সেই ‘ইংল্যান্ডের’ সঙ্গে ৫০তম টেস্ট খেলছেন মুশফিক


প্রকাশিত: ১২:৫৫ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

নিজেই স্বীকার করেছেন, ক্রিকেটে একটু বেশি মনোসংযোগ করতেই মাঝে কিছু সময় নিজেকে প্রচারমাধ্যম থেকে দূরে রাখা। সে কিছু সময়ের অবসান হলো গত ১৯ অক্টোবর; চট্টগ্রাম টেস্টের আগের দিন। সেদিন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে সংবাদ সন্মেলনে দেখা মিলেছিল চেনা মুশফিকের।
 
কেউ কেউ হয়তো জানতে চাইছেন ‘চেনা মুশফিক’ আবার কি? ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে চেনা মুশফিক মানেই পরিপাটি ব্যাটিং টেকনিকের এক উইলোবাজ। যিনি যে কোনো ফরম্যাটে টিম বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভও। কিন্তু বাংলাদেশের প্রচারমাধ্যমের কাছে সেটাই মুশফিকের একমাত্র পরিচয় নয়।
 
স্থানীয় মিডিয়া তাকে অন্যভাবে চেনে। জানে। মুশফিক হয়তো সাকিব-তামিমের মতো বড় পারফরমার নন। মাশরাফির মতো বর্ণাঢ্য ও বড় চরিত্রও নেই তার। কিন্তু মাঠের মুশফিককে যে সব ক্রিকেট সাংবাদিকরা চেনেন-জানেন, তারা সবাই একবাক্যে মানেন মুশফিক সার্বক্ষণিক ক্রিকেটার।

ক্রিকেট যার ধ্যান-জ্ঞান। মাঠে অনুশীলনে মুশফিক আর সবার চেয়ে আলাদা। প্র্যাকটিসে আসেন অন্য সবার আগে। টি প্র্যাকটিস শেষ, তবুও শেরেবাংলার সবুজ ঘাসের মাঠে মুশফিকের অনুশীলন চলে। আর মিডিয়ার কাছে প্রেস মিটে মুশফিক  বরাবরই ‘আপনজন’।

কোনো প্রশ্ন এড়িয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা খুব কম। মিডিয়া সব সময়ই চায় সাবলীল ও বিষদ ব্যাখ্যা। মুশফিক সব সময়ই তার সরবরাহকারী। একটা প্রশ্নর যথাযথ উত্তর ও যতটা সম্ভব বিস্তারিত ব্যাখায় মুশফিকের জুড়ি মেলা ভাড়। যিনি বিতর্ক এড়িয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেন সময় নিয়ে।
 
চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগে ও শেষ হওয়ার পর সেই সাবলীল ও প্রাণবন্ত মুশফিকের দেখা মিলেছিল। আজ দুপুরে শেরেবাংলায় আবার পাওয়া গেল হাসিমুখের মুশফিককে। জনাকীর্ণ সংবাদ সন্মেলনে একটানা ১৭ মিনিট কথা বললেন। প্রতিটি প্রশ্নের জবাব বিস্তারিত ও সময় নিয়ে।
 
যে কেউ হয়তো ভাবছেন, চট্টগ্রামের অমন উজ্জীবিত ও প্রত্যয়ী পারফরমেন্সে অনুপ্রাণিত মুশফিক। তাই ঢাকা টেস্টের আগের সংবাদ সন্মেলনে এমন সাবলীল ও সরব। তা আছে বৈকি। চট্টগ্রামে তার দল যেমন ক্রিকেট খেলেছে, তাতে মুশফিক কেন, যে কোনো অধিনায়কেরই অমন চনমনে, চাঙ্গা ও উজ্জীবিত থাকার কথা।
 
তবে এ টেস্টের আগে মুশফিকের ফুরফুরে মেজাজে থাকার একটা কারণ আছে। টাইগার অধিনায়ক টেস্ট ক্যারিয়ারের একটা অন্যরকম মাইলফলক স্পর্শের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। যে মাইলফলক স্পর্শের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক কাকতালীয় ঘটনা।   
তার টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের সঙ্গে (২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে)।

