গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আবারো বেকায়দায় সরকার
গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আবারও বেকায়দায় পড়ছে সরকার। তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ও সংকটের নতুন মাত্রা। ব্যাংকের তিন বছর মেয়াদি ১২ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদেও ৯ জনের মেয়াদ গতকাল রোববার শেষ হয়েছে। সাধারণত, মেয়াদ শেষ হওয়া পরিচালকেরা ব্যাংকের পর্ষদের বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন না। তবে এই ব্যাংকের ক্ষেত্রে কি হবে।
অন্যদিকে, আবার নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার নতুন পরিচালক নিয়োগের কথা বলে এলেও সেই নির্বাচন কবে হবে বা আদৌ হবে কি না, তাও অনিশ্চিত।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘পর্ষদের আগামী বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচালকেরা কোনোভাবেই অংশ নিতে পারবেন না।’
তাদের মতে, ‘যে যা-ই বলুক না কেন, সরকারের নিয়োগ করা পরিচালকের বাইরে গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারধারী নয় পরিচালকের মেয়াদ প্রকৃতপক্ষে শেষ। তাঁরা আর গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় যোগ দিতে পারবেন না।’
সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গত বছরের ৬ এপ্রিল ‘গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালা’ প্রণয়ন করে। ছয় মাস, অর্থাৎ গত ৬ অক্টোবরের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে সরকার ব্যাংকটির পরিচালক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংককে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ কাজ করতে রাজি হয়নি।
সরকার পরে প্রজ্ঞাপন দিয়ে গত নভেম্বরে বিধিমালা সংশোধন করে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আনে। সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়, তিন সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচন অনুষ্ঠানটি করে দেবে। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত একজন জেলা জজ হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কমিশনার হবেন দু`জন; রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে কমর্রত একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান মনোনীত পিকেএসএফে কর্মরত একজন ডিএমডি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়ে প্রজ্ঞাপনটিতে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচন হবে ‘বিধিমালার অধীন কমিশন গঠনের এক বছরের মধ্যে।’ বাস্তবে গতকাল রোববার পর্যন্ত সরকার নির্বাচন কমিশনই গঠন করতে পারেনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচন করে দেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে কোনো অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজই রাজি হচ্ছেন না।
তথ্য মতে, ৯০ লাখ গ্রাহকের গ্রামীণ ব্যাংকের ১২ সদস্যের পর্ষদের মধ্যে চারজন হলেন সরকারের নিয়োগ করা। পর্ষদের প্রধান ব্যক্তি চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক দেড় বছর আগে পদত্যাগ করেছেন। যদিও সরকার তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি বলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানয়েছিলেন।
অন্য সদস্য হলেন এস এম মহিউদ্দিন, যিনি ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মহাব্যবস্থাপক থেকে পদোন্নতি পেয়ে ডিএমডি হয়েছেন সম্প্রতি। আগের এমডি মোহাম্মদ শাহজাহান অবসরে চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত এমডি।
সরকারের নিয়োগ দেওয়া বাকি দুই পরিচালক হচ্ছেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সুরাইয়া বেগম ও আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ আলম সারোয়ার। আর নয়জন নারী সদস্য হলেন চট্টগ্রামের সাজেদা বেগম, সিলেটের মোছাম্মদ সুলতানা বেগম, কুমিল্লার রেহানা আক্তার, গাজীপুরের সালেহা খাতুন, দিনাজপুরের পারুল বেগম, বগুড়ার মেরিনা আক্তার, পটুয়াখালীর মোমেনা খাতুন, যশোরের শাহিদা আক্তার এবং ময়মনসিংহের তাহসিনা খাতুন।
এসএ/এআরএস/এমএস