মাশরাফিকে ভয় পাচ্ছে ভারত!
কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত সম্ভবত টাইগারদের মোকাবিলা করবে। তবে এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ধোনির দল প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে বেশ চিন্তিত বলে জানা গেছে। পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভারতীয় এক সাংবাদিকের লেখায় সেটাই ওঠেছে। এখানে তা তুলে ধরা হলো-
সকাল সাড়ে এগারোটার সময় নোভোটেল হোটেলের সামনে জনা পঞ্চাশ অতুৎসাহী সমর্থকের হর্ষধ্বনির মধ্যে টিম ইন্ডিয়ার বাস যখন অকল্যান্ড রওনা হল, তখনই হোটেলের সামনে আবিষ্কার করা গেল বাংলাদেশের মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামকে। একগাল হাসি, কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য অভিনন্দন জানাতেই বলছেন, মেলবোর্নে আপনাদের সঙ্গে দেখা হলে আমরাও কিন্তু কম যাব না!
শুক্রবার এই হ্যামিল্টনের সেডন পার্কেই বাংলাদেশ খেলবে নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টিম অ্যাডিলেড থেকে পৌঁছে গিয়েছে হ্যামিল্টনে। গ্রুপের এই শেষ ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে পারলে গ্রুপের সমীকরণ বদলাতে পারে। চার থেকে তিনে উঠে আসতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকেও যেখানে হোঁচট খেতে হয়েছে, টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে শেষ আটে উঠে আসা অন্যতম আয়োজক সেই ম্যাকালামের টিমকে হ্যামিল্টনে মাশরফি মোর্তাজার টিম পেড়ে ফেলবে, এই সম্ভাবনার পক্ষে বাজি ধরার লোক কম।
দুুপুরে মাশরফির টিমের প্র্যাক্টিস কভার করতে গিয়ে ক্যাপ্টেনকেই পেলাম না। তার বদলে ঠা ঠা রোদে দুই ভায়রা ভাই মামুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম, অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে জয়ের দুই নায়ক। সঙ্গে তামিম ইকবাল। ঘন্টা তিনেক প্র্যাক্টিস চলল দুই বোলিং কাচ হিথ স্ট্রিক ও রুয়ান কল্পাগের তত্ত্বাবধানে। অবশ্যই ছিলেন হেড কোচ শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকা হাতুরাসিঙ্গে, হোমওয়ার্কের জন্য যিনি খুব দ্রæত টিমে প্লেয়ারদের শ্রদ্ধা আদায় করে নিতে পেরেছেন। কল্পাগে আবার স্পিন বোলিং কোচ। বলছিলেন, টিমটার মধ্যে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে অপোনেন্ট যে-ই হোক না কেন, জিতে দেখানো সম্ভব। কোয়ার্টার ফাইনালে সামনে কে পড়বে, তা নিয়ে ভাবছি না। আমরা যে কোনও টিমের জন্য তৈরি।
টিম ম্যানেজার হিসেবে এসেছেন খালেদ মামুদ সুজন। ৯৯ বিশ্বকাপের অধিনায়ক জানাচ্ছেন, ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যাওয়ার পর টিম অনেকটাই নিশ্চিন্ত। কোনও চাপ ছাড়াই কোয়ার্টার ফাইনালে নামবে টিম। ধরে নিচ্ছি, মেলবোর্নে ভারতের বিরুদ্ধেই খেলতে হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অতীতে বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েছি আমরা। অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী লাগছে সেঞ্চুরিকারী মামুদুল্লাহকে। অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর, দেশবাসী খুশি হয়েছে, এত মানুষকে আনন্দ দিতে পেরেছি, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে?
গ্রুপ লিগে শেষ ম্যাচ নিউজিল্যান্ড। মুখে যে যাই বলুন, ওই ম্যাচ নয়, টিম এখন থেকেই ভারতকে নিয়ে ভাবছে। যে কারণে শুক্রবার কাফ মাসলকে বিশ্রাম দিয়ে বাইরে থাকতে পারেন মাশরফি। ভারতকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। মাশরফি না খেললে টিমকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব।
সত্যি কথা বলতে গেলে, বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপে চমকপ্রদ উত্থানের পিছনে বেশ কয়েকটা ফ্যাক্টর। প্রথমেই আসবে মাশরফি মোর্তাজার অধিনায়কত্ব। বোলার হিসেবে অনেক পরিণত এখন, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, গোটা টিমের মধ্যে আমরাও পারি বিশ্বাসটা তিনি এনে দিতে পেরেছেন৷ সাকিব আল হাসান বা মুশফিকুরের জামানায় যে কোনও কারণেই হোক, বড় টুর্নামেন্টে টাইগারদের এমন টগবগে আর তরতাজা লাগেনি৷ দুই, বিশ্বকাপের আগে দেশে দু`মাস এবং তার পরে ব্রিসবেনে দু`সপ্তাহের কন্ডিশনিং ক্যাম্প। যা ক্রিকেটারদের এখানকার উইকেট সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছে। তিন, পেস বোলিং আক্রমণ। মাশরফির অভিজ্ঞতার পাশাপাশি থাকছেন রুবেল আর প্রতিশ্রুতিমান তাসকিন। তিন জনেই কিন্তু ১৪০ প্লাস গতিতে টানা বলটা করতে পারেন। চার, শুধু সাকিব বা তামিম খেললে টিম জিতবে, এই মিথটাও এই বিশ্বকাপে ভেঙে দিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। সবার আগে আসবে সৌম্য সরকারের নাম। তিন নম্বরে নামা সৌম্য ডাকাবুকো ব্যাটিংটা করছেন। স্কোর ৮-২ হয়ে গেলেও চালাচ্ছেন। সঙ্গে থাকছেন মামুদুল্লাহ আর মুশফিকুর। বিশ্বকাপের পাঁচটা ম্যাচে চারটেতে হাফ সেঞ্চুরি আছে মুশফিকুরের। পাঁচ, নতুন কোচ হাতুরাসিঙ্গে যথেষ্ট খাটছেন টিমের জন্য, বিপক্ষ নিয়ে হোমওয়ার্ক আর ইনপুট তৈরিতে খুবই কার্যকরী।
গাভাস্কারের মতো ব্যক্তিত্ব কিন্তু আগে থেকেই এমসিজির কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে ভারতকে সতর্ক করছেন৷ প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে ইংল্যান্ডের চেয়ে কঠিন হবে বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপে ওদের টিমটাকে একেবারে অন্যরকম লাগছে। বিশেষ করে পেস আক্রমণ নজর কাড়ার মতো। যে টিম ওদের হাল্কা ভাবে নেবে, তাদের ভুগতে হবে।
এএইচ/আরআই