মোস্তাফিজ : দ্য স্পেশাল ওয়ান


প্রকাশিত: ১১:৪৭ এএম, ২৬ জুলাই ২০১৬

বড্ড অস্থির সময় পার করছে বাংলাদেশ। বিদেশিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এদেশ থেকে। সামনের দিকে এগোতে থাকা বাংলাদেশকে অদৃশ্য শক্তি পেছন থেকে টেনে ধরছে! তারপরও বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে সুন্দর আগামীর। সুন্দরের স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখতে পারেন ২০ বছরের তরুণ মোস্তাফিজুর রহমানের মাধ্যমে।

এ মুহুর্র্তে গোটা দেশের সবচেয়ে আদরের সন্তানের নাম সম্ভবত মোস্তাফিজুর। বাংলাদেশের আরেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হচ্ছে, সাতক্ষীরার তরুণ যেন গোটা বাংলাদেশেরই প্রতিধ্বনি। বর্তমানে সাকিব খেলছেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল)। এর আগেও তিনি এখানে খেলেছেন; কিন্তু মোস্তাফিজ যেই না ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে গেলেন, অমনি ঢাকা পড়তে শুরু করলেন সাকিব!

বাংলাদেশ তো বটেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও মোস্তাফিজকে নিয়ে খবর প্রকাশ করতে দারুণ আগ্রহী। অথচ, কিছুদিন আগেও বাংলাদেশকে নিয়ে অতটা আগ্রহি ছিল না তারা। এখন মোস্তাফিজ কাউন্টি খেলতে যাবেন কি না, কবে যাচ্ছেন এসব খবরও গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হচ্ছে।

বোঝাই যাচ্ছে, মোস্তাফিজরা ক্রিকেট বিশ্বের কাছে তাদের মূল্য বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এটা কী শুধু সংবাদমাধ্যমগুলোই বুঝেছে? না, বিদেশি ক্লাবগুলোও বুঝতে পেরেছে, বাংলাদেশের ২০ বছরের তরুণ মোস্তাফিজের দাম কত!

আইপিএলে হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে কাটার মাস্টার ফিরেছিলেন চোট নিয়ে। এরপর তার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলেছে। দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে থাকা মোস্তাফিজও চাইছিলেন আরো কিছুদিন সাতক্ষীরায় মায়ের আঁচলের নিচে থাকতে! এরপর তার ইংল্যান্ড যাত্রা কিছুটা বিলম্ব হয়েছে ভিসা জটিলতায়।

সাসেক্স মোস্তাফিজকে পেতে কতটা ব্যাকুল ছিল সেটা এসেক্সের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচের পরই বোঝা গেছে। এই ম্যাচটি হারলে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যেতে পারতো লুক রাইটের দলের। ২৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজ শুধু সাসেক্সকে জেতালেনই না, টুর্নামেন্টেও টিকিয়ে রাখলেন দলকে।  পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কারও। মোস্তাফিজের অভিষেকের দিনে সাসেক্স জিতেছে ২৪ রানে। তার জন্য এরচেয়ে ভালো অভিষেক আর কী হতে পারে!

মোস্তাফিজ ইংল্যান্ড গেলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। লুক রাইট আগে টেলিভিশনের পর্দায় মোস্তাফিজের বিষাক্ত কাটার দেখলেও এবার দেখলেন সামনাসামনি। ম্যাচশেষে সাসেক্স অধিনায়ক তাই বললেন, ‘ওকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতেই আমাদের ঘাম ঝরাতে হয়েছে। মোস্তাফিজকে মাঠে নামাতে অনেক মানুষকে কষ্ট করতে হয়েছে। এত সময় ধরে তাকে পাওয়ার চেষ্টার ফলটাই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।’

মোস্তাফিজ যে আর দশজন বোলারের মতো নন, সেটা আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন রাইট। তার ভাষায়, ‘ও খুবই স্পেশাল বোলার। মাঠে নেমেই ও যে খেলাটা খেললো সেটা দেখতে পাওয়াও স্পেশাল।’ এটা ঠিক যে, এরইমাঝে মোস্তাফিজের বোলিং সবার মনে এক প্রকার মোহ তৈরি করে ফেলেছে। আইপিএল চলার সময় ক্রিকেট কিংবদন্তিরা বলেছিলেন, মোস্তাফিজের বোলিং দেখতেই ভালো লাগে।

বিশ্বের নামজাদা ব্যাটসম্যানদের কাছে মোস্তাফিজের বোলিং পড়াটা দূর্বোধ্য। সেখানে এক-দুদিনের দেখায় লুক রাইটরা কতটুকুই বা বুঝবেন। তাই মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেওয়ার পরও তিনি বুঝতে পারেন না ফিজ আসলে কী করতে যাচ্ছেন। ইংরেজী ভাষা খুব ভালো না বুঝলেও মোস্তাফিজ ক্রিকেটের ভাষা অন্য যে কারো চেয়ে ভালোই বোঝেন।

