নতুন করে সত্য চেনালেন মাহমুদউল্লাহ


প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৬

তিনি পারেন। ব্যাট হাতে যে কোন পর্যায়ে, যে কোন ফরম্যাটে দল জেতানোর ক্ষমতা রাখেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ সত্য সবার জানা। পাশাপাশি বল হাতেও যে তার ম্যাচ ঘোরানোর সামর্থ্য আছে সেটা দেখালেন আবার। খেলার শেষ ওভারে সব দায় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বল করতে এসে তিনি যে দল জেতানোর ক্ষমতা রাখেন- এবারের বিপিএলে সে নতুন সত্যরই দেখা মিলেছে।

এই তো, মাত্র ৭২ ঘন্টা আগে  (গত ৯ নভেম্বর ) রাজশাহীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলায় শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহর স্পিন জাদুতে বশ মানতে বাধ্য হয় রাজশাহীর তিন ব্যাটসম্যান আবুল হাসান রাজু, মোহাম্মদ সামি এবং নাজমুল অপু।

ম্যাচের ৪০ নম্বর ওভারে রাজশাহীর দরকার ছিল ৭ রান। হাতে ছিল তিন উইকেট। মাহমুদউল্লাহ মাত্র তিন রান দিয়ে ওই তিনজনকে আউট করে নাটকীয় জয় এনে দেন খুলনাকে।

শেষ ওভারে অমন ম্যাচ উইনিং বোলিংয়ের প্রশংসা যেমন হয়েছে, বিপরীতে সমালোচকদের কেউ কেউ ফোড়ন কেটেছেন, মাহমুদউল্লাহ তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দল জিতিয়েছেন। কিন্তু কাদের বিরুদ্ধে ?

শেষ ওভারে তার বলে রাজশাহীর যে তিনজন আউট হয়েছেন, তাদের কেউ ব্যাটসম্যান নন। একটু-আধটু ব্যাটিং পারেন-জানেন, এমন কেউও ছিলেন না।

সে কথা অবশ্য অমুলক নয়। ওই দিন মাহমুদউল্লাহর অফস্পিনে যে তিনজন আউট হয়েছেন, সবাই বোলার; কিন্তু আজ সন্ধ্যায় মাহমুদউল্লাহর দল জেতানো বোলিংয়ের পর সব সমালোচকের সবার মুখ বন্ধ।  

এদিন আবার শেষ ওভারে তিন উইকেটের পতন ঘটিয়ে দল জিতিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। এবার আর কেউ বলতে পারবেন না শনিবারও তিন বোলারকেই আউট করে হিরো মাহমুদউল্লাহ! এদিন তার কাজটা অনেক বেশি কঠিন ছিল।

কারণ, চিটাগাং ভাইকিংসের শেষ ওভারে দরকার ছিল ৬ রানের। সবচেয়ে বড় কথা, এদিন আর শুধু তিন বোলারকে আউট করেই হিরো নন খুলনার অধিনায়ক। তিনি যখন শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন, তখন ক্রিজে ছিলেন দুই ভিনদেশি মোহাম্মদ নবি ও চতুরঙ্গ ডি সিলভা। এবং সবচেয়ে বড় কথা দুজনই ছিলেন ওয়েল সেট।

মোহাম্মদ নবি শতভাগ স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান নন। মূলতঃ অলরাউন্ডার। যিনি ছয় নম্বরে ব্যাটিং করেন। সঙ্গে অফস্পিনটাও ভালই করেন। ঢাকা তথা বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে নবি নতুন মুখ নন। আফগান জাতীয় দল ছাড়াও বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলেছেন।

ঢাকা মোহামেডানের হয়ে গত তিন-চার মৌসুমে দুবার অংশ নিয়েছেন। মোহামেডানের হয়ে ঢাকা লিগে বিগ হান্ড্রেডও আছে। আর চতুরাঙ্গা সিলভা মুলতঃ বাঁ-হাতি স্পিনার। লেট অর্ডারে ব্যাট চালাতেও পারেন। এ লঙ্কান এবারই ভিক্টোরিয়ার হয়ে ঢাকা লিগ খেলে গেছেন।

এবারের প্রিমিয়ার লিগে ব্যাট হাতে আহামরি কিছু করে দেখাতে না পারলেও বল হাতে বেশ সফল; সর্বাধিক উইকেট শিকারি।

আজ সন্ধ্যায় খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ যখন শেষ ওভারে বল তুলে নেন, তখন আফগান মোহাম্মদ নবি ২০ বলে ৩৮ আর লঙ্কান চতুরঙ্গ ১৩ বলে ১৯ রানে ব্যাট করছিলেন। অষ্টম উইকেটে মাত্র ৪.১ ওভারে ৪৫ রানের জুটি গড়ে উঠেছিল নবি ও চতুরঙ্গার মধ্যে।

খুলনার চার ফ্রন্টলাইন বোলার জুনায়েদ খান, কেভিন কুপার, শফিউল ও মোশাররফ রুবেল চার ওভারের কোটা পূর্ণ করে ফেলেছেন আগেই। এরকম অবস্থায় আবার বল হাতে নেয়া মাহমুদউল্লাহর।

প্রথম বলে লং অফে ঠেলে সিঙ্গেলস নবির। স্ট্রাইকে চতুরঙ্গা। বাঁ-হাতি চতুরঙ্গাকে অফস্ট্যাম্পের ঠিক বাইরে থ্রি কোয়ার্টার লেন্থের ডেলিভারি। ড্রাইভ খেলতে গিয়ে কট বিহাইন্ড এ লঙ্কান। উইকেটে আসলেন আরেক বাঁ-হাতি আব্দুর রাজ্জাক। প্রথম বল ডট।

পরের বলে রান করতে মরিয়া রাজ্জাক নিশ্চয়ই তুলে মারতে চাইবেন। এই ভেবে খানিক লেন্থ ডেলিভারি। রাজ্জাকের উঁচু শট গিয়ে জমা পড়ল লং অফ বাউন্ডারির কাছে দাড়ানো শুভাগত হোমের হাতে। প্রান্ত বদল হওয়ায় পঞ্চম বলে স্ট্রাইকে মোহাম্মদ নবি। দুই বলে পাঁচ রান দরকার থাকা অবস্থায় ঠিক অফস্ট্যাম্পের সামান্য বাইরে একটু টেনে দেয়া ডেলিভারিকে কাট করতে গিয়ে ব্যাটে আনতে ব্যর্থ নবি।

শেষ বলে চার হাঁকালে টাই। আর ছক্কা হাঁকালে জয়- এমন অবস্থায় মাহমুদউল্লাহর খাটো লেন্থের বল। দীর্ঘ দেহি নবি তার আগে ২২ বল যেভাবে খেলেছেন, ঠিক তেমন খেলতে পারলেও হয়ত ওই বলে বাউন্ডাারি হাঁকানো যেত।

কিন্তু ঠিক ম্যাচ নির্ধারনি ডেলিভারিতে তিনি যে পুল শটটি খেললেন, তা বুক সমান উচ্চতায় গিয়ে জমা পড়ল মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা অলক কাপালির হাতে। এরই সাথে অবিশ্বাস্য জয়ের আনন্দ খুলনা টাইটান্স শিবিরে। আবারো শেষ ওভারে অসামান্য বোলিং করে জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহ। নতুন করে আবারও সত্য চিনিয়ে দিলেন খুলনার অধিনায়ক।

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।