মাশরাফির চোখে সেরা ব্যাটসম্যান আশরাফুল


প্রকাশিত: ১১:৪১ এএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৬

ক্রিকেটে সবচেয়ে অভিজাত, কুলীন শ্রেণির ফরম্যাট টেস্টে সবে মাত্র পথচলা শুরু বাংলাদেশের। নাঈমুর রহমান দুর্জয়, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খালেদ মাসুদ পাইলটদের হাত ধরে সাদা পোষাকের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হওয়ার পর একজন, দু’জন করে নতুন তারতার আবির্ভাব হতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলংকার মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে গেলো বাংলাদেশ। সেটা ছিল এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। ৬ সেপ্টেম্বর মাঠে গড়ানো ওই টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হলো ১৭ বছরের এক তরুণের।

মুত্তিয়া মুরালিধরন, চামিন্দা ভাসদের মোকাবেলা করে সদ্য কৈশোর পার করা ১৭ বছরের সেই তরুণ তুলে নিলেন অবিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্রিকেটে বিরল রেকর্ড সৃষ্টি হয়ে গেলো সেদিন। টেস্টের সর্বকনিষ্ট সেঞ্চুরিয়ান। যা আজও টিকে রয়েছে সগৌরবে। তিনি আর কেউ নন, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মত অনেক বড় বড় পরাশক্তির বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল।

mashrafi

আশরাফুলের অভিষেকের মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হলো আরেক তরুণের। ১৮ বছরের টগবগে সেই তরুণ বয়সভিত্তিক দল থেকে ‘এ’ দলে। এরপর সুযোগ পেয়ে গেলেন সরাসরি টেস্ট দলে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই তুললেন গতির ঝড়। নিলেন ৪ উইকেট। নাম হয়ে গেলো তার নড়াইল এক্সপ্রেস। মাশরাফি বিন মর্তুজা কৌশিক।

মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশ পেয়ে গেলো ইতিহাসের সেরা দুই ক্রিকেটার, একজন ব্যাটসম্যান এবং একজন বোলারকে। তার আগে-পরে কিন্তু বয়সভিত্তিক দলে দু’জন খেলেছেন এক সঙ্গে। অনুর্ধ্ব-১৭ থেকে শুরু করে, অনুর্ধ্ব-১৯ এবং এশীয় যুব ক্রিকেটেও তারা ছিলেন সঙ্গী। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আশরাফুলের সঙ্গে একটা সখ্য এবং বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে মাশরাফির। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়ই মাশরাফি খেলেছেন আশরাফুলের সঙ্গে। এ দু’জনের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়েছে অনেক দুর। তবে দু’জনই শিকার হয়েছেন নিয়তির ভিন্ন ভিন্ন দু’ধরনের নির্মম পরিহাসের।

মাশরাফি পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে শিকার হয়েছেন সর্বনাশা ইনজুরির। যে ইনজুরি তার ক্যারিয়ার থেকে কেড়ে নিয়েছে অনেকগুলো সোনালি দিন। আশরাফুলেরটা পুরোপুরি নিন্দনীয়। দেশের মান-সম্মান বিকিয়েছেন তিনি। ম্যাচ ফিক্সিং করেছেন। যে কারণে বিসিবি কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ দু’বছর কমানোর কারণে ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছেন আশরাফুল। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে আরও দু’বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে তাকে।

Ashraful

ফিক্সিংয়ের বিষয়টা নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে যুক্ত। তবে, প্রতিভা তো আর কোন নীতিতে বেধে রাখা যায় না। প্রতিভা অন্য জিনিস। একজন ফিক্সার হিসেবে আশরাফুলকে অনেকে ঘৃণার চোখে দেখতে পারেন; কিন্তু একজন প্রতিভাবান এবং পারফরমার আশরাফুলকে এখনও পছন্দ করেন কোটি ভক্ত। তারা কায়মনোবাক্যে প্রত্যাশা করেন, আশরাফুল আবারও ব্যাট হাতে ফিরে আসুক।

ব্যাটসম্যান আশরাফুলের গুণমুগ্ধ তার দু’মাস পর অভিষেক হওয়া মাশরাফিও। ১৫তম বছরে পা রাখা মাশরাফি জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে নিজেই জানিয়েছেন এ কথা। যদিও ফিক্সার আশরাফুলকে অনেক বেশি ঘৃণা করেন মাশরাফিও। কারণ, দেশপ্রেমের প্রশ্নে মাশরাফি অন্য কোন কিছুর সঙ্গেই আপোষ করতে নারাজ। অনৈতিকতার পথে হাঁটার কারণে আশরাফুলের ওপর সবচেয়ে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়েছিলন মাশরাফিই। তার হতাশা এবং ক্ষোভের মাত্রা এত বেশি ছিল যে, তিনি এক সময় বলেছিলেন, ‘আমার অধিনায়কত্বে আমি আর কখনও আশরাফুলকে চাই না।’

তবুও, ১৫ বছরের মূল্যায়ণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফির কাছে আশরাফুলই সেরা প্রতিভা। আগেও তিনি বলেছিলেন এ কথা। জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সেরা প্রতিভা আশরাফুল, এরপর নতুন সেরা প্রতিভা মোস্তাফিজ।

নিজের ক্যারিয়ারের ১৫তম বর্ষপূর্তিতে জাগো নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মাশরাফির কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ দীর্ঘ খেলোয়াড়ি জীবনে নিজে অনেকের সঙ্গেই খেলেছেন। কাকে ওই বহরের মধ্যে দেশের দেখা সেরা ব্যাটসম্যান মনে হয়েছে? ঘুরিয়ে বললে আপনার দেখা ও একসঙ্গে খেলা সেরা ব্যাটসম্যান কে?

জবাবে সাত-পাঁচ কিছুই ভাবলেন না। উত্তরটা যেন ঠোটের আগায় ছিল কিংবা আগে থেকেই যেন প্রস্তুত ছিলেন এ প্রশ্নের জন্য। এ কারণে, প্রশ্ন শোনা মাত্রই তিনি কোন ব্যাখ্যা-ট্যাখ্যা না দিয়েই বলে দিলেন, ‘আশরাফুল।’

আইএইচএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।