বিপিএলের ময়দানে


প্রকাশিত: ০২:১৮ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

ব্যাট বলের যুদ্ধ না বলে যদি বলি ঢাল-তলোয়ার, আর বল্লম নিয়ে যুদ্ধে নেমেছে দুই দল- সেটাই বোধকরি ভালো। বিশ্বব্যাপী ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগগুলোয় মানসিকতা যেন এমনই। যদিও পার্থক্য আছে। টি-টোয়েন্টি মাঠের লড়াইয়ে থাকে স্পোর্টসম্যানশিপ মানসিকতা।

সে কারণেই এটা খেলা, সত্যিকার যুদ্ধ নয়। তবুও বিপিএলে প্রতিটি দলেরই যুদ্ধাংদেহী মনোভাব। প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়ার মানসিকতা। ফ্রাঞ্চাইজি কেনা থেকে শুরু দল গোছানো, দেশি-বিদেশি খেলোয়াড় কেনা, কোচিং স্টাফ নিয়োগ- কত ঝক্কি-জামেলা পোহাতে হয় বিপিএলের দলগুলোকে। দু’হাতে অর্থ উড়াতে হয়। সেগুলোই সুদে-আসলে মাঠ থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা থাকে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর।

তবুও দিন শেষে এটা ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টির মেজাজ, আবহ ফুটিয়ে না তুলতে পারলে তো সেটা কোনোভাবেই ফ্রাঞ্চাইজি লিগ হয় না! ক্রিকেটাররাও চেষ্টায় থাকেন মারমার-কাটকাট ব্যাটিং-বোলিং করে ফ্রাঞ্চাইজি মালিক থেকে শুরু করে দর্শকদের মাতিয়ে তুলতে। বিপিএলের চতুর্থ আসরেও ঠিক তাই।

মুশফিক, নাফীস, সাব্বির, সাকিব, মাশরাফি কিংবা তামিম ইকবাল থেকে শুরু করে বিদেশি ক্রিকেটাররা খুব সিরিয়াস। জমজমাট টুর্নামেন্ট উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। প্রথম থেকে এ কারণে ব্যাটসম্যান আর বোলারদের ধুন্দুমার লড়াই। যদিও শুরুতে ব্যাটসম্যানদের ওপর আধিপত্য ছিল বোলারদের। স্লো উইকেট আর লো স্কোরিংয়ের কারণে বিপিএলটাই যেন ম্যাড়ম্যাড়ে একটি টুর্নামেন্টে পরিণত হতে যাচ্ছিল।

অবশেষে বোধোদয় ঘটেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষের। তারা নজর দিয়েছে উইকেটটিকে স্পোর্টিং করে তোলার। যাতে অন্তত চার-ছক্কার টুর্নামেন্টে কিছু রান ওঠে। সুতরাং বিপিএল এখন হয়ে গেছে হাই স্কোরিংয়ের। ১৯০ প্লাস রান হচ্ছে অনায়াসে। রান তাড়া করতে নেমেও প্রতিপক্ষ দলগুলো অনায়াসে পার করতে পারছে বিগ স্কোরগুলো। মোট কথা, শুরু হতে না হতেই জমে উঠেছে বিপিএলের চতুর্থ আসর।

টি-টোয়েন্টির স্পিরিট নিয়ে চমৎকার কিছু ঘটনাও ঘটে চলেছে বিপিএলে। মাহমুদুল্লাহর দুই ম্যাচে শেষ ওভারের জাদু, ব্যাট হাতে মুশফিকের হাজার রান, বল হাতে সাকিবের অর্ধশতক, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে অন্তর্দ্বন্দ, সর্বনিম্ন রানে খুলনার অলআউট হওয়া- এমন অনেক কিছু। সেগুলো নিয়েই পাঠকদের জন্য এই আয়োজন- বিপিএলের ময়দানে।  

টি-টোয়েন্টির সাব্বির
টি-টোয়েন্টিটাই ঠিক তার নামের পাশে মানায় বেশি। টি-টোয়েন্টি দিয়ে অভিষেক। দারুণ আত্মবিশ্বাসী অথচ মারমার কাটকাট ব্যাটিংয়ের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত সাব্বির রহমান। জাতীয় দল হোক আর ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হোক, সাব্বির ব্যাট হাতে মাঠে নামা মানেই যতক্ষন ক্রিজে থাকবেন, ততক্ষণ রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে দেয়া। সাব্বির নিজেকে সেভাবেই প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে টেস্ট ক্যাপও উঠেছে তার মাথায়।

Sportsকিন্তু এমন বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের কি না নামের পাশে বড় কোন ইনিংস নেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাত্র তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ৮০। তিন অংকের কাছাকাছি পৌঁছেও ব্যর্থ। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ১০টি হাফ সেঞ্চুরি, কোন সেঞ্চুরি নেই। অবশেষে সেই আক্ষেপটা তিনি ঘোচালেন বিপিএলে এসে। অনবদ্য সেঞ্চুরি করলেন তিনি বরিশাল বুলসের বিপক্ষে। বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটিও খেলে ফেললেন তিনি। ১২২ রানের ইনিংস খেলে সাব্বির প্রমাণ দিলেন তিনি টি-টোয়েন্টির। নিজেই ওইদিন ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, আসলে আমি টি-টোয়েন্টিরই ক্রিকেটার।

