ইউরোপে ক্ল্যাসিকো জ্বর


প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৬

বিশ্বকাপছাড়া আর কোনো ফুটবল ম্যাচই সম্ভবত এতটা আবেদন তৈরি করতে পারে না। ক্লাব পর্যায়ের একটি ম্যাচ যতটা তৈরি করতে পারে। দুই স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার মুখোমুখি লড়াইয়ের যে ঐতিহ্য আর ইতিহাস, তা ফুটবলের ইতিহাসে আর কোথাও নেই।

এই দুই ক্লাবের লড়াইটিই ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে এল ক্ল্যাসিকো নামে। নিয়মানুযায়ী প্রতি মৌসুমে অন্তত দু’বার মুখোমুখি হয় রিয়াল-বার্সা। স্প্যানিশ প্রিমেরা লিগায় (লা লিগায়) হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে দু’বার মুখোমুখি হবেই।

এছাড়া আরও মুখোমুখি সওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোপা ডেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ- ইত্যাদি টুর্নামেন্টে। কখনও কখনও বছরে ৫ থেকে ৬টি এল ক্ল্যাসিকোও অনুষ্ঠিত হয়। ক্ল্যাসিকো যত বাড়ে, ফুটবল ভক্তদের উৎসবও যেন তত বেড়ে যায়। কারণ, সজচেয়ে জনপ্রিয়, সবচেয়ে জমজমাট ফুটবল ম্যাচ এর চেয়ে সম্ভবত আর বেশি হয় না।

সময়ের ধারাবাহিকতায় আবারও এল ক্ল্যাসিকো। মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকোয় মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা। এবারের ক্ল্যাসিকোর প্রেক্ষাপটটা কেন যেন একটু ভিন্ন। বার্সেলোনা এবার রয়েছে একটু বেকায়দায়। একদিকে মেসির ইনজুরি, অন্যদিকে বেশ কয়েকটি ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে বার্সেলোনা এখন রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। তবে পয়েন্টের ব্যবধান ৬।

সর্বশেষ রিয়াল সোসিয়েদাদ এবং কোপা ডেল রে’তে হারকিউলেসের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ব্যাকফুটে চলে যায় বার্সা। যে কারণে, এল ক্ল্যাসিকোর আগে উত্তাপটা ঠিক টের পাওয়া যাচ্ছে না। কিংবা হিসাব-নিকাশ সবই বেশি রিয়াল মাদ্রিদের দিকে।

তবুও এল ক্ল্যাসিকো বলে কথা। রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার মধ্যে ধুন্দুমার লড়াইয়ে সারা বিশ্ব বুঁদ হবে না, তা কী করে হয়! সুতরাং, বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের এল ক্ল্যাসিকো জ্বরে ইতিমধ্যে ভুগতে শুরু করে দিয়েছে পুরো ইউরোপ, পুরো ফুটবল দুনিয়া। আগামী শনিবারই মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকো। বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৯টায় ন্যু ক্যাম্পে মহারনে মুখোমুখি হচ্ছে দুই স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা।

এল ক্ল্যাসিকো মাঠে গড়ানের আগে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা হিসেব নিকেশ। একে তো দু’দলে ইনজুরি, তারওপর কে কেমন করবে সে হিসেবও শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। স্প্যানিশ মিডিয়ার খবর, রিয়ালের দুই পুরনো বিখ্যাত মুখ অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া এবং মেসুত ওজিল আবার ফিরতে চান রিয়ালে। খেলতে চান জিনেদিন জিদানের কোচিংয়ে।

