আফগান-ইংলিশদের বিপক্ষে স্পোর্টিং উইকেট!


প্রকাশিত: ০৭:৪৯ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ইংলিশবধে ‘স্পিন’ই হতে পারে বাংলাদেশের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। কেউ কেউ এমনটাই ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। যদিও ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গত বছর বিশ্বকাপে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক কোনো স্পিনার নন।

একজন পেসার। রুবেল হোসেন। তার দু’দুটি এক্সপ্রেস ডেলিভারিতেই নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচভাগ্য, সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাস। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ এডিলেডে দুই ইংলিশ ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডরসনের উইকেট উপড়ে বাংলাদেশকে ১৫ রানের রানের দারুণ এক জয় এনে দিয়েছিলেন তো পেসার রুবেলই।

তারপরও বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের একাংশর ধারণা ও বিশ্বাস, ঘরের মাঠে ইংলিশদের বিপাকে ফেলতে হলে, স্পিনাররাই হতে পারেন মোক্ষম অস্ত্র। তাই ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ হতে পারে ‘স্লো এবং লো’ ট্র্যাকে।

সমর্থকরা চাইলেই তো আর হবে না! ইংল্যান্ডের সঙ্গে কৌশল কী হবে? স্পোর্টিং না স্পিন ট্র্যাক, কোন ধরনের পিচ বালাদেশের জন্য সহায়ক? তা ঠিক করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। মূলত অধিনায়ক ও কোচ বসেই লক্ষ্য ও পরিকল্পনা আঁটেন। সে আলোকেই ঠিক করা হবে কোন ধরনের পিচে খেলা হবে?

একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশ শুধু স্লো উইকেটেই ভালো খেলতো। বাংলাদেশের সাফল্যের স্বর্গ বলতে বোঝাতো স্লো এবং লো ট্র্যাককেই। ঘরের মাঠে এক পেসার আর চার-চারজন স্পেশালিস্ট স্পিনার নিয়ে খেলার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। এক সঙ্গে তিনজন বাঁ-হাতি স্পিনার খেলার নজিরও অনেক।

তবে সময়ের প্রবাহমানতায় স্পিননির্ভরতা কমে গেছে অনেক। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য বেড়েছে। স্পিনারদের পাশপাাশি পেসাররাও পেয়েছেন বেশ গুরুত্ব। ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে, গত বছর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রতিম্যাচেই অন্তত তিন পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছে।

শুধু ওই আসরেই নয়, তার আগে ও পরে দেশে এবং বিদেশে বেশ কিছু ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ পেসারদের হাত ধরেই। এই তো তিন বছর আগে, ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর শেরেবাংলায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বল হাতে আগুন ঝরান পেসার রুবেল হোসেন। ২৫ রানে ৬ উইকেট দখল করে ম্যাচ জয়ের নায়ক বনে যান বাগেরহাটের এ পেসার।

এরপর গত বছর ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো তিন পরাশক্তির বিপক্ষে যে অবিস্মরণীয় সাফল্য ধরা দেয়, সেটাও শুধু স্পিনারদের হাত ধরে নয়। পেসাররাই রেখেছেন সবচেয়ে বেশি অবদান। চারজন পেসার নিয়ে খেলতে নেমে তো বাংলাদেশ রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল।

সবচেয়ে বড় কথা, ভারত, পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকা- কোনো দলের বিপক্ষেই বাংলাদেশ স্পিন-সহায়ক উইকেটে খেলেনি। খেলা হয়েছে স্পোর্টিং উইকেটে। গতি ও বাউন্স দুই’ই ছিল ভালো। বল দ্রুত ব্যাটে এসেছে। বাউন্সও ছিল ভালো। এতে করে বরং বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরই লাভ হয়েছে বেশি।

ভেতরের খবর হচ্ছে, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও বাংলাদেশ স্পোর্টিং উইকেটে খেলার কথা ভাবছে। বিসিবির গ্রাউন্স কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভুঁইয়ার কণ্ঠে তারই ইঙ্গিত।

সোমবার রাতে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এখন আমাদের জন্য স্পোর্টিং উইকেটই সবচেয়ে ভালো। এক সময় আমাদের বোলিং ছিল স্পিননির্ভর। স্পিনকেন্দ্রিক মানসিকতাও ছিল; কিন্তু সময় তা বদলে দিয়েছে। এখন আমাদের পেসার ও ব্যাটসম্যানরাও বুক চিতিয়ে লড়ছে। বিশ্ব মানের বোলিংয়ের বিপক্ষে তামিম, সৌম্য, মুশফিক ও সাকিবের ব্যাট খোলা তরবারির মতো ঝিলিক মেরে ছাড়ছে। পেসাররা যথেষ্ঠ ভালো করছে। কাজেই আমার মনে হয় আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের সঙ্গেও আমাদের উচিত স্পোর্টিং উইকেটে খেলা।’

