রংপুরের সাফল্যের নেপথ্যের কাহিনী শোনালেন জাভেদ


প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

পরিসংখ্যান খুব বড় কথা বলবে না। তবে তাকে খাটো করে দেখার কিছুই নেই। ৪০ টেস্ট আর ৫৯ ওয়ানডে খেলা জাভেদ ওমর বেলিম (কেউ তাকে গুল্লু বলেন, আবার কারো কারো মুখে তিনি গোল্লা) বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুব বড় তারকা না হলেও ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী ক্রিকেটারের প্রতিমূর্তি।

কিন্তু সেই জাভেদ যখন এবারের বিপিএলে প্রথমবার কোচ হলেন, তখন ফোরণ কাটা হলো। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হলো জাভেদ ওমর তো টি-টোয়েন্টি খেলেননি। এছাড়া তার ব্যাটিংশৈলিটাও ছিল রক্ষণাত্মক ও গাণিতিক। হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র শটের ওপর নির্ভর করে খেলতেন।

অফস্টাম্প ও তার আশপাশে খাটো লেন্থের এবং থ্রি কোয়ার্টার ডেলিভারি পেলেই তেড়েফুড়ে স্কয়ার কাট। একদম নাগালের মধ্যে ওভার পিচ ও হাফভলি ডেলিভারিকে অফ ও অন ড্রাইভ। লেগ মিডলে পিট পড়া বলে ফ্লিক ও পুলের মাঝামাঝি এক ধরনের অদ্ভুত শটে স্কোয়ার লেগের আশপাশ দিয়ে গলানোর চেষ্টা করতেন।

রক্ষণাত্মক মানসিকতা ও সীমিত স্ট্রোকের কারণে তার ব্যাটিংটা শ্লথ মনে হতো। টেস্ট (৩৮.১৪) এবং ওয়ানডের (৫১.৮৯) স্ট্রাইকরেটও অবশ্য সে সাক্ষীই দিচ্ছে। সেই শ্লথ ও প্রথাগত গাণিতিক ব্যাটিংশৈলির জাভেদ প্রথমবার কোচিংয়ে। তাও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের মতো আসর বিপিএলে, যেখানে চার-ছক্কানির্ভর ধুমধারাক্কা ক্রিকেটই শেষ কথা বলে ভাবা হয়। এমন এক আসরে কোচ হিসেবে সফল হতে পারবেন জাভেদ?

বিপিএল মাঠে গড়ানোর আগে তো বটেই, আসর শুরুর পরও এ নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু বল মাঠে গড়ানোর পর সে ধারণা ভুল প্রমাণ হতে লাগলো। ঢাকা ও চট্টগ্রাম পর্বের পর সে ধারণা রীতিমতো অমূলক মনে হচ্ছে। সেই জাভেদ ওমর বেলিমের দল রংপুর রাইডার্স এখন পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপর। কী করে তা সম্ভব হলো?

জাভেদ কি এমন শেখালেন যে তার দল রংপুর রাইডার্স এখন সবার ওপর (ছয় খেলায় পাঁচ ম্যাচ জিতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে)। না্ঈমুল ইসলাম বাহিনীর এ সাফল্যের পেছনের কাহিনীই বা কি- তা জানতে রাজ্যের কৌতূহল সবার। জাগো নিউজের সাথে আলাপে জাভেদ ওমর দিয়েছেন সে কৌতূহলী প্রশ্নের জবাব।
 
বুধবার বিকেলে রংপুর রাইডার্সের ভালো খেলা এবং সবাইকে পেছনে ফেলে এখন পর্যন্ত শীর্ষে থাকার গল্পই শুনিয়েছেন জাভেদ। তার কোচিং যে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, ক্রিকেটারদের আদৌ ভালো খেলার কৌশল শেখাতে পারবেন কিনা?
 
এমন কথাবার্তা তার কানেও এসেছে। সেটাকে দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত আখ্যা দিয়ে জাভেদ ওমর পাল্টা প্রশ্নের সুরে বলেন, ‘আচ্ছা, বলুন তো বিপিএল যে মানের টুর্নামেন্ট, সেখানে একজন কোচের ভূমিকা কী? তিনি কি এই লেভেলে হাতে-কলমে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং শেখাবেন?
 
