গামিনি কি পারবেন শেরেবাংলায় ‘স্পিন ট্র্যাক’ তৈরি করতে!


প্রকাশিত: ১১:১৫ এএম, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

ফল পক্ষে আসেনি। জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েও তা ছোঁয়া সম্ভব হয়নি। তীরে গিয়ে তরি ডুবেছে। তাতে কি? চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে একটা সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে- শুধু ওয়ানডেই নয়, নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যরে সাথে মানানসই উইকেট পেলেও মুশফিক বাহিনী বড় শক্তির বিরুদ্ধে টেস্ট জেতারও সামর্থ্য রাখে।

২০-২৫ অক্টোবর বন্দর নগরীর সাগরিকায় মুশফিক, তামিম, ইমরুল, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও মিরাজরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আমরা এখন টেস্টেও ভাল খেলতে পারি। বিচ্ছিন্নভাবে একটি-দুটি সেশন নয়, পাঁচদিনের ১৫ সেশন প্রতিপক্ষের সাথে সমানতালে লড়ে টেস্ট জেতার মত অবস্থা তৈরীও করতে শিখেছি।

এজন্য দরকার একদম নিজেদের শক্তি-সামর্থে্যরে সাথে মানানসই উইকেট। কেমন উইকেট? গত ক’দিনে সবার জানা হয়ে গেছে, শতভাগ স্পিন সহায়ক উইকেট হলেই বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের মত তুখোড় শক্তির ভীতও কাঁপিয়ে দিতে পারে।

যে পিচে বাড়তি গতি থাকবে না। বল পিচ পড়ে অস্বাভাবিক গতিতে ব্যাটে আসবে না। পেস বোলারদের বল তেমন বাউন্সও হবে না। শুরু থেকে টার্ন করবে। দুই বাঁ-হাতি সাকিব আল হাসান-তাইজুল ইসলাম আর অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ইচ্ছেমত টার্ন করাতে পারবেন। বল পড়ে সাপের মত এঁকেবেঁকে যাবে।

অ্যালিস্টার কুক, বেন ডাকেট, জো রুট, মইন আলি, বেয়ারস্টো ও বেন স্টোকসের মত ঝানু ইংলিশ ব্যাটসম্যানদেরও স্বচ্ছন্দে খেলা হবে কষ্ট। তাহলেই ইংরেজদের সঙ্গে সমানতালে লড়াই সম্ভব।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন স্পিনার দিয়ে ইংলিশদের চেপে ধরা, টেস্টে নবম বারের মত প্রতিপক্ষকে দু’ইনিংসে অলআউট করা গেছে। ইংলিশদের ২০ উইকেটের ১৮‘টির পতন ঘটিয়েছেন স্পিনাররা।

স্পিন সহায়ক উইকেটে সাকিব-তাইজুল ও মিরাজের সাফল্যে আরও একটি সত্য ফুটে উঠেছে। তাহলো ইংলিশদের দুই বার অলআউট করতে ঠিক জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটই প্রয়োজন। হারার পরও যে উইকেটের প্রশংসায় অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ছিলেন পঞ্চমুখ।

প্রথম টেস্ট শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনে টাইগার অধিনায়ক অকপটে স্বীকার করেছেন, এই প্রথম মনের মত উইকেটে খেললাম আমরা। আমার খেলোয়াড়ি জীবনে এরচেয়ে অনুকুল উইকেটে আগে কখনই খেলিনি। যে উইকেট ছিল শতভাগ আমাদের শক্তি ও সামর্থ্যরে সাথে মানানসই।’

অথচ আগে বেশ ক’বার উইকেট নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশের রেকর্ড আছে তার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামের যে উইকেটে খেলা হয়েছে তাতে দারুণ সন্তুষ্ট বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। তার বদ্ধমুল ধারণা বাংলাদেশ দলের শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ীই তৈরি হয়েছে এ উইকেট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় ধরা না দিলেও যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে তার পেছনে উইকেটেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অধিনায়ক।

সে কারণেই তিনি কিওরেটর জাহিদ রেজা বাবুর নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এখানে বাবু ভাই অসাধারণ এক উইকেট বানিয়েছেন। আমি যত টেস্ট ম্যাচ খেলেছি, আমার মনে হয় এই প্রথম কোনো কিউরেটরের কাছ থেকে এমন উইকেট পেয়েছি, যেটা আমাদের জন্য সহায়ক, যা আমাদের পরিকল্পনায় ছিল।’

