রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনলেন মিরাজ


প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৬

এদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রার এক দক্ষ সেনানি আব্দুর রাজ্জাক রাজ। এই তো বছর দুয়েক আগেও  টিম বাংলাদেশের এক নম্বর স্পেশালিস্ট স্পিনার ভাবা হতো তাকেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার আগে ২০০ উইকেট শিকারের দুর্লভ কৃতিত্বটিও খুলনার এ বাঁ-হাতি স্পিনারের।

সমসাময়িক ক্রিকেটার বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রিয় বন্ধু। আর ছোটদের রাজ ভাই; কিন্তু হায়! খেলা না ছেড়ে মাঠে থেকেও নেই রাজ্জাক। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল পারফর্ম করার পরও জাতীয় দলে এখন অবহেলিত তিনি।

বয়স হয়ে গেছে- এই ধুয়ো তুলে তাকে রাখা হয়েছে বাইরে; কিন্তু বাইরে রাখতে চাইলেই কি আর কাউকে আড়াল করে রাখা যায়? যার মধ্যে প্রজ্ঞা ও মনন আছে, তাকে যে ঢেকে রাখা কঠিন। কোন না কোনভাবে তার দ্যুতি-আলো ছড়াবেই।

এই যে আজ বল হাতে স্পিন জাদুতে মাঠ মাতালেন যে ১৯ বছরের যুবা, সেই মেহেদী হাসান মিরাজের মুখেও আব্দুর রাজ্জাক রাজের অকুন্ঠ প্রশংসা। মিরাজ মনে করেন, রাজ্জাকের পরামর্শ তার দারুণ কাজে লেগেছে।

আজ দিনের খেলা শেষে প্রশ্ন উঠল, একজন ১৯ বছরের যুবক হয়েও টেস্ট অভিষেকের প্রথম দিন ৩৩ ওভার বোলিং করলেন। এটা কিভাবে সম্ভব? এর উত্তর দিতে গিয়ে রাজ্জাকের কথা টেনে আনলেন মিরাজ।

বয়স ভিত্তিক দলের কোচ সোহেল ইসলামের পাশাপাশি আব্দুর রাজ্জাক রাজের কথাও বললেন তিনি। মিরাজের কথায় পরিষ্কার, আজ তিনি যে একটানা দীর্ঘক্ষণ বোলিং করেছেন এবং নিখুঁত লাইন ও লেন্থে যতটা সম্ভব এক জায়গায় বল ফেলে গেছেন, সেটা রাজ্জাকের পরামর্শেই।

তাই তো সোজা জানিয়ে দিলেন, ‘এক টানা লম্বা স্পেল বল করা এং সারা দিনে ৩০-৩৫ এমনকি কখনো ৩৭-৩৮ ওভার একটানা বল করা রাজ ভাই (রাজ্জাক) আমাকে শিখিয়েছেন, ‘রাজ ভাইকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি যখন খুলনার হয়ে ন্যাশনাল লিগ খেলেছি, তখন তিনি আমাকে অধিনায়ক হিসেবে অনেক গাইড করেছেন। এমনকি জাতীয় দলে সুযোগ পাবার পরও আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে একটা কথাই বলেছেন,  যে ঘরের ক্রিকেটে লংগার ভার্সনে যে জিনিসটি করেছিস, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ঠিক সেটাই করবি। ওখানে ৩০-৩৫ ওভার বল করবি, এক জায়গায় বল ফেলার চেষ্টা রাখবি। কোনো ভেরিয়েশন আনার কথা ভাববি না। তার দরকারও নেই। খালি এক জায়গায় বল ফেলবি। রাজ ভাই আরও বলেছেন, তুই যদি এক জায়গায় বল করে যাস, তাহলে তোর বল সহজে  খেলতে পারবে না। এটা মাথায় নিয়ে কাজ করছি।’

কোচের কথা বলতে গিয়ে মিরাজ বলেন, ‘রাজ ভাইও বলছে, আমার কোচও একই কথা বলছে। সোহেল স্যার, আমার নিজের যে ব্যক্তিগত কোচ আছে সেও একই কথা বলছে। জায়গামত বল করতে হবে। ভাল জায়গায় বল করলে ব্যাটসম্যানের জন্য খেলা কঠিন।’

প্রথম দিন ৩৩ ওভার বোলিং করা দেখে অনেকেই অবাক! কিন্তু মিরাজের কথা শুনে ও শরীরি অভিব্যক্তি দেখে মনেই হলো না এটা কোন বড় কিছু। তার ভাষায়, সারা দিন ৩০-৩৫ ওভার বোলিং করা আসলে অভ্যাসের বিষয়। জাতীয় লিগে তো তার অত বেশি ওভার বল করার অভ্যাস আছে।

তা জানিয়ে মিরাজ বলেন, ‘মানুষ অভ্যাসের দাস। আমি যখন ন্যাশনাল লিগ খেলেছি তখন রাজ ভাই আর আমি দুজন দুই পাশ থেকে ৩০-৩৫ এমনকি কখনো ৩৮ ওভার বোলিংও করেছি। ওখান থেকে এত বেশি ওভার বল করার অভ্যাস হয়ে গেছে। সেই বোলিং করার অভিজ্ঞতা আমাকে অনেকটা সাহায্য করেছে। ভিতরে বোধ-বিশ্বাস জন্মেছে, যে আমার ৩০-৩৫ ওভার বোলিং করার সামর্থ্য আছে। সেই আত্ববিশ্বাসটা আজ টেস্টের প্রথম দিন কাজে লেগেছে।’

যাকে নিয়ে মিরাজের এত কথা, সেই আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন মিরাজ নিজ মেধা, যোগ্যতায় আজকের জায়ায়। দুই বছর আগে জাতীয় লিগে খুলনার হয়ে খেলার সময়ই মিরাজকে প্রথম দেখেন রাজ্জাক।

তার ভাষায়, প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছে, ছেলেটার মেধা আছে। সাহসী। পরিণত মস্তিস্কের। ক্রিকেট বুদ্ধিটা খুব প্রবল ও তীক্ষè। কখন কোথায় কি করতে হবে- এসব মনে হয় আগে থেকেই জানা।’

রাজ্জাক একটুও বাড়িয়ে বলেননি। আজ প্রথম দিনের বোলিং দেখেও যে তাই মনে হলো!

এআরবি/আইএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।