শেষ ওভারের মাহমুদউল্লাহ
‘এমন ঘটনা জীবনে একবারই ঘটে’- রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে শেষ ওভারে ম্যাজিক দেখিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ; কিন্তু কে জানতো এমন ম্যাজিক তিনি হাতের মুঠোয় পুরে রেখেছেন এবং সেটা হর-হামেশাই দেখাতে পারেন!

প্রথম ম্যাজিকটি দেখিয়েছিলেন তিনি রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই। শেষ ওভারে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৭ রান। উইকেটে সেট হওয়া ব্যাটসম্যান; কিন্তু চূড়ান্ত ম্যাজিকটা দেখিয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওই ওভারে নিলেন ৩ উইকেট। দিলেন ২ রান। নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচটি খুলনা জিতে গেলো ৩ রানে। মাঝে এক ম্যাচ হেরে গেলো খুলনা।

পরের ম্যাচে মুখোমুখি চিটাগাং ভাইকিংসের। ওই ম্যাচটিও ছিল লো স্কোরিং। শেষ ওভারে চিটাগাংয়ের প্রয়োজন মাত্র ৬ রান। আবারও বোলিংয়ে মাহমুদউল্লাহ। উইকেটে সেট ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবি এবং চতুরঙ্গ ডি সিলভা। মাহমুদুল্লাহ এই ওভারে দিলেন মাত্র ১ রান। তুলে নিলেন তিন উইকেট। আবারও ম্যাজিক দেখিয়ে দিলেন তিনি। খুলনা জিতে গেলো ৪ রানে। এরপর সবার কাছেই, শেষ ওভারের নায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

কুমিল্লার ঘরে আগুন
গত আসরের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মাশরাফির জাদুকরী নেতৃত্বে শিরোপার মুকুট মাথায় পরে নেয় কুমিল্লারর দলটি। এবারও ফ্রাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল, মাশরাফি বুঝি আবারও কাপ এনে দেবেন। সেটা হয়তো তিনি পারবেন, কিন্তু মাশরাফি তো আর একা পারবেন না। তার সঙ্গী প্রয়োজন।

অথচ কুমিল্লার দলটির দিকে তাকালে ভক্তদের হতাশ হওয়াছাড়া কোন উপায় নেই। মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, এমন কোনো ক্রিকেটারকেই চোখে পড়ছে না। যে কারণে শুরু থেকে শুধু পরাজয় আর পরাজয়। এই বৃত্তই ভাঙতে পারছে না মাশরাফির কুমিল্লা। প্রথম দুটি ম্যাচ হারের পরই গুঞ্জন উঠেছিল ফ্রাঞ্চাইজির সঙ্গে মাশরাফির মনোমালিন্যের কথা।

তৃতীয় ম্যাচ হারের পর সেটা অনেকটা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ফ্রাঞ্চাইজির সঙ্গে রাগ করে হোটেলই ছেড়ে যান মাশরাফি। যদিও রাগ কমিয়ে তিনি পরে খেলতে রাজি হন; কিন্তু ঘরের আগুনে পুড়েছে মাঠের খেলাও। সুতরাং জয় অধরা কুমিল্লার কাছে।

মুশফিকের এক হাজার
বিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে এবারের আগে আর কোনোবার খুব বেশি নজর কাড়তে পারেননি মুশফিকুর রহীম। তবে এবারই তাকে দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল। আগের আসরগুলোতে তার নেতৃত্বাধীন দল ভালো করতে না পারলেও মুশফিক নিজে কিন্তু ব্যাট হাতে ছিলেন সবচেয়ে উজ্জ্বল পারফরমার। তার ব্যাটে প্রতিপক্ষের বোলিং কেঁপেছে সব সময়। আগের তিন আসরেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

এবারও ব্যাটকে যেন বানিয়েছেন তলোয়ার। এখনও পর্যন্ত ৪ ম্যাচে দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ১৭৪ রান। তবে, এরই মাঝে অন্যরকম এক মাইলফলকে পৌঁছে গেছেন মুশফিক। বিপিএলে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছে যান তিনি। চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে মাঠে নেমে অপরাজিত ১০ রান করে গৌরবের মাইলফলকে পৌঁছান তিনি।

sabbir

সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি
ব্যাট হাতে তো অনেক হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি করে ফেলেন সাকিব আল হাসান; কিন্তু বল হাতে! এবার বিপিএলে বল হাতে অন্যরকম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান। বিপিএলের চার আসর মিলিয়ে যত বোলার খেলেছেন, সবার আগে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ৫০টি উইকেটের মালিক হয়েছেন সাকিব আল হাসান।

রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ম্যাচে রনি তালুকদারকে সাঙ্গাকারাকে দিয়ে স্ট্যাম্পিং করিয়েই বিপিএলের প্রথম গর্বিত বোলার হিসেবে ৫০ উইকেট পূর্ণ করলেন তিনি। পরের ম্যাচে নিলেন ২ উইকেট। সাকিবের নামের পাশে লেখা হলো ৫২ উইকেট। তবে সাকিবের পর বিপিএলে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন ক্যারিবিয়ান কেভন কুপারও। তারও এখন উইকেট সংখ্যা ৫২টি। যদিও কেভন কুপার খেলেছেন মাত্র ৩১ ম্যাচ। আর সাকিব খেলছেন ৩৯ ম্যাচ।

নাফীসের ফেরা
শাহরিয়ার নাফীস। এক সময় মনে করা হতো বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জল প্রতিভা। দুর্দান্ত ওপেনার। টেস্ট এবং ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে অসাধারণ এক সূচনা এনে দিতে পারতেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গর্বিত সেঞ্চুরিয়ান। তার সেঞ্চুরিতে ফতুল্লায় জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ। সেই শাহরিয়ার নাফীস অবশেষে যেন হারিয়েই গিয়েছিলেন।

Barisal

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো দুরে থাক, গত ৫-৬ বছর ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি পুরোপুরি পাদপ্রদীপের বাইরে। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে আবারও সবার নজরে ফেরেন নাফীস। এরপর আফগানিস্তান এবং ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য ৩০ জনের প্রথমিক কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ডাকা হলো তাকে। সবাই ভেবেছিল, এবার বুঝি অন্তত টেস্ট দলে জায়গা করে নেবেন তিনি; কিন্তু ভাগ্যের সিকে ছিঁড়লো না।

উপেক্ষিতই থাকলেন; কিন্তু নাফীস যেন নাছোড়বান্দা। নিজেকে আরও প্রমাণ করতে হবে। সে লক্ষ্যে বেছে নিলেন বিপিএল। ঢাকা পর্বের প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতেই হাফ সেঞ্চুরি। চার ম্যাচে সংগ্রহ ১৮৪ রান। তার সাবলীল ব্যাটিং দেখে, সবাই বলাবলি করছে, সেই নাফীস কী আবারও ফিরে এলো!

সর্বনিম্ন স্কোর
এবারের বিপিএলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল যেমন শ্বাসরূদ্ধকর দুটি ম্যাচ জিতেছে, তেমনি একটি লজ্জায়ও ডুবেছে। বিপিএলের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৪৪ রানে অলআউট হয়েছে তারা রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। আজকাল পাড়ার ক্রিকেটেও এমন ভেঙে পরা ব্যাটিং দেখে অভ্যস্ত নন দর্শকরা।

মূলতঃ রংপুরের আরাফাত সানি আর পাকিস্তানি শহিদ আফ্রিদি র ঘূর্ণিতেই ভেঙে পড়ে খুলনার ব্যাটিং লাইন আপ। ওইদিন একটি বিরল রেকর্ডও গড়েন সানি। মাত্র ২.৪ ওভার (১৬টি) বল করে কোন রান না দিয়ে তিনি তুলে নেন ৩টি উইকেট। আর ১২ রানের বিনিময়ে ৪টি উইকেট পান আফ্রিদি। এর আগে ২০১৫ সালে বিপিএলের তৃতীয় আসরে সিলেট সুপার স্টারসের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিল বরিশাল বুলস।

মাশরাফির টর্নেডো
মনের আগুন ব্যাটে দ্বিগুন হয়ে জ্বললো মাশরাফির। নিজের ফ্রাঞ্চাইজি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিকপক্ষের সঙ্গে মনোমালিন্য। যার যের ধরে মাশরাফি ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে হোটেল ছেড়ে বাসায় চলে গিয়েছিলেন। বাতাসে ভেসে বেড়ানো গুঞ্জন হলো, মাশরাফির ক্রিকেট সেন্স নিয়েও নাকি কুমিল্লার মালিক পক্ষের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই মাশরাফির ক্রিকেট প্রেম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত মাশরাফি খেলতে নামলেন ঢাকার বিপক্ষে। মনের ক্ষোভ বল হাতে ঝাড়তে পারলেন না। দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় নিজের ভেতরটা জ্বলে উঠলো। ঢাকার ১৯৪ রানের বিশাল স্কোর তাড়া করা সম্ভব নয় জানেন; কিন্তু নিজের ক্ষোভ ঝাড়ার জন্য বুঝি ঢাকার বোলারদেরই বেছে নিলেন। সাকিব আল হাসানকে এক ওভারেই মেরে দিলেন ৪টি ছক্কা। সব মিলিয়ে ৩৫ বলে খেললেন ৪৭ রানের ইনিংস।

জাগো চ্যাম্পিয়নের ১৫তম সংখ্যা পুরোটা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে

আইএইচএস//পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।