আমরাই জিতবো, এই বিশ্বাস থাকতে হবে


প্রকাশিত: ০৪:২৬ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

১৬ বছর ধরে আমরা টেস্ট ক্রিকেট খেলছি। এ ধরনের পরিস্থিতি অনেকগুলো ম্যাচে তৈরী হয়েছিল। মুলতানের সেই টেস্টটির কথা তো একেবারে জ্বল জ্বল করছে। আমিও ছিলাম সেই টেস্টের একজন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই চট্টগ্রামেই আমরা হেরে গিয়েছিলাম একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে। ওই টেস্টে আমি নিজেই ছিলাম অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকটি টেস্ট এমন হয়েছিল ফতুল্লায়। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে হেরেছিলাম আমরা।

তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে খেলতে এমন অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আমরা জিততে পারিনি। এবারও এমন একটা পরিস্থিতি তৈরী হলো বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি দলের বিপক্ষে। এবার সময় এসেছে এমন পরিস্থিতিতে আমরাও যে জিততে পারি তা প্রমাণ করার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে আমরা প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছি, সেটা প্রমাণ করারও একটা মোক্ষম সুযোগ এসে গেছে আমাদের সামনে।

জয়ের জন্য প্রয়োজন আর ৩৩ রান। খুব যে কঠিন সেটাও না। আবার খুব সহজও না। কারণ, আমাদের হাতে উইকেট নেই। তবুও, ভরসার বড় প্রতীক হয়ে রয়েছে সাব্বির রহমান। সকালে খুব বেশিক্ষণ নয়, আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা টিকতে পারলেই আমরা জিতে যাবো নিশ্চিত।

এ জন্য যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো সাব্বির, তাইজুল এবং শফিউল- এই তিনজনের মধ্যে এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে, আমারও পারি। আমাদেরও বিশ্বাস আছে। আমরাও জিততে পারি। এই বিশ্বাসটা যদি তাদের মধ্যে জন্ম নিতে পারে, তাহলে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ অনায়াসেই জয়টা পেয়ে যাবে।

সাব্বিরকে খুব ধৈর্য্য এবং সাহসের সঙ্গে সকালের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সঙ্গে তাইজুলকে অন্তত ম্যাচ শেষ করে ফেরার চিন্তা করতে হবে। যাতে শফিউলকে মাঠে নামানোর ঝামেলা না বাড়ে। আর যদি শফিউলকে মাঠে নামতেই হয়, অন্তত তাইজুল যেন আরও ১০টি রান করতে পারে। শফিউল ৬/৭ রান করলেও চলবে। বাকি ১৫-১৬ রান আমার বিশ্বাস সাব্বিরই করে ফেলতে পারবে। এভাবে নিজেদের মধ্যে কাজটা ভাগ করে নিতে পারলে এবং দৃঢ় আত্মবিশ্বাস রাখলে আমার মনে হয় না, ৩৩ রান খুব বড় হয়ে যাবে বাংলাদেশের সামনে।

সাব্বিরের ওপর আমার অগাধ আস্থা আছে। ছেলেটা যখন যে ফরম্যাটেই ব্যাট করতে নামুক, তখনই মনে হয়েছে সে খুব আত্মবিশ্বাসী। তার চেহারায় সেটা ফুটে ওঠে। ১০ রান করুক আর ৫০ রান করুক, তাতে থাকে দারুণ আত্মবিশ্বাসের চাপ। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেকগুলো ম্যাচে এমন পরিস্থিতিতে সে অনেকগুলো ম্যাচ জিতিয়েছে।

আমার মনে আছে, এশিয়ান গেমসের ফাইনালে আমরা যেবার স্বর্ণ জিতেছিলাম সেবার, আমার নিজের নেতৃত্বেই দেখলাম সাব্বিরকে।ফাইনালে শেষ মুহূর্তে খুব টেন্স তৈরী হয়েছিল; কিন্তু সাব্বির ওই কঠিন পরিস্থিতিতেও ধুম-ধাম দুটি ছক্কা মেরে আমাদের জিতিয়ে দিয়েছে। অসাধারণ মানসিক শক্তি তার। এ ধরনের মানসিকতা দেখানোর সময় তরুণ বয়স। সাব্বিরের সেই গুণ রয়েছে। আশা করি, কাল সকালের কঠিন পরিস্থিতিতেও সে নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারবে।

চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট নিয়ে গত চারদিন অনেক কথা হয়েছে। এই কঠিন উইকেটে আমাদের ব্যাটসম্যানরা চতুর্থ ইনিংসে এসে আমরা যেভাবে ব্যাটিং করলাম, আমাদের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে কাউন্টার অ্যাটাক করলো, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ইমরুল কায়েসের কথাই ধরুন! যেভাবে ইংলিশ বোলারদের শাসন করে খেলছিল যে, তাতে আমি কেন, পুরো বাংলাদেশের সব ক্রিকেটপ্রেমীর মনেই এই বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে যে, না আমরা পারবো ২৮৬ রান তাড়া করতে।

তবে, এত ভালো পরিস্থিতি তৈরী করে ইমরুলের আরেকটু টিকে থাকা প্রয়োজন ছিল। বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে সে যদি আউট না হতো, তাহলে আমরা নিশ্চিত আজই জিতে যেতাম। ইমরুল ছাড়াও মুমিনুল, সাকিবরা দারুণ ব্যাটিং করেছে। বিশেষ করে বলবো মুশফিক আর সাব্বিরের জুটির কথা। অবিশ্বাস্য ভালো খেলেছে তারা। ৮৭ রানের এই জুটিই আমাদের মধ্যে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছে। মুশফিক যদি আরও কিছুক্ষণ টিকতে পারতো, তাহলে আরও ভালো হতো। দুর্ভাগ্য আমাদের, একটি কঠিন বলেই সে আউট হয়েছে।

braverdrink

এরপর আবার শেষ বিকেলে আলোর স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। না হয় যদি দিনের বাকি ৫ ওভার আমরা খেলতে পারতাম, তাহলে জয়টা সম্ভবত আজই এসে যেতো। কারণ, আজ ভাগ্য আমাদের বেশ সহায় ছিল। শেষ মুহূর্তে ওই ৫ ওভার খেলতে পারলে, হয়তো আমাদের পক্ষেই ম্যাচটা থাকতো। এখন, কাল সকালে খেলতে গেলে আমাদের জন্য ভাগ্যও পক্ষে থাকতে হবে, না হয় সত্যি কঠিন হয়ে যাবে ম্যাচটা।

এই ম্যাচটি যদি আমরা জিততে পারি, তাহলে এটা হবে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে অনেক বড় একটি অর্জন। কারণ, আমরা গত ১৪ মাস খেলিনি। এতবড় একটি বিরতির পর এসে এভাবে খেলতে পারবো, কে ভেবেছিল! পুরো টেস্ট ম্যাচটাই যেন মুগ্ধ হয়ে দেখছি। পুরো চারটি দিন বোঝা যাচ্ছিল না, এর গতি-প্রকৃতি কোন দিকে যাচ্ছে। অসাধারণ উপভোগ্য একটি ম্যাচ। আমার মনে হয়, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেই একটা অন্যতম সেরা ম্যাচ হয়ে থাকবে এটি। ইতিমধ্যে সবাই বলতেও শুরু করেছে, দ্য গ্রেটেস্ট টেস্ট ম্যাচ হিসেবে। পুরোটা ম্যাচজুগে এত টেন্স আর কোন টেস্টে কাজ করেছে কি না আমার সন্দেহ।

বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, তারা এমন উইকেটের জন্য অসাধারণ একটি স্কোয়াড গঠন করেছে। সম্পূর্ণ ম্যাচ উপযোগি একটি দুর্দান্ত স্কোয়াড এই ম্যাচের জন্য তারা উপহার দিয়েছে। এর পুরো কৃতিত্ব অবশ্যই টিম ম্যানেজমেন্টের পাওয়া উচিৎ।

আইএইচএস/এএম

 

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।