মোহাম্মদ আলি আর নেই

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৮ এএম, ০৪ জুন ২০১৬

সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবীদ হিসেবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ ছিল না। শুধু মাত্র বক্সিং দিয়েই বিশ্ব জয় করেছেন মোহাম্মদ আলি। জয় করেছেন মানুষের হৃদয়। বক্সিং রিংয়ের সেই অমিত সাহসী মানুষটিও শেষ পর্যন্ত পারলেন না লড়াই করে বেঁচে থাকতে। বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

শুক্রবার শেষ রাতের দিকে অ্যারিজোনার ফোনিক্স এরিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মোহাম্মদ আলি। তার পরিবারের মুখপাত্র মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেন এনবিসি নিউজকে। জটিল শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

muhammadali

৩২ বছর যাবৎ পার্কিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত মোহাম্মদ আলি। যার জন্য কিছুদিন পর পরই ভর্তি হওয়া লাগতো হাসপাতালে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। পারিবারিক ডাক্তারের কাছেই চিকিৎসারত ছিলেন মোহাম্মদ আলি।

শুক্রবারই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাতের মধ্যেই চলে যেতে হয় লাইফ সাপোর্টে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, ডাক্তার এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন- আর হয়তো এক ঘণ্টা বাঁচবেন তিনি। শুধু তাই নয়, সৎকারের প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করে তার পরিবার। অবশেষে সমস্ত লড়াই থামিয়ে মোহাম্মদ আলি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

Muhammad

পারিবারিক মুখপাত্র বব গানেল বলেন, ‘পার্কিনসন্স ডিজিজের সঙ্গে ৩২ বছর লড়াই করার পর অবশেষে ৭৪ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন মোহাম্মদ আলি। তিনবারের হ্যাভিওয়েটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মৃত্যু বরণ করেছেন শুক্রবার শেষ রাতের দিকে।’

বক্সিং রিংয়ে কত কিংবদন্তীকে হারিয়েছেন তিনি। কত শত লড়াই জিতেছেন। কিন্তু তিন দশক ধরে তার শরীরে বাসা বাধা পার্কিনসন্স ডিজিজকে হারাতে পারেননি। ধীরে ধীরে তা মোহাম্মদ আলিকে নিয়ে গেছে মৃত্যুর দুয়ারে। শেষ পর্যন্ত জীবনটাই কেড়ে নিল। কেন্টাকির লজভিলে তার নিজের বাড়িতেই শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

MUHAMMAD

চরম শারীরিক খারাপ অবস্থার মাঝেও শেষ দিকে এসে রাজনীতি তার মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে তিনি সমালোচনায় মেতে ওঠেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধী অবস্থানের। ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি তুললে মোহাম্মদ আলি তার প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আমরা মুসলিম হিসেবে তাদের বিপক্ষে দাঁড়াতে চাই যারা ইসলামের বিরোধিতাকেই নিজেদের এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করতে চায়।’

১৯৬০ এর দশকে যখন ক্যারিয়ারের তুঙ্গে তখনই তিনি জাতীয় চেতনায় বিশাল এক বিপ্লব নিয়ে আসেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে। এরপর থেকেই মোহাম্মদ আলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে এক শক্তি, বাগ্মিতা, বিবেক এবং সাহসের প্রতীক হয়ে ওঠেন। ১৯৬৪ সালে ইসলামি সংগঠন নেশন্স অব ইসলামে যোগ দেন এবং ১৯৭৫ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন।

MUHAMMAD

মোহাম্মদ আলি ছিলেন সব সময়ই প্রচার বিমুখ। তবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন রাষ্ট্রীয় সীমানা ছাড়িয়ে, জাতি এবং ধর্মকে ছাপিয়ে সার্বজনীনতার প্রতীক। যাদের বিপক্ষে তিনি লড়াই করেছেন, তারা সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে গেছেন হয়তো; কিন্তু আজীবনই একজন যোদ্ধা ছিলেন মোহাম্মদ আলি।

১৯৪২ সালে কেন্টাকির লজভিলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম রাখা হয়েছিল বাবা ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে সিনিয়র-এর নাম অনুসারেই। যার নামকরণ করা হয়েছিল একজন দাসপ্রথা বিরোধী রাজনীতিবিদ ক্যাসিয়াস ক্লে এর নামানুসারে। ১২ বছর বয়সেই বক্সিং শুরু করেন মোহাম্মদ আলি।

১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকের আগেই গোল্ডেন গ্লাভস জয় করে ফেলেন আলি। এরপর অলিম্পিকে গিয়ে লাইট হেভিওয়েটে জেতেন গোল্ড মেডেল।

আইএইচএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।