সাতক্ষীরায় জমজমাট ক্রিকেট বাণিজ্য


প্রকাশিত: ০১:৪৫ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৬

সাতক্ষীরায় এখন সর্বত্রই ক্রিকেট মেলা। জেলা সদর থেকে শুরু করে উপজেলা আর গ্রামঞ্চলের মাঠ সব জায়গাতেই ক্রিকেট খেলা নিয়ে ব্যস্ত যুবকরা। পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। সুযোগ পেলে বাড়ির আঙ্গিনায় তারাও ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে শিশু-কিশোরদের সাথে। সাতক্ষীরার মাটি থেকেই আজ তারকা ক্রিকেটার হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার। রয়েছেন রবিউল ইসলাম শিবলু, এনামুল ইসলামও।

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোস্তাফিজ আর সৌম্য সরকারের ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড আর পোস্টার ব্যবহার করে সাতক্ষীরায় জমজমাট হয়ে উঠেছে ক্রিকেট বাণিজ্য। নামিদামি ক্রিকেটার হওয়ার আশায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন এসব ক্রিকেট একাডেমিসতে। সাতক্ষীরা শহরের পৌরসভার মধ্যে রয়েছে চারটি ক্রিকেট একাডেমি। এসব ক্রিকেট একাডেমিতে রয়েছে হাজারো প্রশিক্ষণার্থী। এদের কাছ থেকে প্রতিমাসে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

মোস্তাফিজের সেঝো ভাই মোখলেছুর রহমান পল্টু জাগো নিউজকে বলেন, ‘মোস্তাফিজ সাতক্ষীরার কোন ক্লাবের সদস্য ছিলো না বা কোন ক্লাবের হয়ে খেলতো না। অধিকাংশ সময় নিজের এলাকার মাঠে খেলেছে। তবে সাতক্ষীরার সুন্দরবন ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক আলতাফ হোসেনের কাছে এক থেকে দুই মাস অনুশীলন করেছে শুধু। আমতলার গণমুখী ক্লাবের হয়ে একটি সেকেন্ড ডিভিশান ম্যাচ খেলার পর আর খেলেনি। এরপর সাতক্ষীরা জেলা দলের হয়ে অনুর্ধ্ব-১৬ দল ও অনুর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে খেলেছে। এরপর খুলনায় পল্টু নামের এক ভাইয়ের কাছে বেশ কিছুদিন ক্রিকেট অনুশীলন করেন।’

ঢাকা থেকে বাড়িতে গেলে কোথায় ক্রিকেট খেলতেন সেটাও জানান পল্টু, ‘মোস্তাফিজের এরপরের ইতিহাস তো সবারই জানা। অনুর্ধ্ব-১৯ থেকে জাতীয় দলে। এখন পুরো ক্রিকেট বিশ্বেরই তারকা। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে ঢাকায় খেলার সময় মোস্তাফিজ যখন বাড়িতে আসতো তখন সাতক্ষীরা ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক মোফাচ্ছেল ইসলাম তপুর সাথে খেলাধুলার সময় পার করতেন।’

satkhira

মোস্তাফিজ এখন অনেক বড় তারকা। সাতক্ষীরার আরেক বড় তারকা সৌম্য সরকার। যদিও মোস্তাফিজের মত এত অজপাড়া গাঁ থেকে উঠে আসেননি তিনি। তবে মোস্তাফিজ এখন যেন সাতক্ষীরার ক্রিকেট একাডেমিগুলোর নিজস্ব সম্পত্তি! সবার প্রচারপত্রে এমনভাবে মোস্তাফিজকে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন তিনি নিজেই এই ক্লাব থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ এত বড় ক্রিকেটার হয়েছেন।

সুতরাং, মোস্তাফিজের ছবি ব্যবহার করলেই এই ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিতে আসবেন শত শত প্রশিক্ষণার্থী। পকেটে আসবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। অথচ, কোচিং সেন্টারগুলোর কোচদের অধিকাংশেরই কোচিং করানোর যোগ্যতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।  

শহরের আমতলা মোড় এলাকার সুন্দরবন ক্রিকেট একাডেমি। যেখানে ভর্তি হতে গেলে প্রথমেই ফরম পূরণের জন্য একশ টাকা, ভর্তি ফি একহাজার টাকা, মাসিক ফি চারশ টাকা, জার্সির জন্য দিতে হবে আরো তিনশ টাকা। ভর্তি হতে গেলেই দিতে হবে সর্বমোট ১৮শ টাকা।

তবে মোস্তাফিজের ছবি ব্যবহার করে লাখ টাকা হাতানোর বিষয়ে তার সেঝো ভাই মোখলেছুর রহমান পল্টু বলেন, ‘কেউ যদি এমন করে তবে সে ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি?’ শহরের কদমতলা এলাকার তোহা খান জানান, সাতক্ষীরায় গড়ে ওঠা ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে মোস্তাফিজের নাম ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সকলের সামনেই।

আমতলার সুন্দরবন ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, একাডেমিতে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তিকৃত ছাত্র রয়েছে তিনশ জন। তবে রেগুলার রয়েছে দেড়শ থেকে দুইশ জন। বর্তমানে পরীক্ষার কারণে কিছু ছাত্র অনুপস্থিত রয়েছে।

satkhira

অন্যদিকে, শহরের রাজারবাগান এলাকার সাতক্ষীরা ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক মোফাচ্ছেল ইসলাম তপু জানান, এখানে প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে চার শতাধিক। এদের দুইভাগে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ভর্তির জন্য ১৩শ টাকা আর মাসিক তিনশ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয় এসব প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে।

তবে একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী সোহান জানান, মাসে তিনশ, জার্সির জন্য দুইশ, টেনিস ব্যাট ও প্লাস্টিকের বল কিনতে হয়। এ ছাড়াও রয়েছে সাতক্ষীরা লাবসা এলাকায় সানরাইজ ক্রিকেট একাডেমি ও শহরের স্টেডিয়ামের পাশে রয়েছে ব্যাসিক ক্রিকেট একাডেমি। কলারোয়া, কালিগজ্ঞ ও শ্যামনগর উপজেলায় রয়েছে আরো কয়েকটি ক্রিকেট একাডেমি। এসব ক্রিকেট একাডেমিতে হাজারো প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু জাগো নিউজকে বলেন, এসব একাডেমি পরিচালনা করতে গেলে ক্রীড়া সংস্থার কোন অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। যার কারণে কারো নাম বা ছবি ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও আমাদের কিছুই করার নেই। তাছাড়া খেলাধূলার বিষয়ে কাউকে নিষেধ করাও যায় না। তবে এমনটা করা ঠিক নয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সুন্দরবন ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক আলতাফ হোসেন প্রতারণা করে একাডেমি পরিচালনা করছে। আসলে তিনি কোন কোচই না। কিংবা প্রশিক্ষণের জন্য তার কোন সার্টিফিকেটও নেই। অথচ বড় কোচ পরিচয় দিয়ে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা জরুরী।

জাগো চ্যাম্পিয়নের ১৭তম সংখ্যা পুরো পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে… www.jagonews24.com/magazine

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।