিলাষিতা। কেননা আমার কাছে মনেই হয়নি যে, একটা লেগ স্পিনারের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে আমার যদি রুবেলকে ট্রাই করতাম, তাহলে সেটাই হয়তো কাজ দিত আমাদেরকে।

টস জিতে ফিল্ডিং নেয়াটা ছিল দারুণ সিদ্ধান্ত। যদিও আমি সব সময়ই প্রথমে ব্যাট করার পক্ষপাতি। তবে যেহেতু আমরা ফিল্ডিং নিয়েছিলাম এবং তার সুফলটা আমরা পেয়েছিলাম। ২৫২ রান কিন্তু ওই উইকেটে খুব বড় লক্ষ্য ছিলও না। আমরা স্বাভাবিক ক্রিকেট খেললে হয়তো জিতে যেতে পারতাম। সবচেয়ে বড় সুযোগ আমরা হারিয়েছি।

প্রথমদিনও বলেছি, আজ আবারও বলছি এই ম্যাচেও নাসিরকে আমি মিস করেছি। কারণ নাসির এমন একজন ক্রিকেটার, যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে ইনিংসটা ধরে রাখতে পারে। দুর্ভাগ্য যে আমাদের হাতে নাসির নেই বা নাসির সিলেক্টেড হয়নি। আমার মনে হয় এটা একটা বড় ভুল ছিল। সেটা আবারও প্রমাণ হয়েছে। জাতীয় লিগে ডাবল সেঞ্চুরি করেও তার প্রমাণও দিয়েছে সে।

braverdrink

নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের দিকে তাকালে আপনি দেখবেন, তাদের একজন ব্যাটসম্যান (নেইল ব্রুম, ১০৯*) কিন্তু এই বিপর্যয়ের মধ্যেও ইনিংসটাকে লম্বা করে নিতে পেরেছেন। তার এই অপরাজিত সেঞ্চুরি ইনিংস থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার দারুণ সুযোগ ছিল যে, কিভাবে একটি ইনিংস তৈরি করতে হয়। কিভাবে একটা ইনিংসকে লম্বা করতে হয়। কিভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলে যেতে হয়, সেটা কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

নেইল ব্রুম যে খেলাটা খেলেছে, সেখানে আমাদের হাতে যদি আরেকটা পেসার থাকতো, রুবেলকে যদি খেলানো হতো, তাহলে হয়তো এতগুলো রান হতো না। ব্রুমকেও আরও আগে আটকানো যেতো। আমাদের হাতে ব্যাকআপ স্পিনার তো ছিলই, তবুও এ জায়গায় কেন অতিরিক্ত হিসেবে তানবিরকে খেলানো হলো?

আরেকটা কথা না বললেই নয়, আমাদের কোচ যিনি আছেন, তিনি কিন্তু খেলোয়াড়দের খেলা দেখেন না। তিনি খেলোয়াড় নির্বাচন করেন নেটে দেখে। কারণ তিনি খেলা দেখেন না। বাংলাদেশের যখন ঘরোয়া লিগ চলে তখন তিনি থাকেন না। বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএল, এনসিএল- যাই হোক তিনি কিন্তু দেশে থাকেন না। ছুটিতে চলে যান। তিনিই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী চাকরিজীবী, যিনি কি না সবচেয়ে বেশি ছুটি কাটান। মাসের পর মাস ছুটিতে থাকেন।

কোচ যে একজন লেগ স্পিনারকে খেলালেন সেই লেগ স্পিনারকে তিনি কী দেখে দলে নিলেন?  কারণ এই লেগ স্পিনার কোথাও পরীক্ষিত নয়। সে কী কোনো দলের হয়ে কিংবা কোনো লিগে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি? হঠাৎ করেই নেটে একটা খেলোয়াড়কে দেখে তিনি তাকে দলে নিয়ে নিলেন। আবার কেউ একজন বলকে লেগ ব্রেক করানো মানে এই নয় যে তাকে জাতীয় দলে নিয়ে নিতে হবে। এর আগেও দেখেছি, কেউ একজন লেগ স্পিন করতে পারলেই তাকে দলে নিয়ে নেন। এটা কিন্তু কোনোমতেই ঠিক নয়।

নির্বাচক কমিটির যে স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন এবং তাতে যে সুফল পাওয়ার কথা তা আমরা পাচ্ছি না শুধু এই একটা কারণেই। কোচই দল নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াটা যেন এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। এখানে দল নির্বাচনে অধিনায়ককে যতটা উচ্চকণ্ঠ হওয়া প্রয়োজন, সেটা দেখতে পাচ্ছি না। কোচের এখানে যতটুকু ভূমিকা থাকা উচিত, তারচেয়ে অনেক বেশি দেখতে পাচ্ছি। কোচের কাজ তো দল গঠন করা নয়। এটা নির্বাচকদের কাজ। তিনি শুধু পরামর্শ দিতে পারেন; কিন্তু আমরা দেখছি দলটা পুরো কোচের, নির্বাচকদের নয়।

আইএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।