নেইমার এখন জীবন্ত কিংবদন্তী


প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৬

একটি বালক। এরপর তিনি হলেন পরিপূর্ণ মানুষ এবং এখন হয়ে গেলেন কিংবদন্তী। অপেক্ষার পালা অবশেষে শেষ হয়ে গেলো। ট্রফি ক্যাবিনেটও পূর্ণ হয়ে গেলো ব্রাজিলের। তাদের ক্যাবিনেটে কীসের যেন এতদিন একটা শূন্যতা বিরাজ করছিল। অবশেষে সেই শূন্যতাও পূরণ করে দিলেন সেই বালকটি। যে কি না এখন হয়ে গেলেন জীবন্ত কিংবদন্তী। নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়ার। ২৪ বছর বয়সী এই কিংবদন্তীর হাত ধরেই অলিম্পিক ফুটবলে সোনার স্বপ্নের অবসান ঘটলো অবশেষে।

কী ছিল না ব্রাজিলের ক্যাবিনেটে। ৫টি বিশ্বকাপ, ৮টি কোপা আমেরিকা, পাঁচটি কনফেডারেশন্স কাপ এবং ৫টি অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও। এত এত সাফল্য। অথচ, সেই ফুটবল জাতিটিই কি না দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে কেমন বিবর্ণ। এর আগে তো তিনবার ফাইনাল খেলেছিল। সর্বশেষ ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকেও ফাইনাল খেলেছিলো ব্রাজিল এবং নেইমার। তবুও অধরা স্বপ্নটা ধরা দেয়নি হাতে। অখ্যাত মেক্সিকোর কাছে হেরে যেতে হয়েছিল।

সেই আক্ষেপের অবসান ঘটলো টাইব্রেকারের শেষ মূহূর্তে নেইমারের পেনাল্টি শ্যুটআউটের মধ্য দিয়ে। তার শট জালে জড়াতেই ইতিহাস সৃষ্টি হয়ে গেলো ব্রাজিলের। এমন এক দলের বিপক্ষে ইতিহাসটা তৈরী হলো ব্রাজিলের, যারা দুই বছর আগেই একটা লজ্জার ইতিহাস উপহার দিয়েছিল সেলেসাওদের। সেই জার্মানিকে হারিয়েই গৌরবের ইতিহাস জন্ম দিলেন নেইমাররা।

স্বল্প ব্যবধানেই ব্রাজিলের সামনে ছিল দুটি বড় আসর। একটি কোপা আমেরিকার শতবর্ষী টুর্নামেন্ট এবং অন্যটি অলিম্পিক ফুটবল। নেইমারের ক্লাব বার্সা শর্ত দিয়ে দিলো, তাকে পেতে হলে একটিতেই খেলাতে হবে শুধু। না হয়, হবে না। বাধ্য হয়ে ব্রাজিল নেইমারকে সযত্নে রেখে দিল অলিম্পিকের জন্য। এই একটি সোনার পদকের লড়াইয়ের জন্য নিজেদের যক্ষ্মের ধন নেইমারকে আগলে রাখা হলো অলিম্পিকের জন্য।

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা আর ইরাকের বিপক্ষে টানা দুটি ম্যাচ গোলশূন্য  ড্র করার পর নেইমারদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। নারী ফুটবলার মার্তাকে পর্যন্ত নেইমারের চেয়ে সেরা ঘোষণা দিয়ে বসেছিল ব্রাজিলিয়ানরা। এই অপমানের জ্বালা নেইমার নীরবে সয়ে গেছেন। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে জ্বলে উঠেছিল ব্রাজিল। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। সেমিফাইনালে হন্ডুরাসকে ৬ গোলের লজ্জায় ডুবিয়ে ফাইনালে নামা লেখায় নেইমার বাহিনী। এরপর তো ইতিহাসই তৈরী করে ফেললেন তারা।

কোপা আমেরিকার ফাইনাল জিতে না পেরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসেছিলেণ মেসি। নিজ দেশের মিডিয়া এবং এক শ্রেণির দর্শকের সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়ে মেসির এই ঘোষণাটা যেন অবশ্যম্ভাবী হয়েই আসলো। আর নেইমার কী করলেন! সোনা উপহার দিয়েই নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড খুলে ফেললেন। জানিয়ে দিলেন, ব্রাজিলের হয়ে আর কোন পর্যায়েই দলকে নেতৃত্ব দেবেন না। কোচ তিতের জন্য এটা বার্তা যে, তিনি যেন নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নেন।

সাধারণ নেইমারের চেয়ে নেতা নেইমারই সবচেয়ে বেশি সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন। এ কারণেই মূলতঃ নেতৃত্ব থেকে অবসরের ঘোষণা। সে ঘোষণা হয়তো আবেগ থেকে দিতে পারেন; কিন্তু যে আক্ষেপটা ব্রাজিলের অন্য কিংবদন্তীরা ঘোচাতে পারেননি, সেটা ঘুচিয়ে দিলেন নেইমার। কোচ রোজারিও মিকালেও স্বীকিৃতিটা দিয়ে দিলেন। নেইমারের জন্যই অলিম্পিকের সোনা জয় নিশ্চিত হয়েছে। সুতরাং, নেইমার এখন জীবন্ত কিংবদন্তী- এটা বলাটা সম্ভবত আর অপরাধ হবে না।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।