১১ বছর ৫ মাস পর সেই ইংল্যান্ডের সঙ্গেই ৫০তম টেস্ট ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন মুশফিকুর রহীম। আগামীকাল শুক্রবার সকালে শ্রীলঙ্কান ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মাদুগালে আর ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের সঙ্গে যখন টস করতে নামবেন, তখনই ক্যারিয়ারের ঐ মাইলফলক ছোঁবেন টাইগার অধিনায়ক।

বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে ১৬ বছর হয়ে গেছে। প্রায় দেড় যুগে পুরো দল টেস্ট খেলেছে ৯৪টি। কিন্তু ৫০ কিংবা তার ওপরে টেস্ট খেলা ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহায়েত হাতে গোনা; মাত্র দুজন- মোহাম্মদ আশরাফুল (৬১ টেস্ট ) আর হাবিবুল বাশার (বাশার ৫০ টেস্ট )। সেই তালিকায় তিন নম্বরে কাল জায়গা পেতে যাচ্ছেন মুশফিকুর রহীম।
 
টেস্ট খেলার হাফ সেঞ্চুরির তিন নম্বর পজিশনের কথা বলা হলেও আসল সত্য হলো শুক্রবার টেস্ট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পূর্বসূরী ও তার প্রথম অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে ছুঁয়েও ফেলবেন মুশফিক। দুজনারই টেস্ট হবে ৫০টি। তখন এ দুজনের ওপরে থাকবেন শুধু মোহাম্মদ আশরাফুল।

এটুকু শুনে মনে হতে পারে মুশফিকুর রহিমের টেস্ট ক্যারিয়ারের সঙ্গে বুঝি শুধু ইংল্যান্ড ক্রিকেট টিমেরই নাম জড়িয়ে আছে। আসলে তা নয়। ইংল্যান্ড তথা বিশ্ব ক্রিকেট তীর্থ ‘লর্ডসের; সঙ্গে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে মুশফিকের নাম। মুশফিক হচ্ছেন লর্ডসে অভিষেক হওয়া সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার।
 
আজ থেকে ১৩৭ মাস আগে ১৭ বছর ৩৫১ দিন বয়সে (২০০৫ সালের ২৬ মে) লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। শুধু টেস্টে নয়, মুশফিক হচ্ছেন একমাত্র ক্রিকেটার যিনি সব ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত লর্ডসে অভিষেক হওয়াদের সর্বকনিষ্ঠ।
 
পঞ্চাশ নম্বর টেস্টের দোরগেড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিকের সামনে আজ আরো একটি মাইলফলক স্পর্শের হাতছানি। ঢাকা টেস্টে এক রান করার সঙ্গে সঙ্গে মোহাম্মদ আশরাফুলের চেয়ে টেস্টে বেশি রান হয়ে যাবে তার। ৪৯ টেস্টে রান তোলায় মুশফিক আর আশরাফুল সমান সমান (২৭৩৭ করে)।

প্রসঙ্গত, আশরাফুল ঐ রান করেছেন তার চেয়ে ১১ টেস্ট বেশী খেলে। বাংলাদেশের মধ্যে টেস্টে রান তোলায় তিনি  মোহাম্মদ আশরাফুলের সাথে যৌথভাবে চার নম্বরে; তামিম ইকবাল (৪৩ টেসেট ৩২০৫), হাবিবুল বাশার (৫০ টেস্টে ৩০২৬) ও সাকিব আল হাসানের (৪৩ টেস্টে ২৮৭৮) পেছনে।
 
তবে অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যানে সবার চেয়ে এগিয়ে মুশফিক। এরই মধ্যে ২৫ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে টিম বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে নিজের নামকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন। তিন পূর্বসূরী হাবিবুল বাশার (১৮) , মোহাম্মদ আশরাফুল (১৩) ও  খালেদ মাসুদ পাইলট (১২) টেস্ট ক্যাপ্টেন্সিতে মুশফিকের পেছনে।

এআরবি/এনইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।