এক আইরিশ ফুটবল-পাগলের গল্প


প্রকাশিত: ০৭:২৪ এএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

অনেক দেশ আছে যেখানে ফুটবলে লাথি দেননি এমন পুরুষ মানুষ কমই আছে। আর দেশটি যদি হয় ইউরোপের তাহলেতো কথাই নেই। আয়ারল্যান্ডের জন ব্রে তেমন এক মানুষ। ফুটবলে লাথি দেয়া পর্যন্তই। খেলা বলতে যা বুঝায় তা নেই তার জীবদ্দশায়। অথচ তিনি ফুটবলের পাগল। ফুটবল খেলা দেখতে ভ্রমণ করেছেন ১০০ টিরও বেশি দেশ। স্টেডিয়ামে বসে দেখেছেন চার চারটি বিশ্বকাপ। ইউরোপের বিভিন্ন টুর্ণামেন্টতো তার কাছে দুধভাত। ৫৮ বছর বয়সী এ আইরিশ এখন বাংলাদেশে। ফুটবলের টানেই ঢাকায় ছুটে আসা তার। ৭ নভেম্বর এসেছেন, ফিরে যাবেন আগামীকাল সোমবার।

বাংলাদেশে আসলেও তার এ সফর শুধু ঢাকাকেন্দ্রীক। যে কারণে দেশের শীর্ষ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের কোনো ম্যাচ দেখা হচ্ছে না তার। প্রিমিয়ার লিগ এখন চলছে ময়মনসিংহে। পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খেলা দেখতে শনিবার তিনি ছুটে গিয়েছিলেন কমলাপুর স্টেডিয়ামে।

football

কখনো রিক্সায়, কখনো মটর সাইকেলে অনিকের পেছনে-এভাবেই ঘুড়ছেন জন। তো অনিক কে? এমন প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক। পুরো নাম-রেজাউল হোসাইন অনিক। কাজ করেন এশিয়াটিকের ব্র্যান্ড কমিউনিকেশনের নির্বাহী হিসেবে। জন ব্রে‘র গল্পটা শোনা যাক তার কাছেই- ‘গত ব্রাজিল বিশ্বকাপে আমি একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক ছিলাম। আমার ডিউটি ছিল রিও‘র মারাকানা স্টেডিয়ামে। সেখানে আমার এক আমেরিকান বন্ধুর মাধ্যমে জনের সঙ্গে পরিচয়। ফুটবল খেলা দেখতে তার দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানোর গল্প শুনেছি। তিনি আমার কাছে শুনেছেন বাংলাদেশের ফুটবলের গল্প। তখনই তিনি বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। দেশে আসার পরও তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। অনেক দিন ধরেই তিনি বাংলাদেশে আসার কথা বলছিলেন। বিভিন্ন কারণে আমি তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছি। গুলশানের সন্ত্রাসি হামলায় বিদেশিদের প্রাণহানির ঘটনাও তিনি জানতেন। কিন্তু তিনি ওসব পাত্তা দেননি। বাংলাদেশে চলে এসেছেন’।

জন ব্রে ইতিমধ্যে জেনেছেন, বাংলাদেশের ফুটবল এক সময় রমরমা ছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৫০/৬০ হাজার দর্শক খেলা দেখেছে শুনে অবাক হয়েছেন তিনি। এ সব গল্পই আসলে জনকে টেনেছে বাংলাদেশে। যদিও তিনি যখন ঢাকায় তখন বাংলাদেশের ফুটবল শুধুই অতীতের কঙ্কাল।

‘অনিকের কাছে আমি বাংলাদেশের ফুটবলের গল্প শুনেছি। আমি যখন এশিয়া সফরের পরিকল্পনা করি তখনই সিদ্ধান্ত নেই বাংলাদেশে আসবো। চলে এলাম। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ব্রনাইয়ের পর বাংলাদেশে এসেছি।’ আপানি কতগুলো দেশে এভাবে ফুটবল খেলা দেখতে গিয়েছেন? ‘একশ`র বেশি হবে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এলাম বাংলাদেশে। আমি ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান-কোরিয়া ও ব্রাজিল বিশ্বকাপ দেখেছি স্টেডিয়ামে বসে।’

football

বাংলাদেশ কেমন লাগছে? কোনো ভয় কাজ করছে? ‘আসলে বাংলাদেশ বলতে ঢাকা। আমি অন্য কোথাও যাচ্ছি না। গুলশান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবন, মোহামেডান ক্লাব, কমলাপুর স্টেডিয়াম ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামসহ অনেক জায়গা ঘুরেছি। বন্ধু অনিকের বাসায়ও গিয়েছি। আমার কোনো সমস্যা হয়নি। কোনো ভয়ও পাইনি। এখানকার মানুষ অনেক আন্তরিক। সমস্যার মধ্যে যা দেখলাম তাহলো যানজট, মশা আর বিরিয়ানি। বিরিয়ানি খেয়ে আমার পেট খারাপ করেছিল, হা হা হা। ’

তো এই যে, আপনি দেশে দেশে ঘুরে বেড়ান। পরিবারের লোকজনকে সময় দেন কখন? ‘আমার ছেলে ফুটবল খেলা পছন্দই করে না। আর স্ত্রী? যখন ঘরে ফিরবো তখন আগাম বাই বাই দিয়ে রাখবে, আবার কখন কোন দেশের ফ্লাইট ধরি তাই। কিন্তু আমার এটা নেশা, আমি ফুটবল পাগল। যতদিন শরীর কাজ করবে আমি এটা করবো’-বলেন জন। শরীর না হয় কাজ করলো, কিন্তু এই যে আপনি দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছেন এ খরচের উৎস কি? কোনো স্পন্সর আছে? ‘না, কোনো স্পন্সর নেই। আমি নিজের অর্থে ঘুরি। আমি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকুরি করতাম। আমার অনেক সঞ্চয় আছে। সেখান থেকেই খরচ করি’- জবাব জন ব্রে নামের এ ফুটবল পাগলের।

আরআই/এমআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।