‘আর ১০-১৫ ওভার খেলতে পারলেই জয়’


প্রকাশিত: ০১:৪৯ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্পের মত ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ।’ দিনের শেষ ঘণ্টার এক সময় মনে হচ্ছিল, যা হবার আজই হয়ে যাবে। হয়তো হয়েও যেতে পারতো, যদি না আলোর স্বল্পতায় ৫ ওভার আগে খেলা বন্ধ না হতো।

তবে এখন ম্যাচ দুলছে পেন্ডুলামের মত। জিততে বাংলাদেশের দরকার ৩৩ রান। অংকের হিসাবে এ রানটা নেহায়েত কমই। তাও পুরো একদিনে; কিন্তু হাতে যেহেতু মাত্র দুই উইকেট বাকি, তাই জয়ের পাশাপাশি আছে হারের শঙ্কাও।  

চতুর্থ দিনের খেলা শেষে অবশ্য দু’পক্ষই জয়ের স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশ শিবিরের লক্ষ্য, একটাই-হাতে পুরো একদিন সময়। কোনো রকম তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই। ধীরে সুস্থে ১০-১৫ ওভার কিংবা যাই লাগুক, ক্রিজে টিকে থেকে ওই রানটুকু করে তারপর বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফেরার আশায় উন্মুখ টাইগাররা।

আজ খেলা শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কণ্ঠে সে কথারই প্রতিধ্বনি, ‘আমরা যদি কাল শেষ দিন সকালে ১০ থেকে ১৫ ওভার ব্যাট করতে পারি, তাহলে আশা করি লক্ষ্য পূরণ হবে। আমাদের কোনোরকম তাড়াহুড়ো করা চলবে না। উইকেটে যতক্ষণ পারা যায় ততক্ষণ পড়ে থাকলেই জয়ের দেখা মিলবে।’

অন্যদিকে ইংলিশদের চোখে মুখেও জয়ের নেশা। ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড খেলা শেষে সোজা বলে দিয়েছেন, ‘আমাদের সম্ভাবনাই বেশি। কারণ ম্যাচ জেতাতে দুটি ভালো বলই যথেষ্ট। আমাদের দুটি ভালো ডেলিভারি আর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দুটি ভুলই ম্যাচ আমাদের হয়ে যেতে পারে। এখন দু’পক্ষের কার লক্ষ্যপূরণ হয় সেটাই দেখার।’

আসলে ক্রিকেট এমনই। কখন কোথায় কি ঘটে যায়? আগাম বলা কঠিন। বার বার বলা হচ্ছে, যে কোনো উইকেটেই চতুর্থ ইনিংসে ২৮৬ রান করে জেতা খুব কঠিন। আর সেটা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের এবারের টার্নিং ও রহস্যময় পিচে বলে, সংশয়ের মাত্রাটা বেড়ে দ্বিগুণ হলো!

বাংলাদেশ জিতবে- এমন আশাবাদীর সংখ্যা খুব কমই ছিল। বরং নৈরাশ্যবাদীর সংখ্যাই বেশি ছিল। অনেকের মুখেই শোনা গেছে, আরে এ উইকেটে তিনশর কাছাকাছি রান করা কি চাট্টিখানি কথা! প্রায় দুদিন খেলা বাকি তাতে কি? ঘূর্ণি উইকেট, বল মাটিতে পড়ে লাটিমের মত ঘুরছে, একবার এদিক তো আরেকবার ওদিক যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো সময় আচমকা লাফিয়ে উঠছে- যেখানে দাঁড়িয়ে থেকে উইকেট রক্ষা করাই দায়, সেখানে টার্গেট তাড়া করে জেতা খুব কঠিন।

যাদের এমন চিন্তা ছিল, তাদের মাথায় আরও বেশি নেতিবাচক চিন্তার জন্ম দিয়েছে ইতিহাস-পরিসংখ্যান। টেস্টে এমনই বাংলাদেশের রেকর্ড খারাপ। সাফল্য হাতেগোনা। তার ওপর চতুর্থ ইনিংসে টেস্ট জয় মোটে দুটি।

চতুর্থ ইনিংসে এর আগে আড়াইশ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডও নেই। টাইগারদের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করার রেকর্ডটি  ২০০৯ সালের ১৭-২০ জুলাই সেন্ট জর্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ওই ম্যাচে ২১৫ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ।

সেই দল এমন কঠিন উইকেটে ২৮৬ রান করে ফেলবে- এমন আশাবাদীর সংখ্যা তো কমই হবার কথা। সত্যি কমই ছিল। তারপরও যারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তাদের বড় অংশ তাকিয়ে ছিলেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটের দিকে।

তারা মনে মনে একটা ফর্মুলাও তৈরি করে ফেলেছিলেন। সে ফর্মুলা ছিল এমন; তামিম শুরুতে একটা ভীত গড়ে অনেক দূর এগিয়ে দেবেন। আর মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে সাকিব হাল ধরবেন এবং জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেবেন।

কিন্তু তা যখন হয়নি, তখন আশাবাদীর সংখ্যা কমে নৈরাশ্যবাদীর সংখ্যা বাড়ল আরও। তামিম ৯ আর সাকিব ২৪ রানে ফিরলেন। তখন অতিবড় বাংলাদেশ সমর্থকও প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারপর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম হাল ধরে এগিয়ে দিলেন খানিকটা পথ।

কিন্তু ভাঙ্গা উইকেটে আচমকা লাফিয়ে ওঠা বল তার লড়াকু ইনিংসের ইতি টানলে প্রায় পরাজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। তবে মরা গাঙ্গে বাণ ডাকার মত শেষ সেশনে গিয়ে ত্রাণকর্তার ভূমিকা নিলেন সাব্বির রহমান।

অভিষেকে সাহস-ধৈর্যের মিশেলে দারুণ ব্যাটিং করলেন তরুণ সাব্বির। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে আশা জাগিয়ে স্টোকসের রিভার্স সুইংয়ের মুখে বড় ইনিংস খেলতে না পারলে দ্বিতীয় ইনিংসে সাব্বিরের ব্যাট যেন আস্থার প্রতিমূর্তি। তার হাত ধরেই জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।  

প্রায় তিন ঘণ্টা (১৭৮ মিনিট) উইকেটে কাটিয়ে ৯৩ বলে ৫৯ রানে নটআউট সাব্বিরই এখন বাংলাদেশের আশার প্রদীপ। রাজশাহীর ২৪ বছর বয়সী এ যুবাই কী পারবেন সাহসী নাবিকের মত দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে?  

এআরবি/আইএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।