হারেই শুরু মাশরাফিদের
একমাত্র প্রস্ততি ম্যাচে হেরেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপর ওয়ানডে সিরিজের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল টাইগারদের। সেটা আর হলো না। বাংলাদেশের বোলিং ব্যর্থতার দিনে বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। পরে ব্যাটিংটাও ভালো হয়নি বাংলাদেশের! সব মিলে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানের হেরে গেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলতে গিয়ে অতীতেও ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলো! না, লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিলেন টাইগাররা। বিশাল লক্ষ্য দেখে ব্যাটিংয়ে তাড়াহুড়া করাটাই কাল হয়েছে তাদের? নইলে ৪৪ ওভারে কেনই বা অলআউট হবে বাংলাদেশ? উইকেটে থিতু হয়ে পারলে ফল অন্যরকম হতে পারতো!
কিন্তু এই মাঠে যে পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা, এই লক্ষ্য (৩৪২ রান) তাড়া করে জেতা অসম্ভব। কারণ ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে ৩০০ রান তাড়া করে জিততে পারেনি কোনো দলই। জিতলে হলে বাংলাদেশকে তাই রেকর্ড করেই জিততে হতো। টাইগাররা সেটা পারলেন না।
৩৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৪.৫ ওভারে ২৬৪ রান তুলতেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। এর আগে নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভার খেলে ৭ উইকেটে তুলেছিল ৩৪১ রান।
পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায় দলীয় ৩৪ রানের মাথায়। টিম সাউদির বলে লুক রনকির হাতে ক্যাচ দিয়ে সবার আগে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল কায়েস। বাংলাদেশের এই ওপেনার বিদায়ের আগে ২১ বলে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ১৬ রান করেন।
দলীয় ৪৮ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে টাইগারদের। দলকে হতাশ করেন সৌম্য। মাত্র ১ রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। নিশামের বলে কেন উইলিয়ামসনের তালুবন্দি হন সৌম্য। ব্যাট হাতে আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন ২৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এদিন নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। রানের খাতা খোলা আগেই ওই নিশামের কাছেই ধরাশায়ী হন মাহমুদউল্লাহ। তবে আশা দেখাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। তিনিও থামলেন ৩৮ রানে। এবারও নিউজিল্যান্ডের পক্ষে উইকেট শিকারী সেই নিশাম। ৫৯ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ইনিংসটি সাজান তামিম।
ব্যাট হাতে ভালোই এগোচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। তুলে নিয়েছিলেন ফিফটিও। কিন্তু খুব বেশি দূর যেতে পারলেন না। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩২তম ফিফটি করেই সাজঘরে ফিরলেন সাকিব। ৫৪ বলে ৫টি চার ও দুটি ছক্কায় ৫৯ রান করেছেন বাংলাদেশের সেরা এই অলরাউন্ডার। তাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান লকি ফার্গুসন। আর তালুবন্দি হয়েছেন টিম সাউদির।
দলীয় ৪৮ রানে তিন উইকেট হারিয়ে যখন বিপদের মুখে বাংলাদেশ। তখন মাঠে নামেন সাকিব। তামিমের সঙ্গে ৩৩ রানের জুটি গড়েন তিনি। তবে তামিম ব্যক্তিগত ৩৮ রানে ফিরে গেলে, মুশফিককে নিয়ে খেলার হাল ধরেন তিনি। আর মুশফিকের সঙ্গে ৬৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সাকিব।
ব্যাট হাতে ভালোই করছিলেন মুশফিকুর রহীম। ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন। কিন্তু দলীয় ৩৯তম ওভারের চতুর্থ বলে রান নেয়ার জন্য দৌড়াতে গিয়ে চোট পেয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন মুশফিক। ফিজিওর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিয়ে পরে খেলতে চেয়েছিলেন। ব্যাট নিয়ে ক্রিজেও দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু খুব একটা স্বস্তিবোধ না করায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক।
মুশফিক সেচ্ছায় অবসরে গেলে ক্রিজে আসেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। টাইগারদের সীমিত ওভারের অধিনায়ক জুটি বাঁধেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে। ১০ বলে তিনটি চারে ১৪ রান করেন মাশরাফি। মিচেল স্যান্টনারের শিকার তিনি।
শেষ দিকে ব্যাট হাতে ফিফটি তুলে নিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। এটি ওয়ানডেতে মোসাদ্দেকের প্রথম ফিফটি।
অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটিই তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪৫* রানের ইনিংস খেলেছিলেন মোসাদ্দেক। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৪ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে খেলেছেন ৫০* রানের ইনিংস।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নেন লকি ফার্গুসন ও জেমস নিশাম। ২টি উইকেট নেন টিম সাউদি। একটি উইকেট লাভ করেন মিচেল স্যান্টনার।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই করেন দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও টম লাথাম। প্রথম পাঁচ ওভারে ৩১ রান সংগ্রহ করে তারা। তবে ষষ্ঠ ওভারে গাপটিলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে আনেন মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজের স্লোয়ার বল টাইমিংয়ে হের ফের করে আকাশে উঠিয়ে দেন গাপটিল। আর মিড অফে দাঁড়িয়ে থাকা সৌম্য সরকার সে ক্যাচ সহজেই লুফে নেন।
এরপর ১৫তম বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় আঘাত হানেন তাসকিন। ওভারের দ্বিতীয় বলটিতে একটু বেশি বাউন্স পেয়েছিলেন তিনি। আর তাতেই কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীমের হাতে ধরা পড়েন উইলিয়ামসন। তবে আউট হবার আগে ৩৬ বলে ৩১ রান করেন অধিনায়ক।
এরপর দৃশ্যপটে আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। স্বাগতিক শিবিরে জোড়া আঘাত হেনে চাপে ফেলে দেন তাদের। নেইল ব্রুমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলার পর জেমস নিশামকে একই ফাঁদে ফেলেন তিনি।
সাকিবের ২৫তম তৃতীয় বলে ফ্লিক করতে গিয়ে পরাস্ত হন ব্রুম। কুইকার বল ঠিক মত বুঝতে না পারায় সাজঘরমুখী হতে হয় তাকে। তবে আরও আগেই ফিরে যেতে পারতেন তিনি। সাকিবের আগের ওভারেই ব্রুমের সহজ ক্যাচ ছেড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর ২৯তম ওভারের চতুর্থ বলে প্রায় একই ঢঙ্গে পরাস্ত হন নিশাম। বল লেগ স্ট্যাম্পে থাকলেও ফুলার লেন্থে থাকায় আউট হন তিনি।
তবে পঞ্চম উইকেটে কলিন মুনরোকে নিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। এ দুই ব্যাটসম্যানের ১৫৮ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পায় স্বাগতিকরা। মাত্র ৬১ বলে ৮৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন মুনরো। ৮টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি।
তবে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন টম লাথাম। এক প্রান্তে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দারুণ এক সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ১২১ বলে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলেন এ কিউই ওপেনার। ৭টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি। তার সেঞ্চুরিতে ভর করেই ৩৪১ রানের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের পক্ষে ৬৯ রানে ৩টি উইকেট নিয়ে সেরা বোলার সাকিব। এছাড়া মোস্তাফিজ ও তাসকিন ২টি করে উইকেট লাভ শিকার করেন।
এনইউ/জেআইএম