বিসিবি গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান তেমন কথা বলতেই পারেন। কারণ, ইতিহাস পরিষ্কার সাক্ষী দিচ্ছে, বাংলাদেশ গত বছর ঘরের মাঠে স্পোর্টিং উইকেটেই সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বিশ্ব শক্তির বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের দুর্লভ কৃতিত্ব কিন্তু ওই স্পোর্টিং উইকেটেই।

টিম বাংলাদেশের বাটসম্যানদের বড় অংশ ফ্রি স্ট্রোক খেলতে পছন্দ করেন। তামিম, সৌম্য, মুশফিক, সাকিব ও সাব্বির- পুরোদস্তুর স্ট্রোক মেকার। স্লো পিচের তুলনায় স্পোর্টিং উইকেটে তারা আরো ভালো খেলেন। বল ব্যাটে আসলে এবং বাউন্সে স্থিতি থাকলে তারা আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা। ব্যাটও হয়ে ওঠে সাবলীল এবং ক্ষুরধার।

তার ছোট্ট উদাহরণ, গত বছর এপ্রিলে পাকিস্তানের সঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজে তামিম, মুশফিক ও সৌম্যর ব্যাটে রানের নহর বয়ে যাওয়া। আর একই সঙ্গে চার-ছক্কার ফল্গুধারা। তিন ম্যাচের সিরিজে আজহার আলীর পাকিস্তান যদিও বাংলাদেশের টিম পারফরমেন্সের কাছে নাকাল হয়, তারপরও সে সাফল্যের মূল রূপকার তিন উইলোবাজ তামিম, মুশফিক ও সৌম্য।

স্পোর্টিং উইকেট পেয়ে তামিম ও মুশফিক দুর্বার হয়ে ওঠেন। বাঁ-হাতি তামিম প্রথম দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি (১৩৫ বলে ১৩২ ও ১১৬ বলে ১১৬) এবং তৃতীয় ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকান (৭৭ বলে ৬৫)। মুশফিকুর রহিমও কম যাননি। তার ব্যাট থেকেও বেরিয়ে আসে একটি শতক ও অর্ধশতক। আর স্ট্রোক খেলা যার নেশা, সেই সৌম্য শেষ ম্যাচে ১১০ বলে ১২৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললে প্রথমবারের মতো টাইগারদের কাছে নাকাল হয় পাকিস্তান।

জুনায়েদ খান, ওয়াহাব রিয়াজ, রাহাত আলী, সাঈদ আজমলের গড়া পাকিস্তানি বোলিং লাইনআপ খড় কুটোর মতো উড়ে যায় তামিম, মুশফিক ও সৌম্যর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। একইভাবে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেও খেলা হয় স্পোর্টিং উইকেটে।

ভারতের সঙ্গে ২-১‘এ সিরিজ বিজয়ের মূল নায়ক অবশ্য বাঁ-হাতি পেসার মোস্তাফিজ। তার অবদানই সবচেয়ে বেশি। প্রথম দুই ম্যাচে (৫/৫০ ও ৬/৪৩) বাজিমাত করা কাটার মাস্টারের জাদুকরি বোলিংয়ে কুপোকাত ভারতের তারকা ব্যাটিং লাইন আপ। তিন খেলায় মোস্তাফিজের ঝুলিতে ১৩ উইকেট জমা পড়লেও তামিম, সৌম্য এবং সাকিবও ব্যাট হাতে রাখেন কার্যকর অবদান। তাতেই ধরা দেয় সাফল্য।

পাকিস্তান ও ভারতের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজে অবশ্য পিচ ততটা স্পোর্টিং ছিল না। গত বছর জুলাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজে শুরুতে হেরেও শেষ পর্যন্ত ২-১‘এ জেতে মাশরাফির দল। শতভাগ স্পোর্টিং পিচে খেলা না হলেও বোলিং আর ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের পারফরমারদের প্রাধান্য ছিল সুস্পষ্ট।

তুলনামূলক লো স্কোরিং গেমে বল হাতে মোস্তাফিজ-সাকিব আর ব্যাটে সৌম্য ও তামিম জ্বলে উঠলে প্রোটিয়ারা হার মানতে বাধ্য হয়। উপমহাদেশের কন্ডিশনে দুই দলকে বধ করা সবচেয়ে কঠিন, সেটা এ কারণে যে, ভারত-পাকিস্তান স্পোর্টিং পিচে পাত্তাই পায়নি। আর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দুর্ধর্ষ দলও কুলিয়ে উঠতে পারেনি।

কাজেই আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হতে বাধা কোথায়! সেটাই তো হতে পারে সাফল্যের স্বর্গ!!

এআরবি/আইএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।