জলছে বাংলাদেশ : ইকোনোমিস্ট


প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

লাগাতার অবরোধ-হরতাল আর অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যমে এখন গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী ‘দি ইকোনমিস্ট’ তিনদিন আগেই এক বিশ্লেষণ হাজির করে। আজও পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে। শনিবার এটি সাময়িকীর ছাপা সংস্করণেও প্রকাশিত হবে। প্রতিবেদনটির অনুবাদ তুলে ধরা হলো-

উত্তরবঙ্গের রিকশাচালক অমূল্য চন্দ্র বর্মণ বাড়ি ফেরার জন্য বাসে উঠিছিলেন। তবে বাড়ি আর ফেরা হয়নি, শেষ পর্যন্ত তাঁর ঠিকানা হয়েছে একটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। যে বাসে করে তিনি যাচ্ছিলেন সে বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছোড়া হয়। বোমাটি তাঁর কোলে রাখা ব্যাগের ওপর এসে পড়ে এবং মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে যায় তার মুখ এবং দুই হাত। সেই সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ব্যাগে রাখা তাঁর জমানো অর্থ। তবুও তাঁর ভাগ্য ভালো বলতে হবে। কেননা তিনি তো অন্তত বেঁচে আছেন। কেননা গত সপ্তাহেই বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে একটি বাসে বোমা হামলায় আটজন মারা গেছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকে এক মাস ধরে চলা অবরোধ দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত বোমা হামলায় অন্তত ৬০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন।

বিএনপির নেতা খালেদা জিয়া তাঁর ঢাকার একটি অফিসে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছেন। সেইসঙ্গে তাঁর নির্দেশে দেশটির সড়ক, নৌ ও রেলপথে অবরোধ চলছে। এ ছাড়া গতসপ্তাহে বিএনপির ডাকে সারা দেশে হরতালও পালন করা হয়েছে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘প্রহসনের’  নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি করতে না দেওয়া থেকেই এই পরিস্থিতির সূত্রপাত। বিরোধীদলের অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে পুননির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে সারা দেশ থেকে ১০ হাজারেরও বেশি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। বিএনপির বেশিরভাগ নেতাই জেলে রয়েছেন নয়তো নির্বাসিত বা পলাতক জীবন যাপন করছেন। গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার বর্তমান বাসস্থানের (রাজনৈতিক কার্যালয়) বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দিয়ে অবরোধ তুলে নিতে এক ধরনের চাপ দেয় সরকার। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, পুরো বিষয়টার শেষ দেখতে চান খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশের বড় দুই দলের নেতা দুই ‘কলহরত বেগম’ এর মধ্যকার পারস্পরিক বিবাদের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। গত প্রায় ২৫ বছর ধরে এই দুই নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অদল বদল করে অবস্থান করছেন। ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ বিএনপির জন্য আবারও ক্ষমতাগ্রহণকে প্রায় অসম্ভব করে দিয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন হলেও সে ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি জোটের সবচেয়ে বড় অংশীদার জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলে বিএনপি নেতাদের আরো কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। এখন দেশব্যাপী নাশকতা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে বিএনপির কর্মকাণ্ড বলে দাবি করছে সরকার। এদিকে বিরোধী পক্ষ বলছে, সরকার দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছে। মোটকথা দুই পক্ষেরই নিজেদের কথার পেছনে যুক্তি আছে।

এই দুই বেগমের মধ্যকার ব্যক্তিগত বিদ্বেষ জয়ীরাই সব পাবে- এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে অভ্যাসগতভাবে কারচুপির অন্তসারশূন্য নির্বাচন বিরোধী দলকে রাজপথে ঠেলে দেয়। মনে হচ্ছে, বেগম জিয়া এখন দেশকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে চান যেন সেনাবাহিনী স্বেচ্ছায় হস্তক্ষেপ করে। যদিও এখনো তারা হস্তক্ষেপ করতে অনিচ্ছুক। সেনাবাহিনী তাদের মর্যাদার কথা ভাবছে। একই সঙ্গে দেশের পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করলে যদি পশ্চিমারা নাখোশ হয়ে যায় কিংবা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যোগ দিতে কোনো সমস্যা হয় সেটা ভাবছে। ২০০৭ সাল থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য সেনাসমর্থিত ‘অনির্বাচিত’ সরকারের সময় আসলে বাংলাদেশের রাজনীতি একপ্রকারের বন্দি অবস্থায় ছিল।

যদিও বিএনপির ডাকা অবরোধ, হরতাল, সহিংসতা ও নাশকতা দেখে মনে হচ্ছে শিগগিরই হয়তো সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী হবে। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে এতে শুধু সাধারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা হবে না বরং সরকার একটি রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হবে। অন্যভাবে বলতে গেলে, তারা নির্বাচন দিতে অনিচ্ছুক। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। যেভাবে রিকশাচালক বর্মণ বলছিলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোনো রাজনৈতিক দল করি না...তারপরও দুই দলের সংঘর্ষে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।