টেপ টেনিসে খেলতে খেলতেই পাকিস্তান জাতীয় দলে!


প্রকাশিত: ০৫:১১ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

পৃথিবীর কোনো দেশেই জাতীয় দলে খেলার কোনো নির্দিষ্ট পূর্বশর্ত বা মানদণ্ড নেই। তবে পাকিস্তান ছাড়া বেশিরভাগ টেস্ট খেলুড়ে দেশ কিছু মানদণ্ড অনুসরণ করে। হঠাৎ কারো জাতীয় দলে অভিষেক হয় কালেভদ্রে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এমনকি বাংলাদেশেও জাতীয় দলের হয়ে খেলার আগে কিছু পর্যায় থাকে। সেগুলো পার করেই শুধু জাতীয় দলের সার্টিফিকেট মেলে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জাতীয় দলে, বিশেষ করে টেস্টে জায়গা পাবার প্রথম মানদণ্ড হলো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বয়সভিত্তিক দল অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭ ও ১৯ ‘এ’ দলে ভালো খেললেও বিশেষ বিবেচনায় চলে আসেন কেউ কেউ। আবার একাডেমি বা ‘এ’ দলে খেলার আগে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানো ও টুপি পরার সুযোগ খুব কম হয়।

কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পাকিস্তান। যে দেশে জাতীয় দলে ঢোকার কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই। যখন তখন যে কেউ যেকোনো পর্যায়ে না খেলে হুট করে ঢুকে পড়েন মূল দলে। ওয়াকার ইউনুসের মতো বিশ্ব কাঁপানো ফাস্ট বোলার কোনো পর্যায় পার না করে হঠাৎই ঢুকে পড়েছিলেন জাতীয় দলে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, পাকিস্তান তথা বিশ্ব ক্রিকেটের সব সময়ের অন্যতম সেরা এ ফাস্ট বোলারের বোলিং মেধা নজরে পড়েছিল খোদ জাভেদ মিয়াঁদাদের। তিনিই পাকিস্তানের আরেক সফল অধিনায়ক ইমরান খানকে ওয়াকারকে দলে নেয়ার কথা বলেছিলেন। ইমরান খান ১৯৮৯ সালে ওয়াকারকে প্রথম জাতীয় দলের নেটে ডাকেন। তার আগে ওয়াকার যুবদল, ‘এ’ দল তো নয়ই, পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও খেলেননি। কোনো প্রতিযোগিতামূলক আসরেও অংশ নেননি।

সেই আনকোরা ওয়াকারই পরে বিশ্বসেরা বোলারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। ওয়াকারের মতো প্রতিভাবান নন। তবে আরো একজন পাকিস্তানি পেসার আছেন, যিনি কোনো পর্যায়ে না খেলেই সরাসরি পাকিস্তান জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন। শুনে অবাক হবেন, সেই পাকিস্তানি এখন খেলছেন বিপিএলে।

যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কী? তা চেনার ও জানার আগেই পাকিস্তানের জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছেন। এটুকু শোনার পর নিশ্চয়ই ভাবছেন ওই পাকিস্তানি হয়তো বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কিংবা পিসিবি অ্যাকাডেমির হয়ে কোনো কোচিং প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন!

বিস্ময়কর হলেও সত্য, সেই ক্রিকেটার ওইসব পর্যায়েও খেলেননি। কী করে খেলবেন? যে বয়সে ছেলেরা ক্রিকেট বলে খেলে খেলে নিজেকে বড় আসরের জন্য তৈরি করে, ওই পেসার তখনো ক্রিকেট বলই হাতে নেননি। জাতীয় দলে ঢোকার অল্প কিছুদিন আগে পর্যন্ত তিনি ‘টেপ টেনিসে’ পাড়ার ক্রিকেটে নিয়মিত খেলতেন।

বিস্ময়কর সত্য এই যে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত যিনি সকাল-বিকাল শুধু টেপ টেনিসে পাড়ার ক্রিকেটে অংশ নিতেন, সেই পাকিস্তানি এক বছরের মধ্যে সবুজ জার্সি গায়ে চেপে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলে ফেলেছেন। সেই ক্রিকেটারের নাম ‘ইমরান খান জুনিয়র।’ এবারের বিপিএলে খেলছেন চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে।

রোববার রাতে নিজ দলের ড্রেসিংরুমে বসে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে গিয়ে ওপরের এসব তথ্য নিজেই দিয়েছেন ইমরান খান জুনিয়র। জানিয়েছেন ২০১৪ সালেও তার হাতে ছিল টেপ টেনিস। সেখান থেকে এক বছরের মধ্যে করাচির এক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া। আর ওই আসরে নজরকাড়া পারফরমেন্স। তারপরই ডাক আসে মূল দলের ক্যাম্পে। সেখানে ভালো করেই ঢুকে পড়লেন পাকিস্তান জাতীয় দলে।

২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামেন।

তারপর গত বছর ২৬ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুবাইতে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নামেন। বছর খানেক জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও এখনো আশা আবার জাতীয় দলে ফিরবেন খাইবারের সোয়াতের এ ২৬ বছর বয়সী পেসার।

এআরবি/আইএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।