আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত মোসাদ্দেক


প্রকাশিত: ১২:২৬ পিএম, ১৯ জুলাই ২০১৬

পাশের পাড়ার আব্দুল মজিদ এইচপিতে। সমসাময়িক আল আমিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্তরাও সেখানেই; কিন্তু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতই শুধু নেই হাই পারফরমেন্স কোচিং প্রোগ্রামে।
 
এবারের লিগে চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ময়মনসিংহের এ উদ্যমী যুবার জায়গা হয়েছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হোম সিরিজকে সামনে রেখে জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে। তাকে এইচপিতে না রেখে মূল দলের প্রস্তুতি ক্যাম্পে ডাকার মাঝেই রয়েছে একটা বিশেষ বার্তা।

পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের একটা অন্যরকম চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তা থাকাটা অমুলক কিছু নয়। তাকে খুব কাছ থেকে দেখা আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন এবং জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট মনে করেন, ময়মনসিংহের এ সাহসী যুবা এখনই জাতীয় দলে থাকার যোগ্যতা রাখেন।

প্রিমিয়ার লিগ শেষ হবার পর  জাগো নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকাওে ওই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেট যোদ্ধা বলেই ফেলেছেন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে বিশেষ বিবেচনায় আনা যেতেই পারে। তার এখনই জাতীয় দলের হয়ে খেলার সামর্থ্য আছে।’  

অনেকেরই ধারণা, ইংল্যান্ডের সাথে হোম সিরিজে টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টির যে কোন এক ফরম্যাটে মোসাদ্দেককে বিবেচনায় রাখা হতে পারে। যাকে নিয়ে এমন পরিকল্পনার ছক, সেই সৈকতও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্য প্রমানে প্রস্তুত।

তাই তো মুখে এমন আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী সংলাপ, ‘আমি প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরী আমি।’

এ কথা শুনে আবার ভাববেন না যে, এ তরুণ নিজেকে একটু বেশি বড়ই ভাবছেন। আত্মবিশ্বাস ও সামর্থ্যরে প্রতি আস্থাটা বুঝি বয়সের তুলনায় বেশি। আসলে তা নয়। জাতীয় দলে ঢুকতে মোটেই মরিয়া নন তিনি। মূল দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে আসলে তার কোন মাথা ব্যাথাও নেই।

মঙ্গলবার বিকেলে জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে ফুটে উঠেছে সে সত্য- ‘আমি বয়সে নবীন। ক্যারিয়ার সবে শুরু। এখনই জাতীয় দলে ঢুকতে হবে, এমন চিন্তা ও মানসিকতা নেই। হাতে অনেক সময় আছে। আমাকে কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে, সেখানে শেখার থাকবে অনেক কিছু। নিজেকে তৈরীর চেষ্টা করবো।’

সম বয়সী ও সমসাময়িক ক্রিকেটারদের বড় অংশ এইচপি ক্যাম্পে থাকলেও তাকে ইংল্যান্ডের সাথে হোম সিরিজের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ডাকা হতে পারে- এমন বিশ্বাস নাকি আগে থেকেই ছিল, ‘বিশ্বাস করুন, প্রিমিয়ার লিগ শেষেই মনে হচ্ছিল আমাকে আরেকবার পরখ করতে চাইবেন নির্বাচকরা। তাই কন্ডিশনিয় ক্যাম্পে ডাক পেয়ে অবাক হইনি। বরং মনে হয়, আামাকে যোগ্য ভেবেই এখানে রেখেছেন নির্বাচকরা। এই ডাকা পেয়ে আমি আবেগতাড়িত নই। আমার মনে হয় জাতীয় দলে হারানো অবস্থান ফিরে পাবার একটা বড় সুযোগ সামনে।’

জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে আবাহনী ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও খালে মাসুদ পাইলট তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাকে জাতীয় দলে দেখতে আগ্রহী- শীর্ষক জাগো নিউজের ইন্টারভিউও তার চোখে পড়েছে।

এ সম্পর্কে সৈকতের ব্যাখ্যা, সুজন ভাই ও পাইলট ভাইয়ের মত দেশ বরেণ্য ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের অমন মন্তব্যে কে না খুশি হয় বলুন? তাদের কথায় আমি আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি। সাহস-আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে অনেক।’

শুধু ওই দুই সাবেক অধিনায়কের সার্টিফিকেট মিলেছে বলেই নয়। সৈকতের সাহস-আত্মবিশ্বাস বেড়েছে আসলে আবাহনীর হয়ে এবারের প্রিমিয়ার লিগে ভাল খেলার পরই। এ সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ‘আসলে অফ ফর্মে থাকলে সাহস ও আত্মবিশ্বাস দুই-ই কমে যায়। ভাল খেলতে থাকলে এক সময় সামর্থ্যরে প্রতি আস্থা বেড়ে যায়। মনে হয় আমি পারি। ভাল খেলার এবং দল জেতানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্য আমার আছে। এটা অনেক বড় আত্মবিশ্বাসের দাওয়াই।’

সব প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করতে চান আবাহনীর এই তরুণ। তিনি বলেন, ‘এবারের লিগে আবাহনীর হয়ে কয়েকটি ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলার পর আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। ভিতরে বিশ্বাস জন্মেছে, প্রতিপক্ষ বোলিং যত ধারালো আর কঠিনই হোক, তার বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়ার ও স্বচ্ছন্দে ব্যাট চালনোর ক্ষমতা আমার আছে। প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে দল জেতানোর সামর্থ্য আমার হয়েছে। সেই সাহস, উদ্যম আর আস্থাই এখন আমার বড় সম্পদ।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে কিছুদিন আগেও ভয় কাজ করছিল সৈকতের মনে। সেটা ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সৈকত বলেন, ‘যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে এই কয়েক মাস আগেও কঠিন মনে হতো, নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো কি না? এমন সংশয়ে ভুগতাম- তা কেটে গেছে একদমই। তাই তো এখন ব্যাটিংটাকে আগের চেয়ে সহজ মনে হয়। আমি পারি। পারবো- সে বোধটাও হয়েছে জাগ্রত।’

এআরবি/আইএইচএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।