রাজনৈতিক অস্থিরতা : বাড়ছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ


প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্ট অনিশ্চয়তা, পুঁজিবাজারে অস্থিরতা আর ব্যাংকে নানা জটিলতার কারণে এখন ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১৩ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। যা সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বা ৪৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের সর্বশেষ হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা ও পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের অস্থিরতার কারণে দেশের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে মন্দা ভাব। অন্যদিকে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে জমেছে নগদ টাকা। লোকসান এড়াতে এখন ব্যাংকগুলো মেয়াদি আমানতে সুদ হার কমাতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি হওয়ায় মানুষ বেশি মুনাফার আশায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ব্যাংকের পরিবর্তে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন।

তবে সঞ্চয়পত্রের এ ঋণের টাকা সরকারকে সঠিক জায়গায় বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তা না হলে এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।কারণ সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হবে।

সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে এক হাজার ৮৯৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ৬৪৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা, সঞ্চয় ব্যুরোর বিক্রি করেছে ৩৫৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ডাকঘরে ৮৮৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ নভেম্বরে এক হাজার ৪৬৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অক্টোবর মাসে বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ২৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের মাসগুলোতে এর অঙ্ক ছিল যথাক্রমে সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৪৯২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগস্টে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং জুলাইয়ে ছিল এক হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ছয় মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৩৫ কোটি টাকায়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তার কারণে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা। ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর অলস অর্থ পরে রয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো আমানতে সুদ হার কমাচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে একের পর এক জালিয়াতির ঘটনা কারণে সঞ্চয়কারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন সঞ্চয়পত্রে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে মনে করছেন। এ কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ছে। তবে ব্যাংকঋণের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে এখন সরকারকে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। উচ্চ সুদের এ ঋণ নিয়ে সরকারকে ভালো প্রকল্পে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ার কারণে সকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমে এসেছে। ডিসেম্বর শেষে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক (-) ৩৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫ হাজার ১৬৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা।

উল্লেখ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়াতে ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে সুদের হার বাড়ায় সরকার। পরিবার, পেনশনার, তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর ও পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১ শতাংশ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

বর্তমানে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বিদ্যমান রয়েছে।

এসআই/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।