আর হাতেগোনা ক’দিনের স্বল্প প্রস্তুতিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অল্প ক’দিনের ক্যাম্পে একজন কোচের আর কিই বা শেখানোর আছে? এ পর্যায়ে আসলে একজন কোচের মূল কাজ হলো দলকে এক সুঁতোয় গেঁথে ফেলা। ঐক্য, সম্প্রীতি, সংহতি তৈরি করা। দলকে উদ্বুদ্ধ করা। ক্রিকেটারদের ভালো খেলায় অনুপ্রেরণা জোগানো। তাদের আত্মবিশ্বাসটাকে আরো চাঙ্গার পাশাপাশি সামর্থ্যের ওপর আস্থা বাড়ানো। এর বাইরে সবার কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনা। আমি সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করেছি।’

এ ক্ষেত্রে তার দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার রেখেছে বড় ভূমিকা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৯৯৫ থেকে ২০০৭- এক যুগ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ওয়ানডে খেলেছেন। তার টেস্ট ক্যারিয়ারও একদম ছোট নয়; ছয় বছরের (২০০১-২০০৭)। এ প্রসঙ্গে জাভেদের কথা, ‘দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে অনেক কোচের অধীনে খেলেছি। প্রচুর অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করেছি। আমি সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টাই করেছি।’

জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ না খেললেও ক্রিকেটের এ সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে সাফল্যের ফর্মুলাটা ঠিকই জানা। আর সেটাই বাস্তবে প্রয়োগ করেছেন। ক্রিকেটারদের কি টিপস দিচ্ছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তাই মুখে এমন সংলাপ, ‘সব চেয়ে বড় কথা- ক্রিকেটারদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, টি-টোয়েন্টি মানেই ধুমধারাক্কা ক্রিকেট নয়। এখানে শুধু মার মার কাট কাট করে ব্যাট চালানোর দরকার নেই। ১২০ বল মানে খুবই সংক্ষিপ্ত সময় ও ফরম্যাটের খেলা সন্দেহ নেই। তাই বলে ১২০ বলের সব ক’টায় চার-ছক্কা হাঁকাতে হবে, এমন নয়। একটু হিসেব কষে খেললে আগে কিংবা পরে ১৬০-এর ঘরে পৌঁছানো সম্ভব।’

সেটা কীভাবে? আমি ছেলেদের বোঝানোর চেষ্টা করছি ১২০ বলের পুরো সময় বল পিছু সিঙ্গেলস ডাবলসে খেললেই তো   ১২০ থেকে ১৩০ /১৪০ রান করা যায়। তার সঙ্গে দুটি ওভার একটু চালিয়ে খেললেই তো রান ১৬০-এ গিয়ে দাঁড়াবে। সে কথাগুলোই বোঝানোর চেষ্টা করেছি। মোদ্দাকথা, আমি একটু ফাইন টিউন্ড করার চেষ্টা করছি। আর ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করার কাজটিও করছি।’

সেটা কীভাবে? আমি প্রতিটি ক্রিকেটারের সাথে আলাদা আলাদা কথা বলছি। আমি জানি সোহাগ গাজীর সাথে কিভাবে কথা বললে তার সেরাাটা বেরিয়ে আসবে। শহীদ আফ্রিদির সাথে আবার অন্যভাবে মেশার চেষ্টা করছি। সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ শাহজাদকে কিভাবে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখা যায়-খুব অল্প ক’দিনে তা জেনে বুঝে ফেলেছি।’

জাভেদ দেখিয়ে দিলেন, সফল কোচ হওয়ার জন্য খুব বড় তারকা আর মেধাবী হওয়ার দরকার নেই। আসল কথা হলো- দলকে উজ্জীবিত করা এবং ক্রিকেটারদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়া এবং সবার কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার ক্ষমতা। সে সামর্থ্যটা নিশ্চয়ই আছে। কী বলেন আপনারা?

এআরবি/এনইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।