ওজিল আর্সেনালে দাপট দেখাচ্ছেন। ডি মারিয়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ঘুরে প্যারিসের পিএসজিতে। কেউই নিজেদের দল নিয়ে খুব একটা খুশি নন। রিয়ালে বিখ্যাত তারকাদের ভিড়। তবু তারা সেখানেই ফিরতে চান। এল ক্ল্যাসিকোর আগে অবশ্য ইনজুরি জর্জরিত রিয়াল শিবির। গ্যারেথ বেল, টনি ক্রুসরা ইনজুরিতে।

classico রিয়ালে যেমন জল্পনা চলছে ওই দুই ফুটবলারকে নিয়ে, বার্সেলোনায় হঠাৎ আলোচনায় নেইমার। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের খবর, বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী পল পগবার দ্বিগুণ দামে নেইমারকে নিতে চায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। গত জুলাইয়ে নেইমার জুলাইয়েই নতুন চুক্তিতে সই করেছেন বার্সায়। কিন্তু তাতেও নাকি ম্যানইউ কর্তারা চেষ্টা করছেন; কিন্তুনেইমারও চুক্তি ভাঙতে নারাজ।

জিদানের দল সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এই মুহূর্তে ইউরোপে তারাই সবচেয়ে ধারাবাহিক দল। অথচ তারাই কি না এখন পুরোপুরি চোটে জর্জরিত। জিদান যে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ওপর সবচেয়ে বেশি আস্থা রাখেন, সেই ব্রাজিলিয়ান কাসেমিরো চোটের জন্য দু’মাস খেলতে পারছেন না। তবে জিদান আশায়, তিনি খেলতে পারবেন।

এ মুহূর্তে জিদানের দুই স্টপার পেপে এবং ভারানে পুরো ফিট নন। ভারানে ফিট হয়ে উঠলে তিনি রামোসের সঙ্গে খেলতে পারেন ন্যু ক্যাম্পে। ফরোয়ার্ড লাইনে আলভারো মোরাতা ফিট নন। গ্যারেথ বেলের লন্ডনে অস্ত্রোপচার হয়েছে একদিন আগে। ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অস্ত্রোপচার সফল। টনি ক্রুসও চোটের জন্য নেই।

এল ক্লাসিকোর আগে কোপা ডেল রের ম্যাচে কালচারালের বিরুদ্ধে জিদান বিশ্রাম দিয়েছিলেন ছয় জনকে। নাভাস, রামোস, মার্সেলো, মডরিচ, বেঞ্জেমা এবং রোনালদো। এদের ন্যু ক্যাম্পে প্রথম দলে টিকে থাকা প্রায় নিশ্চিত।

শনিবার এল ক্লাসিকোয় অপেক্ষা করছে রিয়াল মাদ্রিদ। তার আগে একের পর এক ধাক্কা খেয়ে চলেছে বার্সা। মালাগার মতো দুর্বল দলের বিরুদ্ধে নিজ ভুমিতে ড্র। রিয়াল সোসিয়েদাদের মাঠ থেকে লজ্জা বাঁচিয়ে ফেরা। ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে হার। কাটাছেঁড়া করতে বসে অধিকাংশের মত ছিল মেসির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা পতন ডেকে আনছে।

অনেকের মতে, এনরিকের ট্যাকটিক্সের সঙ্গে নাকি বার্সা মানাতে পারছে না; কিন্তু বুঝতে হবে, অদৃশ্য মাঝমাঠ নিয়ে যুদ্ধজয় করা সম্ভব নয়। বার্সায় আলোচনার কেন্দ্রে আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। দীর্ঘ দিনের চোট সারিয়ে তিনি এখন ফিট। কোপা ডেল রের ম্যাচে এনরিকে তাকে খেলাবেন কি না সন্দেহ। তবে এল ক্লাসিকোতে খেলার রাস্তা খুলে রেখেছেন।

কোপার ম্যাচে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে এনরিকে মজা করে বলেন, ‘আগের ম্যাচে পয়েন্ট হারালেও বলব, আমার এ বারের দল গত তিন বছরের মধ্যে সেরা; কিন্তু আমি এখনও সেই বৃদ্ধ বোকা রয়ে গিয়েছি।’ অবশ্যই এই ‘বৃদ্ধ বোকা’ খেলাতে চেষ্টা করবেন ইনিয়েস্তা এবং জর্দি আলবাকে।

জাগো চ্যাম্পিয়নের ১৭তম সংখ্যা পুরো পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে…

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।