অধিনায়কের উইকেট নিয়ে এমন ইতিবাচক মনোভাব আর সেই রাতেই ঢাকা টেস্টের দল ঘোষণায় ব্যাটসম্যান কাম অফস্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অন্তর্ভুক্তি দেখে পরিষ্কার- শেরে বাংলায়ও স্পিন সহায় উইকেটে মাঠে নামতে চাচ্ছে স্বাগতিকরা।

ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বাধিক চার চারটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক হয়েও চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে দলে জায়গা পাননি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তাকে ডাকা হয়েছে দ্বিতীয় টেস্টে। সেটা যতটা ব্যাটসম্যান কোটায়, তারচেয়ে অনেক বেশি অফস্পিনার হিসেবে।

ভাবা হচ্ছে শেরে বাংলায় আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে যে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে তাতে মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে অফস্পিনারের ভুমিকায় দেখা যাবে মোসাদ্দেক সৈকতকেও; কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, শেরে বাংলায়ও কি জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মত স্পিন সহায়ক উইকেট তৈরি সম্ভব।

জাহিদ রেজা বাবু যেভাবে চট্টগ্রামের উইকেটকে মুশফিকদের মনের মত করে বানিয়ে ছিলেন, শ্রীলঙ্কান কিওরেটর গামিনি কি শেরে বাংলার পিচকে তেমনভাবে তৈরী করতে পারবেন? শেরে বাংলায়ও কি বল প্রথম থেকেই ঘুরবে?

সাকিব, তাইজুল ও মিরাজের সাথে সৈকত মিলে আবারো ইংলিশদের দু’বার অলআউট করতে পারবেন? শেষ টেস্ট যত এগিয়ে আসছে এ প্রশ্ন ততই জোরালো হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৮ সাল থেকে বিসিবি কিওরেটরের দায়িত্ব পেলেও জাহিদ রেজা বাবু উইকেট তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত দেড় যুগ আগে থেকে। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় হওয়া মিনি বিশ্বকাপে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে তৎকালিন কিওরেটর আলম চৌধুরীর অন্যতম সহকারি ছিলেন বাবু।

সেবার দক্ষিণ আফ্রিকান কিওরেটর ফিল রাসেলের দেখানো ফর্মুলায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের উইকেট তৈরি করা হয়েছিল। জাহিদ রেজা বাবু সে নির্মান শৈলি খুব কাছ থেকেই দেখেছেন। তাই তার উইকেট তৈরির ট্রেনিংটা পুরনো। সে শিক্ষা থেকেই এবার চট্টগ্রামে টার্নিং উইকেট তৈরি করা।

যে উইকেটে বল প্রতিনিয়ত টার্ন করলেও প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত পিচ অক্ষত ছিল। একটুও ভাঙ্গেনি।

সাধারনত: স্পিনিং ট্র্যাক সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গতে থাকে; কিন্তু জাহিদ রেজার বাবুর তৈরি জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ একটুও ভাঙ্গেনি। পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাবু পিচের ওপরে একটুও ঘাস রাখেননি।

একদম শতভাগ ন্যাড়া করে ফেলেছিলেন। তবে ওপরে ঘাস না থাকলেও মাটি যাতে সহজে না ভাঙ্গে সে কারণে পিচের ঠিক নীচের স্তরে সবুজ শক্ত ঘাষের বন্ধন ছিল অটুট। এছাড়া স্বাভাবিকের তুলনায় উইকেটে পানিও দেয়া হয়েছে কম।

সাধারনতঃ পানির স্তর পিচের ওপরের ঠিক দুই ইঞ্চি পরিমাণ নীচেই থাকে। কিন্তু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পানির স্তর ছিল ৪ ইঞ্চি নীচে। সব মিলে উইকেটে বল টার্ন করেছে; কিন্তু পিচ ছিল অক্ষত। ভাঙ্গেনি একটুও।

এখন প্রশ্ন হলো, জাহিদ রেজা বাবু চট্টগ্রামে যেভাবে মুশফিকদের মনের মত উইকেট তৈরি করে দেখালেন, লঙ্কান গামিনি কি মিরপুরে তা করে দেখাতে পারবেন?

আইএইচএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।