মেসি যেন ট্র্যাজেডির নায়ক


প্রকাশিত: ০৩:৫১ এএম, ২৭ জুন ২০১৬

লিওনেল মেসির চোখের শূন্য দৃষ্টিটার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। কোপা আমেরিকার শতবর্ষী ট্রফিটা যখন পোডিয়ামে তোলা হচ্ছিল, তখন সেই শূন্য দৃষ্টিতে ভেস উঠছিল হাহাকার। টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার পরও মেসির এই দৃশ্যটার পরিবর্তন হলো না। এত কাছে, অথচ কত দূরে!

‘ইতিহাস বদলাতে চাই’- মেসির এই কথাটা দিয়েই পুরো বিশ্বের সংবাদ মাধ্যম শিরোনাম করেছিল আগের দিন। মেসির ইতিহাস বদলানো দেখতে আজ ভোর থেকেই টিভি সেটের সামনে বসেছিল কোটির ওপরেও বেশি ভক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৮২ হাজার ২৬ জন দর্শক। কিক অফের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে উম্মাতাল হয়ে উঠেছিল পুরো মেটলাইফ। মেসি মেসি রবই যেন সবচেয়ে বেশি।

সেই মেসি এতটা হতাশ করবেন কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থককে, সেটা কে ভেবেছিল! পুরো ম্যাচেই বোতলবন্দী হয়ে ছিলেন- এটা ঠিক। তবে তার মাপের ফুটবলারের একটি মুভমেন্টই পাল্টে দিতে পারে ম্যাচের চেহারা। এই আত্মবিশ্বাস ছিল মেসি ভক্তকুলের।

কিন্তু কোথায় সেই মুভমেন্ট? মার্কোস রোহোকে লাল কার্ড দেয়ার কারণে মেসিকে নেমে যেতে হলো আরও নীচে। দু’একবার বল নিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করেছেন ঠিক, তবে সেটা চিলির ডিফেন্ডারদের কড়া মার্কিংয়ের কারণে পারেননি।

একটি শট নিয়েছিলেন। বাম পায়ের ট্রেডমার্ক শট। চলে গেলো পোস্টেও অনেক বাইরে দিয়ে। পুরো ম্যাচে মেসির অন টার্গেট শট বলতে ওটাই। ফ্রি কিক পেয়েছিলেন কয়েকটা। কিন্তু ম্যাজিকাল ফ্রি কিকের শট নিতে যেভাবে পরিচিত মেসি, সেটার দেখা পাওয়া গেলো না একবারও।

মেসি ঠিক ফাইনালে এসে মেসি হয়ে উঠতে পারলেন না। টুর্নামেন্টের শুরুতে ছিলেন ইনজুরিতে আক্রান্ত। দ্বিতীয় ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমেই করলেন হ্যাটট্রিক। এরপর সেমিফাইনাল পর্যন্ত যে জাদু দেখালেন, তাতে সংবাদমাধ্যমগুলো শিরোনাম করতে বাধ্য হয়েছিল, ‘এই আর্জেন্টিনাকে রুখেেব কে?’

কিন্তু হায়! এভাবেই বার বার হতাশায় ডুবতে হয় আর্জেন্টিনা সমর্থকদের! সেই ১৯৯৩ সালের পর থেকে টানা ২৩ বছর। কোন শিরোপা নেই। কোন সাফল্য নেই। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সই যা আর্জেন্টাইনদের সম্বল।

২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল, ২০১৫ এবং ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে এসেও মেসি ব্যর্থ। পারলেন না শিরোপা খরা ঘোচাতে। পারলেন না নিজের নামের পাশে একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা কৃতিত্ব স্থাপন করতে। আর কী কখনও সুযোগ পাবেন তিনি?

নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে মেসি জীবনে দ্বিতীয়বার আসতে চাইবেন কি না সন্দেহ। এখানেই যে ট্র্যাজেডির নায়ক হয়ে রইলেন তিনি। টাইব্রেকারের মত ভাগ্য নির্ধারনী পর্বে এসে এভাবে হতাশা উপহার দেবেন তিনি, নিজের ক্যারিয়ারের সব অর্জন জলাঞ্জলি দেবেন, কে ভেবেছিল? স্বপ্নেও কী কখনও কল্পনা করতে পেরেছিলেন মেসি?

নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পর খেলা গড়ালো অতিরিক্ত সময়ে। মেসি বের হতে পারলেন না গোলে একটি শট নিতে। এরপর টাইব্রেকার। শুরুতেই শট নিতে আসেন চিলির মিডফিল্ডার আরতুরো ভিদাল। তার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিলেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো।

উল্লাসে ফেটে পড়লো পুরো আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশি সমর্থকরাও কম যায় না। গগনবিধারি চিৎকারে প্রকম্পিত করে তুলেছিল আশপাশের পরিবেশ। কিন্তু এই উল্লাসের আড়ালেই যে চূড়ান্ত দুঃখটা লুকিয়ে রয়েছে, তা কে জানতো? আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শটটি নিতে এলেন মেসি। চিয়ার্স চিয়ার্স, ভামোস ভামোস মেসি- চিৎকারে পুরো মেটলাইফ যেন কাঁপছিল।

কিন্তু এভাবে হতাশা উপহার দেবেন মেসি? প্রথমার্ধে সহজ সুযোগ পেয়েও গোল করতে না পেরে যে অপরাধ করেছিলেন হিগুয়াইন, তার চেয়েও যে বড় অপরাধ করে ফেললেন মেসি! বলটা যে তিনি মেরে দিলেন পোস্টের ওপর দিয়ে। তার  মতো এমন স্পট কিক মাস্টারের কাছ থেকে এমন বাজে শট কল্পনাও করা যায় না। বল উড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন আর্জেন্টিনার শিরোপাকে উড়িয়ে দিলেন তিনি!

এরপর আর্জেন্টিনার পরাজয় ছিল শুধু সময়ের ব্যবধান মাত্র। কারণ, চিলির পোস্টের নীচে যে মেসিরই ক্লাব সতীর্থ বার্সেলোনার ক্লদিও ব্রাভো! নাকি তাকে দেখেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ওভাবে শট উপরে মেরে দিলেন মেসি! সে যাই হোক, আর্জেন্টিনার চতুর্থ শটটা ঠেকিয়ে দিয়ে শেষ মুহূর্তের নায়ক হয়ে রইলেন ব্রাভো এবং মেসিদের কাঁদিয়ে আরও একটি কোপা আমেরিকার শিরোপা উপহার দিলেন তিনি চিলিকে।

আইএইচএস/এমআর/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।