কেন আত্মঘাতী মাহমুদউল্লাহ!


প্রকাশিত: ১২:০২ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

ইএসপিএন ক্রিকইনফোর কমেন্টারি, ‘শেষ মুহূর্তে কী বোধ-বুদ্ধিটাই হারিয়ে ফেললেন মাহমুদউল্লাহ!’ ‘এ কেমন শট খেললেন তিনি!’ এ তো পুরোপুরি আত্মঘাতী! খুব সহজেই, যে কেউ বলটাকে সোজা ব্যাটে ডিফেন্স করে দেবে। স্লো উইকেটে জাফর আনসারির নিচু হয়ে আসা বলটি ব্যাট পেতে দেয়াই ছিল মাহমুদউল্লাহর মত ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে তখনকার মুহূর্তের চাওয়া। তাতে ১২৮ রানের লিড, সঙ্গে হাতে ৮ উইকেট নিয়ে দিন শেষ করতে পারবে বাংলাদেশ।

কিন্তু না, সবাইকে অবাক করে দিয়ে খেলতে গেলেন সুইপ শট। ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়েই মিস করলেন। বল ব্যাট আর প্যাড দুটিকেই ফাঁকি দিল। সোজা গিয়ে আঘাত হানলো স্টাম্পে। দিনের একেবারে শেষ বলটাতেই কাণ্ডজ্ঞানহীন শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন তিনি। ১২৮ রানের লিড ঠিকই থাকলো; কিন্তু উইকেট হাতে থাকলো ৭টি।

টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর ৭ বছর পার করলেন তিনি। নামের পাশে জ্বল জ্বল করছে ২৯টি টেস্ট। সেঞ্চুরি ১টি হলেও ১২টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। ১৩১টি ওয়ানডে। দলের মধ্যে অন্যতম সিনিয়র একজন ক্রিকেটার হিসেবে সমাদৃত তিনি।

কিছুদিন আগেই ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ থাকলে আমি অনেক বড় ভরসা পাই। অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক সে।’ সেই নির্ভরতার প্রতীকই কি না, এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে খেললেন এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন শট!

২৪ রানে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামলো বাংলাদেশ। স্লো উইকেটে স্লো ব্যাটিং করলে ভালোর চেয়ে বিপদের সম্ভাবনাই বেশি- এমন চিন্তা থেকেই হয়তো শুরু থেকে ঝড়ো গতিতে ব্যাটিং শুরু করলেন তামিম। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ৪০ রান করেও ফেলেছিলেন। এরপর জাফর আনসারির একটি ভালো বলে আউট হয়ে ফিরে গেলেন তিনি। যদিও আরেকটু সতর্ক হলে এভাবে উইকেটটা বিলিয়ে দিতে হতো না তাকে।

মুমিনুল মাঠে নেমেই মুখোমুখি হলেন বেন স্টোকসের রিভার্স সুইংয়ের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উইকেটটা হারালেন। ৬৫ থেকে ৬৬- এই দুই রানের মধ্যে দুই উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ যখন একটু ধুঁকতে শুরু করলো, তখন ত্রাতা হয়ে আসলেন ইমরুল আর মাহমুদউল্লাহ।

ঝড়ো অথচ সতর্ক ব্যাটিংয়ে তারা দু’জন দ্বিতীয় দিনের শেষটা রাঙিয়ে দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশের লিডকে ক্রমশ দিচ্ছিলেন বাড়িয়ে। ১২৮ রানের লিড। এমন রহস্যময়, স্লো এবং লো উইকেটে দ্রুত ১২৮ রানের লিড চাট্টিখানি কথা নয়। আগেরদিন ১০ ওভার কম খেলা হওয়ার কারণে, আজ সেগুলো পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছিল। সেটাও প্রায় পার করে ফেলেছে বাংলাদেশ।

দিনের একেবারে শেষ বল। বোলার জাফর আনসারি। এটি ঠেকিয়ে দিতে পারলেই ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা বাংলাদেশের হয়ে যাবে। চওড়া হাসি নিয়েই মাঠ ত্যাগ করবে মাঠে উপস্থিত দর্শকরা। কিন্তু শেষ বলটিতে মাহমুদউল্লাহর এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাট চালনা এবং ক্ষমার অযোগ্য ভুলটাই হাসি কেড়ে নিলো বাংলাদেশের। আলো কেড়ে নিলো ইংল্যান্ড।  

কেন এমন আত্মঘাতী শট খেললেন মাহমুদউল্লাহ? খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি? জাফর আনসারিকে এর আগে আরও কয়েকবার বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন বলে সেই আত্মবিশ্বাসটা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল?

মূলত এ কারণেই এমন আত্মঘাতী হলেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ চেয়েছিলেন দিনের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে শেষ করতে। ওই বাউন্ডারিটা মারতে পারলে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ সেঞ্চুরিটা তো হয়েই যায়, সঙ্গে অসাধারণ এক হাফ সেঞ্চুরির তৃপ্তি নিয়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়া যাবে। এ চিন্তা থেকেই শেষ বলটাকে চেয়েছিলেন ফিল্ডারদের ফাঁক গলে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দেবেন।

এ চিন্তাটাই খেলা করছিল তখন তার মাথায়। আর এটাই হয়ে উঠলো তার জন্য আত্মঘাতী। চট্টগ্রাম টেস্টে ভালো ব্যাট করতে পারেননি। ১৭ এবং ৩৮ রান করেছিলেন দুই ইনিংসে। এবার প্রথম ইনিংসে আউট হলেন ১৩ রান করে। সে অবস্থা থেকে ফর্মে ফেরার মত যখন আস্থা পেয়ে গেলেন, তখনই অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে হলেন আত্মঘাতী। দিনের একেবারে শেষ বলে উইকেটটাই বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দিলেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২২০/১০, ৬৩.৫ ওভার (তামিম ইকবাল ১০৪, মুমিনুল হক ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সাকিব আল হাসান ১০; মঈন আলি ৫/৫৭, ক্রিস ওকস ৩/৩০, বেন স্টোকস ২/১৩)।

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ২৪৪/১০, ৮১.৩ ওভার (জো রুট ৫৬, ক্রিস ওকস ৪৬, আদিল রশিদ ৪৪*, জনি বেয়ারেস্টো ২৪, অ্যালিস্টার কুক ১৪; মিরাজ ৬/৮২, তাইজুল ৩/৬৫, সাকিব ১/৪১)।

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ১৫২/৩, ৩১ ওভার (ইমরুল কায়েস ৫৯*, মাহমুদউল্লাহ ৪৭, তামিম ইকবাল ৪০, মুমিনুল ১; জাফর আনসারি ২/৩৩, বেন স্টোকস ১/২০)।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।