‘খারাপ লাগার কথা বলে বোঝাতে পারবো না’


প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০১৬

তিনি নিজেকে খানিকটা দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। তার অনেক পরে দলে এসে কেউ কেউ নায়কের আসনে বসে গেছেন। মাঝে এনামুল হক বিজয় আর নিকট অতীতে সৌম্য সরকার ছিলেন পাদপ্রদীপের আলোয়; কিন্তু তার আর হিরো হওয়া হয়নি।

ইমরুল কায়েস এখনো পার্শ্ব চরিত্রেই রয়ে গেছেন। অথচ নায়ক হবার যথেষ্ট যোগ্যতা এবং কৃতিত্বও অর্জনে আছে তার। মেহেরপুরের ২৯ বছর বয়সী ইমরুলের একদিনের সীমিত ওভারের ফরম্যাটে এমন এক অর্জন আছে, যা নেই বাংলাদেশের আর কারো। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি এক বিশ্বকাপে পর পর দুই দুই ম্যাচের সেরা পারফরমার।

২০১১ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে পর পর দুই খেলার ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন এ বাঁহাতি ওপেনার। ইতিহাস জানাচ্ছে বাংলাদেশের দু’জন মাত্র ক্রিকেটার এক বিশ্বকাপে দুই খেলায় ম্যাচ সেরার পুরষ্কার পেয়েছেন।

যার প্রথম জন মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০৭ সালে বার্মুডা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ সেরা পারফরমারের পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। দ্বিতীয়জন হলেন ইমরুল কায়েস। এমন বড় সড় অর্জনের পরও দলে জায়গা অপরিহার্য্য হয়ে ওঠেনি তার জন্য। বার বার ছিটকে পড়তে হয়েছে তাকে।

হঠাৎ এক ম্যাচ খারাপ খেললেই ড্রপ। আবার কখনো বা এক সিরিজে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেই পরের সিরিজে স্কোয়াডের বাইরে চলে যাওয়া। খুব বেশি দুর যেতে হবে না। এইতো কদিন আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ৩৭ রান করার পরও প্রথম একাদশ থেকে ছিটকে পড়েছিলে তিনি। বাকি দুই ম্যাচে আর সুযোগ পাননি।

সে দুঃখ ঘোচাতেই হোক, কিংবা নিজের মেধা-প্রজ্ঞার জানান দেয়ার তাড়া অনুভব করেই হোক- বিসিবি একাদশের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯১ বলে ১২১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে ফেলেছেন ইমরুল।

অনেকেরই ধারনা, গা গরমের ম্যাচে মাঠ গরম করে শুক্রবার ইংলিশদের সাথে প্রথম ওয়ানডেতে আবার ১১ জনের দলে ফিরবেন ইমরুল।

এই যে যাওয়া-আসার পালায় পড়ে থাকা, তার পরে এসে কারো কারো নায়ক বনে যাওয়া আর নিজে এখনো পার্শ¦ চরিত্রে থেকে যাওয়া- এসব কেমন লাগে? বার বার বাদ পড়ে আবার ফিরে আসার সংগ্রামের কাহিনীই বা কী?

বৃহষ্পতিবার বিকেলে জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে সে সব কথাই খোলাখুলি বলেছেন ইমরুল কায়েস।  আসুন শোনা যাক তার সে একান্ত আলাপচারিতাগুলো-  

Imrulপ্রশ্ন : এখন পর্যন্ত পার্শ চরিত্রে রয়ে যাওয়ায় নায়ক হতে পারেননি। কেমন লাগে?
ইমরুল: হ্যা খারাপ লাগে তো অবশ্যই। কষ্ট হয়। দুঃখ পাই। যখন দেখি আমার পরে দলে ঢুকেও কেউ কেউ এক বছরে হিরো হয়ে যাচ্ছে। তখন খারাপ লাগার মাত্রাটা একটু বেশিই হয়। তবে আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না। মনে হয় ভাগ্যদোষেই এমন হয়। আমার বোধ হয় ভাগ্যটাই খারাপ। তারপরও এই ভেবে সান্তনা খুঁজি, যাক কিছু দিন পর হলেও দেশের হয়ে তো খেলতে পারছি। সেটাই বা কম কী?’

