গাইবান্ধায় বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ ছিল পরিকল্পিত কিলিং মিশন


প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

গাইবান্ধায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতের আঁধারে চলন্ত বাসে পেট্রলবোমা হামলা ছিল সুপরিকল্পিত কিলিং মিলন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমটাই বললেন গ্রেফতারকৃত শিবিরকর্মী রেজানুর রহমান রুপক ও তাসকিনুর ইসলাম স্বপন।

এ হামলায় দুই শিশুসহ মোট আটজন নিহত হয়েছেন এবং আরোও ৩২ যাত্রী আহত। তাদের মধ্যে কয়েকজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখনও চিকিৎসাধীন।

স্বীকারোক্তিতে আরো জানা গেছে, মিশনে ৫টি দল ছিল অভিযানের সময় নজরদাড়িতে এবং দু’টি দল ছিল কিলিং অ্যাকশনে। এই ৭টি দলকে সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিতো সাহাপাড়া ইউনিয়নের জামায়াত সভাপতি আব্দুর রহমান ও জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক একলাছুর রহমান।

পরিকল্পনা মাফিক অ্যাকশন টিমের লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পেট্রলবোমা তৈরিতে দক্ষ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিবির ক্যাডার মোস্তফা মঞ্জিল। যার অধীনে দুটি টিম বাসে পেট্রলবোমা হামলায় অংশ নেয় বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি সড়কে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সীচা পাঁচপীর এলাকা থেকে আসা নাপু পরিবহনের যাত্রীবাহি বাস তুলসীঘাটের বুড়িরঘর এলাকায় পৌঁছলে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা ওই বাসটিতে পেট্রলবোমা ছুঁড়ে মারে। এতে বাসটি আগুনে ভস্মিভূত হয় এবং ২ জন শিশুসহ ৮ জন নারী-পুরুষ আগুনে পুড়ে মারা যায়। আহত হয় আরও ৩২ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখনও চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ওই ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ৬০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে গাইবান্ধা সদর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে এ পর্যন্ত ১১ জন নামীয় এবং ৯ জন অজ্ঞাত পরিচয়সহ মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে অ্যাকশন দলে সক্রিয়ভাবে জড়িত আসামি স্বপন ও রুপক প্রথম শ্রেণি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হামলার সাথে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি প্রদান করে।

ওই দুই শিবির ক্যাডারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরো জানা গেছে, মোস্তফা মঞ্জিল ছিল একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বোমাবাজ। যে নিজে পেট্রলবোমা তৈরি এবং বহন করতো। অ্যাকশনে অংশ গ্রহণকারিদের মধ্যে মোস্তফা মঞ্জিল ছাড়াও বাঘা, ডিউক, কাবিনুর ও মোজাহিদ এবং স্বপন নামের ৬ জন বোমাবাজ ক্যাডারের নাম উল্লেখ করা হয়।

স্বীকারোক্তি প্রদানকারি তাসকিনুর ইসলাম স্বপনের সাহাপাড়া ইউনিয়নের শিবপুর বাজারে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকানে এসব পেট্রলবোমা তৈরি করা হতো।

অ্যাকশনের দায়িত্ব ছিল মোস্তফা মঞ্জিলের নেতৃত্বে দুটি দলের উপর। যারা বুড়িরঘর সংলগ্ন এলাকা থেকে ১শ গজ পূর্বদিকে রাস্তার দু’পাশে অবস্থান করছিল। যৌথ বাহিনী ও গাইবান্ধা থানা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ঘটনার দিন যখন যাত্রীবাহি বাস ও ট্রাক বুড়িরঘর অতিক্রম করছিল পর্যবেক্ষণ দলগুলো অ্যাকশন পার্টিকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেয়। সেই খবরের উপর ভিত্তি করেই যৌথ বাহিনীর প্রথম স্কট দলটি অতিক্রম করার পর দ্বিতীয় দলটি ওই স্থান অতিক্রম করার সময় নাপু এন্টারপ্রাইজের বাসটি কিছুটা পেছনে পড়ে যায়। এই সুযোগে মোস্তফা মঞ্জিল নিজে ওই যাত্রীবাহি বাসটিতে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে।

গ্রেফতারকৃত ওই দুই ক্যাডারের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মোস্তফা মঞ্জিলকে পুলিশ, র্যাব, যৌথ বাহিনী খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযান শেষে গাইবান্ধায় ফেরার সময় বুড়িরঘর এলাকায় র্যাবের গাড়িতে পেট্রলবোমা ছুঁড়ে মারার সময় বন্দুক যুদ্ধে মোস্তফা মঞ্জিল নিহত হয়।

এসময় ৮টি পেট্রলবোমা, ২টি পিস্তল, গুলির খোসা ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে যৌথবাহিনী।  

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।