সম্ভাবনার স্কুল ক্রিকেট
আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল স্কুল ক্রিকেট। তখন তাকে সবাই নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট নামেই চিনতো। কালের স্রোতে স্কুল ক্রিকেটের সেই জনপ্রিয়তা এখন আর নেই। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ জাতীয় দলের উত্থানে আর অনিয়মিত আয়োজনে এখন আর আলোচনায় নেই স্কুল ক্রিকেট। অথচ এই স্কুল ক্রিকেট থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে তারকা উঠে এসেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলে।
এখান থেকেই নিজেদের স্বপ্নের বীজ বপন করেন তারকার গণ্ডি ছাড়িয়ে মহাতারকা হয়েছেন অনেকেই। এ তালিকায় আছেন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের অধিনায়ক ও অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এছাড়াও এ স্কুল ক্রিকেট থেকেই উঠে এসে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন, জাভেদ ওমর বেলিম, মেহরাব হোসেন জুনিয়রদের মত ক্রিকেটাররা।
নতুন ক্রিকেটার তৈরিতে আবারও মাঠে গড়িয়েছে স্কুল ক্রিকেট। প্রাইম ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবারের আসরের নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রাইম ব্যাংক ইয়থ টাইগার জাতীয় স্কুল ক্রিকেট’। টানা দুই বছর বিরতির পর চলতি বছরে আবার অনুষ্ঠিত হলো স্কুল ক্রিকেটের চূড়ান্ত পর্ব। জুনিয়র পর্যায়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট উৎসবে এবার অংশ নেয় ৫৩৪টি স্কুল।
চার মাসে দেশের ৭০টি ভেন্যুতে খেলেছে প্রায় ১১ হাজার খুদে ক্রিকেটার। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার পর ২৭ জুন ফাইনাল পর্যন্ত- মোট ম্যাচ হয়েছে ৯৬৫টি। আর ফাইনালে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা শেষে দিনাজপুর হাই স্কুলকে ৩ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় টাঙ্গাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
এবার এত ব্যাপক উপস্থিতি ও প্রতিদ্ব›দ্বীতার পরও আগের সেই অবস্থানে নেই স্কুল ক্রিকেট। এক সময় স্কুলের ক্রিকেটারদেও খেলা দেখতে গ্যালারিতে জড়ো হতো হাজার হাজার দর্শক। অথচ এখন মানুষ যেন জানেই না কখন কোথায় কী হচ্ছে। সুতরাং আগের সেই জৌলুস হারিয়ে অনেকটাই শ্রীহীন ক্রিকেটার গড়ার এই প্রাথমিক মাধ্যম। তবে এমনটা ভাবতে নারাজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহ-সভাপতি মাহবুব আনাম।
‘আমি বলব না জৌলুসটা নেই, যারা খেলছেন তাদের মধ্যে এ জৌলুসটা আছে। খেলার মধ্যে আপনারা দেখছেন দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বীতা হচ্ছে, প্রতিটা উইকেট পড়ার পর খেলোয়াড়রা একত্রিত হয়েছে এবং ইন্টেনসিটি অব খেলা যেটা ছিল সেটা আছে। জৌলুসটা যারা খেলছে তাদের মধ্যে আছে। তবে এটা আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারিনি।’
স্কুল ক্রিকেটের আগের সেই জৌলুস হারানোর জন্য দুটো কারণ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন মাহবুব আনাম। তার মতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের এমন উত্থানের কারণে আগের সে অবস্থানে নেই স্কুল ক্রিকেট। এছাড়াও বিশ্বায়নের ফলে গণমাধ্যমগুলোতে কমেছে স্কুল ক্রিকেটের উপস্থিতি। আগের মত ফলাও করে প্রচার না করায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি। তবে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে বিসিবিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এখন স্কুল ক্রিকেটের প্রচারের দায়িত্ব বিসিবিকেই নিতে হবে। তাদের নিজস্ব মিডিয়া দিয়ে এর প্রচার আরও ঢালাওভাবে করা উচিৎ। প্রতিটি ম্যাচের স্কোরগুলো নিজ দায়িত্বে মিডিয়ায় পাঠানো উচিৎ কিংবা ভালো কেউ খেললে তার সম্পর্কে জানানো উচিৎ কিংবা নিবন্ধ লিখে পাঠানো উচিৎ। এমনকি টেলিভিশনে স্কুল ক্রিকেটের ম্যাচগুলো প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিৎ।’
বছর দশের আগেও স্কুল ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয় ছিল। তখনকার ‘নির্মাণ স্কুল’ জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছে। তাই নতুন করে আবারও স্কুল ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে বিসিবি ও প্রাইম ব্যাংক। প্রথম ২ বছর ১ কোটি টাকা করে খরচ করলেও পরের বছর এ খরচ ৫০ ভাগ করে বৃদ্ধি পাবে। আর প্রাইম ব্যাংককে নিয়ে প্রথমবারের আয়োজনে মোটামুটি সফলও তারা।
এত প্রাপ্তির পরও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি স্কুল ক্রিকেট। তবে এর গুরুত্বটা জানেন সবাই। তবে এখন থেকে নিয়মিতভাবে টুর্নামেন্টটি আয়োজন হবে বলে আশ্বাস দেন মাহবুব আনাম। তিনি জানান, সব ধরনের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। আগের সেই নির্মাণ স্কুলকে ফেরাতে বদ্ধপরিকর এ জুটি। প্রথম বার আয়োজনে নিজেদের সফল মনে করছেন তারা।
‘স্কুল ক্রিকেটের সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। কারণ এটা অতীতে আমাদের প্রচুর ক্রিকেটার উপহার দিয়েছে। স্কুল পর্যায়ে যদি আমরা আরও প্রসার লাভ করতে পারি তাহলে আরও লাভবান হবো। এবারের ফাইনালে আপনারা দেখেছেন দিনাজপুর এবং টাঙ্গাইলের দুটি দল খেলেছে। অতীতে শহরভিত্তিক দলগুলো আসতো। এটা বোঝা যায় ক্রিকেটার প্রচার কতটা হয়েছে, শহর থেকে আরও ভিতরে চলে গেছে।’
এবারের স্কুল ক্রিকেট থেকে প্রাপ্ত মেধাবীদের শুধু ক্রিকেটই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে না, পাশাপাশি একজন ভাল মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার জ্ঞানও তাদের দেয়া হবে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এমনটাই জানিয়েছিলেন বিসিবির বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী। ‘এখানে শুধু ক্রিকেট হবে না, কিছু ট্রেনিং তাদের দেওয়া হবে। কিছু সামাজিক আচার-আচরণও শেখানো হবে। যেমন ইভ টিজিংয়ের বিষয়ে তাদের সচেতন করা হবে। কেন এটা খারাপ, বোঝাতে হবে। সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে বোঝানো হবে।’
তাই স্কুল ক্রিকেটের ধারাবাহিকতা কেবল ক্রিকেটার হিসেবে নয় একজন সফল ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরিতেও ব্যপক ভূমিকা রাখবে।
জাগো চ্যাম্পিয়নের ৬ষ্ঠ সংখ্যা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে
আইএইচএস/এবিএস