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে পর পর দুই খেলায় ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ, তারপরও সে অর্থে দলে জায়গা পাকাপোক্ত হয়নি আপনার। কেমন লাগে?
ইমরুল: অবশ্যই খারাপ লাগে। আমার নিজ সম্পর্কে মূল্যায়ণ, আমি যত দিন খেলছি, মনে হয় না খুব খারাপ খেলছি। ভালোর মাত্রা বেশি। খারাপ খেলেছি কম।’

প্রশ্ন : আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে ৩৭ করার পরও পুরো সিরিজে বাইরে। কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ইমরুল : শুধু ঐ ম্যাচের কথা বলবেন কেন? একদিনের ফরম্যাটে আমার শেষ তিন ম্যাচের স্কোর দেখেন। আমি ভাল খেলেছি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম খেলায় ৩৭ করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে বাদ পড়ার কথা কল্পনায়ও আসেনি। আমি কনফিডেন্ট ছিলাম। অথচ দেখলাম পরের দুই ম্যাচে ড্রপ! এই খারাপ লাগার কথা বলে বোঝাতে পারবো না। তবে এই ভেবে সান্তনা খোঁজার চেষ্টা করি যে, হয়তো বা আমাদের ক্রিকেটের স্ট্যান্ডার্ট অন্য জায়গায় চলে গেছে। টীম ম্যানেজমেন্টের প্রত্যাশা আরও বেশি।’  

প্রশ্ন : ৩৫-৪০ করার পরও যখন তখন বাদ পড়ছেন। তখন কি প্রতিটি ম্যাচকেই শেষ ম্যাচ মনে হয়?
ইমরুল : আগেও বলছি আমার কাছে মনে হয় প্রত্যেকটা ম্যাচই শেষ ম্যাচ। ধরেই নেই যে- এই আছি, এই নেই। বলতে পারেন, গা সওয়া হয়ে গেছে।’   

প্রশ্ন: এমন মানসিক উৎপীড়ন নিয়ে খেলেন কি করে?   
ইমরুল : এটা যে কত বড় মানসিক যন্ত্রণা! বলে বোঝানো যাবে না। এ পরিস্থিতিতে যে না পড়েছে, সে ছাড়া আর কেউ জানে না। আমি আর আমার আল্লাহই জানেন কেমন লাগে? তবে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যতবারই ঢুকেছি, ভেবেই নিয়েছি এটাই সম্ভবত আমার শেষ ম্যাচ।’

প্রশ্ন : প্র্যাকটিস ম্যাচে ঝড়ো শতকের পর একাদশে সুযোগ পাবার বিষয়ে কতটা আশাবাদী? কেউ কেউ বলে ইমরুল টেস্টে যতটা লম্বা খেলে ওয়ানডেতে ততটা পারেন না। আপনিও কি তাই মনে করেন?
ইমরুল : ‘যারা সমালোচক তারা সমালোচনা করবেনই। আমি এসব নিয়ে চিন্তা করি না। একটা ক্রিকেটার সব সময় সেঞ্চুরি পায় না। তার মানে এই নয় যে, সে সেঞ্চুরি করতে পাওে না। আসলে সেঞ্চুরি বড় কথা নয়। মূল কথা হলো লম্বা ইনিংস খেলা। এটা অনেকাংশে বেশী ম্যাচ খেলার ওপর নির্ভর করে। যে যত বেশি সময় দলে নিয়মিত থেকে বেশি ম্যাচ খেলবে, তার সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও তত বেশি থাকে। দলে জায়গা পোক্ত হয়ে গেলে বড় ইনিংস খেলা সহজ হয়।’

প্রশ্ন : প্র্যাকটিসে অমন ঝড়ো শতকের পর ১১জনে থাকার বিষয়ে নিশ্চয়ই আশবাদী?
ইমরুল : আশা করছি খেলবো। ১১ জনে থাকার বিষয়ে আমি ১০০% আশাবাদী।

প্রশ্ন : পাঁচ বছর আগে এই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন। শুক্রবার সুযোগ পেলেও কি অমন বড় কোন কিছু করার চিন্তা আছে?
ইমরুল : সেভাবে বললে নেই। কারণ আমি টার্গেট সেট করে খেলি না। টার্গেট নিয়ে খেলতে নামলে প্রেসার চলে আসে। পারফরমেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি চাই ব্যাটিংটা এনজয় করতে। যা পারি, তা করার চেষ্টা থাকবে। জানি ও বুঝি- আমি চাইলেও তামিম ইকবাল হতে পারবো না। আমি ইমরুল কায়েস হয়েই থাকতে চাই।’

এআরবি/আইএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।