২৭৩ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশকে বড় লক্ষ্যই বেধে দিতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ২৭৩ রানে এগিয়ে রয়েছে সফরকারীরা। তৃতীয় দিন শেষে, দ্বিতীয় ইনিংসে আট উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান সংগ্রহ করেছে তারা। স্লো উইকেটে চতুর্থদিন বড় চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে টিম বাংলাদেশের জন্য।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে মাত্র ২৪৮ রানে বেধে রেখে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে খাবি খেলেও, বলা যায় জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নিয়েছে তারা। বিশেষ করে বেয়ারেস্টো এবং বেন স্টোকসের ১২৭ রানের জুটিই বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। এই জুটিই ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন করে দিয়েছে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের চেয়ে ৪৫ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট খেলতে নামা অ্যালিস্টার কুক। অভিষিক্ত মিরাজের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি (১২)।
এরপর ইংলিশ শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব। জো রুটকে (১) এলবিডব্লিউয়ে ফাঁদে ফেলেন এ বাঁ-হাতি। নিজের পরের ওভারেই মুমিনুলের তালুবন্দি করে ডাকেটকে (১৫) সাজঘরে ফেরান সাকিব। ফলে ২৮ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েই মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় ইংলিশরা।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর সে চাপ বাড়িয়ে তোলেন তাইজুল ইসলাম। তার বলে ইমরুল কায়েসের দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাজঘরে ফিরে যান গ্যারি ব্যালান্স (৯)। এরপর ইংলিশদের প্রথম ইনিংসের সেরা ব্যাটসম্যান মঈন আলি দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন। তবে সাকিবের বলে সুইপ করতে গিয়ে মঈনের (১৪) গ্লাভস ছুঁয়ে আসা বল ঝাঁপিয়ে নিজের তালুবন্দি করেন মুশফিক।
এর আগে একবার সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান মঈন। সাকিবের বলেই শর্ট লেগে থাকা মুমিনুল হককে ক্যাচ দিলেও বল তার হেলমেটের গ্রিল স্পর্শ করায় সে যাত্রায় বেঁচে যান মঈন। ভাগ্যবান মঈন এর আগে প্রথম ইনিংসেও পাঁচ রিভিউতে জিতেছিলেন।
মঈন আউট হওয়ার পর ৬ষ্ঠ উইকেটে বেন স্টোকসের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন জনি বেয়ারস্টো। ১২৭ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে ইংলিশদের বড় লিড এনে দিয়ে সাহায্য করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ভয়ংকর হয়ে ওঠা এ জুটি ভাঙ্গেন অভিষিক্ত কামরুল ইসলাম রাব্বি। তার বলে ব্যাটে লেগে বোল্ড হয়ে যান জনি। আউট হবার আগে ৯৫ বলে ৬টি চারে ৪৭ রান করেন তিনি।
এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওয়ানডে সিরিজের ম্যান অব দ্যা সিরিজ বেন স্টোকস। তবে আউট হবার আগে বাংলাদেশকে ভুগিয়েই ছাড়ছিলেন তিনি। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে এ বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন সাকিব। ১৫১ বলে ৮৫ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন স্টোকস। এ রান করতে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা মেরেছেন এ অলরাউন্ডার।
স্টোকসের বিদায়ের পর আদিল রশিদকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে এদিন পাঁচ উইকেটের কোটা পূরণ করে ফেলেন সাকিব। রশিদ রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গেলে ব্যাট ফাঁকি দিয়ে প্যাডে লাগে বল। জোরালে আবেন করেন সাকিব। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন তিনি। তাতেই বাংলাদেশের পক্ষে সিদ্ধান্ত গেলে অষ্টম উইকেটের পতন হয় ইংলিশদের।
বাংলাদেশের পক্ষে ৭৯ রানে ৫টি উইকেট নিয়েছেন সাকিব। এছাড়া মিরাজ, রাব্বি ও তাইজুল ১টি করে উইকেট নেন।
এর আগে শনিবার আগের দিনের ২২১ রান নিয়ে তৃতীয় দিন ব্যাট শুরু করে বাংলাদেশ। দিনের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। মঈন আলির বলে ডাউন দ্য উইকেট এসে মারতে গেলে বল মিস করেন সাকিব। আর তাকে সহজেই স্ট্যাম্পিং করেন ইংলিশ উইকেটরক্ষক বেয়ারস্টো। ৬৮ বলে ৩১ রান করেন এ অলরাউন্ডার।
সাকিবের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নাইটওয়াচম্যাচ শফিউল। আদিল রশিদের বলে বিগ শট নিতে গিয়ে স্টুয়ার্ট ব্রডের হাতে মিডঅনে ক্যাচ তুলে আউট হন তিনি। এরপর অভিষিক্ত মিরাজও বিদায় নেন দ্রুতই। বল হাতে জ্বলে উঠলেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন তিনি। স্টোকসের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে ব্যক্তিগত ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন এ নবীন।
এক ওভার পরে ফিরে যান এই টেস্টের বাকি দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটার সাব্বির রহমান ও কামরুল ইসলাম রাব্বিও। এ দুই নবীনকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ২৪৮ রানে গুটিয়ে দেন বেন স্টোকস। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় সাব্বিরের ৩২ বলে ১৯ রানের ইনিংস। দুই বল পরে শূন্য রানে বোল্ড হন রাব্বি।
ইংল্যান্ডের পক্ষে ২৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়েছেন বেন স্টোকস। ৭৫ রানে ৩টি উইকেট নেন মঈন আলি। এছাড়া আদিল রশিদ ২টি ও গ্যারেথ বাটি ১টি উইকেট পান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস) : ২৯৩/১০, ১০৫.৫ ওভার (মঈন আলি ৬৮, জনি বেয়ারেস্টো ৫২, জো রুট ৪০, ক্রিস ওকস ৩৬, আদিল রশিদ ২৬; মেহেদী হাসান মিরাজ ৬/৮০, সাকিব আল হাসান ২/৪৬, তাইজুল ইসলাম ২/৪৭)।
দ্বিতীয় ইনিংস : ২২৮/৮, ৭৬ ওভার (বেন স্টোকস ৮৪, জনি বেয়ারেস্টো ৪৭, বেন ডাকেট ১৫; সাকিব ৫/৭৯, মিরাজ ১/৫৪, রাব্বি ১/২৪, তাইজুল ১/৪০)।
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস) : ২৪৮/১০, ৮৬ ওভার (তামিম ইকবাল ৭৮, মুশফিক ৪৮, মাহমুদুল্লাহ ৩৮, সাকিব আল হাসান ৩১, সাব্বির রহমান ১৯; বেন স্টোকস ৪/২৬, মঈন আলি ৩/৭৫, আদিল রশিদ ২/৫৮, গ্যারেথ ব্যাটি ১/৫১)।
আরটি/আইএইচএস/আরআইপি