Mustafizতাই তাকে বোঝাতে হয় না ব্যাটসম্যানদের কোথায় বলটা ফেলতে হবে। রাইটও এই বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে বলেছেন, ‘ও আসলে কী করতে যাচ্ছে বোঝা মুশকিল। আমরা অনুশীলনে ওর বল বোঝার চেষ্টা করেছি, পারিনি। সত্যি আমরা একজন স্পেশাল প্রতিভা পেয়ে গেছি।’

মোস্তাফিজকে নিয়ে রাইটের যেমন গর্ব হচ্ছে তার চেয়ে বেশি হচ্ছে বাংলাদেশের। সেটা আরো বাড়ছে যখন বিদেশিরা মোস্তাফিজকে বোঝার জন্য বাংলা ভাষার চর্চা করছে- দেখে। আইপিএলে দেখা গিয়েছিল, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মেন্টর ভিভিএস লক্ষ্মণ, অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রেন্ট বোল্ট থেকে শুরু করে কোচ টম মুডি সবাই বাংলা শেখার চেষ্টা করেছেন।

মোস্তাফিজ ইংরেজী কম বোঝেন। ইংরেজীতে কথা বলতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এটাকে কেউ কেউ মোস্তাফিজের দূর্বলতা ভাবতে পারেন; কিন্তু এটাও তো ঠিক, মোস্তাফিজকে দরকার বলেই তো তারা বাংলা শিখছে! এখানে ফিজ ইংরেজী কতটা বলতে পারলো কি পারলো না- সেই হিসাব নিকাশ খুব বেশি কী দরকার আছে?

শুধুমাত্র মোস্তাফিজের কারণে আইপিএলে লক্ষ্মণ-মুডিরা বাংলায় টুইট করেছেন। এটা তো বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য কম গর্বের নয়। সাসেক্সকে মনে হচ্ছে, এই জায়গায় আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে। তারা ফেসবুক পাতায় বাংলায় স্ট্যাটাস দিয়ে মোস্তাফিজের ম্যাচ কখন, কোন সময় হবে সেটা জানিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের সমর্থকদের ধন্যবাদ দিচ্ছে।

যে ইংরেজরা সারা বিশ্বে তাদের ভাষা অর্থাৎ ইংরেজি চাপিয়ে দিয়েছে, তারাই কি না এভাবে বাংলা শেখার চেষ্টা করছে! এটা দেখতে কোন বাংলা ভাষাভাষির ভালো লাগবে না, বলুন! সত্যি, সাতক্ষীরার এক তরুণের হাত ধরে বাংলা ভাষা যেন অন্য মাত্রা পেয়ে গেলো।

কাউন্টিতে মোস্তাফিজই প্রথম নন। তার আগে খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান, উস্টারশায়ারে। তামিম ইকবাল নেমেছিলেন নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে; কিন্তু মোস্তাফিজের মতো এতটা চাঞ্চল্য তারা সৃষ্টি করতে পারেননি। মোস্তাফিজের প্রভাব পড়েছে সাসেক্সের ফেসবুক পাতায়ও। আগে যেখানে তাদের পাতায় খুব কম লাইক পড়তো এখন তা হু হু করে বেড়ে গেছে!

মোস্তাফিজকে শুধু ইংল্যান্ডই খেয়াল করছে তা কিন্তু নয়। যা শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশের কাটার বয়কে টার্গেট করেছে অস্ট্রেলিয়াও। মোস্তাফিজের হায়দরাবাদ কোচ মুডি চোখ রেখেছিলেন সাসেক্স-এসেক্স ম্যাচের দিকেও। ম্যাচ শেষে টুইট করে তার প্রশংসাও করেছেন। তাছাড়া হায়দরাবাদের অধিনায়ক ওয়ার্নার মোস্তাফিজকে নিয়ে যারপনারই মুগ্ধ। সামনে বিগব্যাশ। ধারণা করা হচ্ছে, বিগব্যাশেও মোস্তাফিজকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়বে!

এখন দেখার বিষয় মোস্তাফিজের হালকা শরীর কতটুকু নিতে পারে। এ জায়গায়ই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চোখ রাখা প্রয়োজন যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁসটিকে গলাটিপে হত্যা করা না হয়। কারণ মোস্তাফিজ যে বাংলাদেশেরই বড় এক সম্পদের নাম!

জাগো চ্যাম্পিয়নের অষ্টম সংখ্যা সম্পূর্ণ পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে...

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।