হাথুরুসিংহের সুপারিশেই আমি এখনো ম্যানেজার: সুজন


প্রকাশিত: ০২:৫৬ পিএম, ২৮ জুন ২০১৬

খেলোয়াড়ি জীবনে ‘লড়াকু ক্রিকেটারের’ তকমা ছিল গায়ে। ‘বিশ্বকাপের’ বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের মত বড় দলের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের নায়কও তিনি। খালেদ মাহমুদ সুজন তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের নন্দিত এক নাম।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময় সেই বরেণ্য ক্রিকেট ব্যক্তিত্বকে ঘিরে গুঞ্জন। ফিসফাস। ক্রিকেট পাড়ায় অনেকের মুখেই প্রশ্ন, আর তো কেউ এতগুলো বড় পদে নেই! খালেদ মাহমুদ সুজন কেন বোর্ড পরিচালকের পাশাপাশি গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান? তা না হয় মানা গেল। পাশাপাশি একই ব্যক্তি জাতীয় দলের ম্যানেজারও? আবার  ক্লাব কোচিংও করাচ্ছেন?

এমন চার চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা মানুষটিকে আবার জাতীয় দলের নির্বাচক প্রক্রিয়ার প্রত্যক্ষ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ছয়জনের নির্বাচক প্যানেলের অন্যতম সদস্য তনি। খালেদ মাহমুদ এসব প্রশ্নকে কীভাবে দেখছেন? জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপকালে ওপরের সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন খালেদ মাহমুদ।

আসুন খালেদ মাহমুদ সুজনের চিন্তা-ভাবনাগুলো জেনে নেয়া যাক-

প্রশ্ন: আপনি বিসিবির চার-চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে- কীভাবে দেখেন বিষয়টা?

সুজন: আমি এ প্রশ্নের জবাব চার ভাগে দেব। প্রথমেই বোর্ড পরিচালকের পাশাপাশি গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হওয়া প্রসঙ্গে বলি। এটা একদমই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। বোর্ডে ২৬ জন পরিচালক আছেন। নিয়ম ও রীতি অনুসারে সে পরিচালকদের মধ্য থেকেই বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। অনেক পরিচালকই কোন না কোন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান। এই যেমন আমাদের আকরাম ভাই  (আকরাম খান) ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান। টিংকু ভাই (নাজমুল করিম) আম্পায়ার্স বোর্ডেরও প্রধান। আমিও তাদের মতই একজন পরিচালক। তারপর গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ারই অংশ। তা নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলার অবকাশ খুঁজে পাই না।

এবার আসুন আমার জাতীয় দলের ম্যানেজার হওয়া প্রসঙ্গে- প্রথমেই বলে নেই ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড আমার খুব পছন্দের। ক্রিকেট আমার বড় ভালোলাগা। সবচেয়ে বড় ভালোবাসা। ক্রিকেটের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছি দীর্ঘদিন। থাকতেও চাই আমরণ। সেই ভালো লাগা থেকেই বলছি, আমি তো আর ইচ্ছে করে ম্যানেজার হইনি। একসময় রীতি হয়ে গেল, বোর্ড পরিচালকদের মধ্য থেকেই ম্যানেজার করা হবে। সেই প্রক্রিয়ায় বেশ ক’জন পরিচালক ম্যানেজারের দায়িত্ব পালনও করেছেন। বিভিন্ন সিরিজ ও টুর্নামেন্টে ভিন্ন ভিন্ন পরিচালক ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। পালাক্রমে আমাকেও দায়িত্ব দেয়া হলো।

সন্দেহ নেই আমি জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্বটা উপভোগ করি। সেটা জাতীয় দলের সঙ্গে আছি, দেশ-বিদেশ ঘুরছি, সবাই আমাকে টিম বাংলাদেশের অংশ হিসেবে দেখছে, জানছে- সে কারণে নয়। আমার ভালোলাগা অন্য কারণে। দীর্ঘ সময় ক্রিকেট খেলেছি। জাতীয় দলের সঙ্গেও যুক্ত অনেকদিন। কখনো ক্রিকেটার, কোন সময় অধিনায়ক, আবার একটা সময় সহকারী প্রশিক্ষকের ভূমিকায়ও ছিলাম। সব মিলে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। আমি সে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগুলো জাতীয় দলের সঙ্গে শেয়ার করতে পারছি।

আমার সহজাত বৈশিষ্ট্য দিয়ে পুরো জাতীয় দলের অভ্যন্তরে সম্প্রীতি, সংহতি, ঐক্য ও নিবিড় বন্ধন তৈরিরও সুযোগ পেয়েছি। আমার বিশ্বাস, মাঠে ভালো খেলার পাশাপাশি গত দুই বছরের বেশি সময় মাঠের বাইরেও টিম বাংলাদেশ অন্যরকম ভালোবাসা ও নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ।

তারপরও যদি কেউ প্রশ্ন তোলেন, তাদের জন্য বলছি জাতীয় দলের হেড কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের সুপারিশেই আমি এখনো ম্যানেজার। যদিও কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে প্রথম প্রথম খুব বেশি আমল দেননি। তারপর যখন দেখলেন আমার সঙ্গে ক্রিকেটারদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক, আমি তাদের ভালোবাসি, তারাও আমাকে খুব ভালোবাসে, মান্য করে- আমি ম্যানেজার হবার পর গোটা দলে একটা অন্যরকম সম্প্রীতি, সংহতি এবং ঐক্য গড়ে  উঠেছে, তা দেখে তারও ভালো লাগলো।

তারপর সময় গড়ানোর সাথে সাথে আমার সঙ্গে নানা ক্রিকেটীয় কথোপকথন হতে থাকলো। হাথুরুসিংহের উপলব্ধি, আমি ক্রিকেটটা বুঝি। জানি। পারি। তাই তার মনে হলো, আমাকে ম্যানেজার রাখা হলে দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, সম্প্রীতি, ঐক্য ও সংহতি ভালো থাকবে। সেও একজন প্রকৃত সঙ্গী পাবে। মোদ্দা কথা, তার উপকারে আসবে। তাই আমাকে ম্যানেজার রাখার সুপারিশটা তার কাছ থেকেই আসে।

আমিও সৌভাগ্যবান, বোর্ড আমাকে রেখে দিয়েছে। এ নিয়ে কোন অভিযোগ, কটূক্তি শুনিনি কখনো। তারপরও বোর্ড কেন আমাকে দীর্ঘদিন ম্যানেজার রেখেছে? তা জানা নেই। আর ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমিও একটা স্বপ্ন দেখি।
 
আমি তো আর খেলতে পারবো না। তবে খেলোয়াড়ি জীবনে শেখা, জানা বিষয়গুলো ক্রিকেটারদের সাথে শেয়ার করি। ক্রিকেটারদের ভাল খেলায় উদ্বুদ্ধ করি। অনুপ্রেরণা জোগাই।

এবার আসি আগের দুই দায়িত্বের পাশাপাশি কোচিং করানো প্রসঙ্গে। আগেই বলেছি, ক্রিকেট আমার ভালোলাগা; কিন্তু শুধু ভালো লাগলেই তো আর চলবে না। জীবন ধারণও করতে হবে। ক্রিকেট আমার জীবন-জীবিকারও উপাদান। বোর্ড প্রধান বলছেন, অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক কোচের সামনে টিম মিটিংয়ে কথা বলতে পারে না। সেখানে কোচ এবং অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের সঙ্গে সমন্বয় করাই হবে আমার কাচ।

বোর্ড প্রধান পাপন ভাই যেমন বেক্সিমকো ফার্মার সিইও- সেটা তার পেশা। মাহবুব ভাই (মাহবুব আনাম) প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মল্লিক ভাইও বেক্সিমকোয় উচ্চপদে চাকরি করেন। তাদের সবার একটা নিজস্ব পেশা আছে। তারা যেমন বোর্ড পরিচালক, তেমনি নিজ নিজ পেশার উপর জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। আমার পেশাই হলো ক্রিকেট কোচিং। কোচিং করেই জীবন নির্বাহ করি। তাই আমাকে কোচিং করাতেই হবে।

এটাকে যারা বাড়তি দায়িত্ব ভাবেন, তারা হয়ত না জেনে ভাবেন। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, কোন বাড়তি দায়িত্ব নেয়া নয়, ক্রিকেট কোচিং আমার পেশা। কোচিং করেই আমি চলি। তাই ওটা বাড়তি দায়িত্ব নয়। আমার জীবন-জীবিকা।

পাপন ভাই, মাহবুব ভাই ও মল্লিক ভাই যেমন ওই পেশায় থেকেই বোর্ডের নানা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত- আমিও কিন্তু তাই। তবে যেহেতু আমি কোচিং করিয়ে জীবন নির্বাহ করি, তাই মনে হয় ওটা আমার বাড়তি দায়িত্ব। আসলে তা নয়।

প্রশ্ন: বলা হচ্ছে আপনাকে  দ্বি-স্তরবিশিষ্ট নির্বাচক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের ইচ্ছেতেই?
সুজন: হ্যাঁ, তাই। পাপন ভাই আমাকে বললেন, দ্বি-স্তরবিশিষ্ট নির্বাচক প্যানেলে থাকতে হবে। আমি প্রথমেই জানতে চাইলাম- সেখানে থেকে আমি কি করবো? আমার ভুমিকা কি হবে? তিনি বললেন, আমি বিভিন্ন সময় দেখেছি কোচ এবং অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের মতামত আমার সঙ্গে শেয়ার করেছে। আসলে আমি সব সময়ই অধিনায়ক ও কোচের মধ্যস্ততা করার চেষ্টা করেছি। তাদের সম্প্রীতির বন্ধনটা দৃঢ় করার চেষ্টা ছিল। আমার মনে হয় দল নির্বাচনেও আমি অধিনায়ক ও কোচের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করবো।

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।