‘এখনো বাংলাদেশকে মিস করি’
‘কেমন আছ? তোমাদের ওখানে সবকিছু ভালো তো?’ ফোন রিসিভ করেই কথাগুলো বললেন পল নোয়াচুু। পুরো নাম পল ম্যাকজেমস নোয়াচুকু। চার মৌসুম খেলেছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে। বাংলা ভাষা যে কিছু রপ্ত আছে, সেটাই বোঝালেন কয়েকটি বাক্য বলে।
বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে তার পরিচিতি পল নামেই। নাইজেরিয়ান এই ফুটবলার বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন পেশাদার লিগে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিক করে।
২০০৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (তখন নাম ছিল বি.লিগ) প্রথম আসরে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ডাবল হ্যাটট্রিক করেছিলেন মোহামেডানের এই নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড। পলের ওই কীর্তির প্রায় দেড় যুব পর গত ৪ জানুয়ারি ডাবল হ্যাটট্রিক করেন আরেক আফ্রিকান ঘানার স্যামুয়েল বোয়েটেং।
রহমতগঞ্জের জার্সিতে তিনি ৬ গোল করেছেন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লবের বিপক্ষে। পল ডাবল হ্যাটট্রিক করেছিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে, বোয়েটেং মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লা. লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে।
যে ক্লাবের বিপক্ষে ডাবল হ্যাটট্রিক করেছিলেন পল, সেই রহমতগঞ্জের জার্সিতে খেলে বাংলাদেশ পর্ব শেষ করেছিলেন ২০১১ সালে। এক যুগের বেশি সময় আগে বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেও লাল-সবুজের দেশকে এখনো মিস করেন ৫১ বছর বয়সী পল।
মঙ্গলবার রাতে নক করার পর তিনি কথা বলার সময় দিয়েছিলেন বুধবার দুপুরে। ‘ফ্রি হয়ে আমি নক করবো’- বলে ফোন রেখেছিলেন। বুধবার দুপুরে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজকে। যে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে খেলার চার মৌসুমসহ নিজের ব্যক্তিগত অনেক কিছুই খোলামেলা আলোচনা করেছেন। ফুটবল ছেড়ে এখন পুরোদুস্তর গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পল। ব্যবসার কাজেই আগামী জুনে আসবেন বাংলাদেশে।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের পেশাদার লিগে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিক করেছিলেন ২০০৭ সালে। দীর্ঘ সময় পর আবার ডাবল হ্যাটট্রিক দেখেছে বাংলাদেশের দর্শক। রহমতগঞ্জের এক ঘানাইয়ান ফুটবলার। আপনি কি জানেন?
নোয়াচু পল: হ্যাঁ, জানি। ম্যাচের পরই জেনেছি। কারণ, আমি বাংলাদেশের ফুটবল ফলো করি। ওখানকার অনেক নিউজও আমি ফলো করি। আমি খুব খুশি হয়েছি শুনে। আমি ওই ফুটবলারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
জাগো নিউজ: শুধুই কি নিউজ ফলো করেন? নাকি বাংলাদেশের কারো সাথে যোগাযোগও আছে?
নোয়াচু পল: আমার বেশ কয়েকজন সাবেক সতীর্থের সাথে কথা হয়। যেমন- বিপ্লব (গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য্য), হাসান আল মামুন, বেলাল। এছাড়া মানিক (কোচ সফিকুল ইসলাম মানিক) ও চৌধুরী প্রিন্সের (আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স) সাথেও মাঝেমধ্যে কথা হয়। তাদের কাছ থেকেই আমি নিয়মিত বাংলাদেশের ফুটবলের খবর নিয়মিত রাখি। এ ছাড়া বাংলাদেশের নিউজও দেখি।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। নিশ্চয়ই জানেন?
নোয়াচু পল: জানি। শেখ হাসিনা এখন দেশে নেই। নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের ফুটবলে আপনার শুরু ও শেষটা নিয়ে কিছু বলেন।
নোয়াচু পল: বাংলাদেশে আমার প্রথম ক্লাব ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। ২০০৫ সালে আমি ওই দলে খেলি। পরের মৌসুমে চলে যাই ব্রাদার্স ইউনিয়নে। মোহামেডানে খেলেছি ২০০৭ সালে পেশাদার ফুটবলের প্রথম আসরে। এর পর জর্ডান, ভিয়েতনাম, ফিনল্যান্ড ও ভারতে খেলেছি। বাংলাদেশে আবার গিয়েছিলাম ২০১১ সালে। রহমতগঞ্জের জার্সিতে আমি খেলেছি বাংলাদেশে শেষবার।
জাগো নিউজ: কেমন ছিল বাংলাদেশের দিনগুলো?
নোয়াচু পল: বাংলাদেশে আমার দারুণ সময় কেটেছে। চার মৌসুম সেখানে খেলেছি। আমি এখনও বাংলাদেশকে মিস করি। যে কারণে, নিয়মিত বাংলাদেশের ফুটবলসহ অন্যান্য খবর রাখার জন্য পুরনো সতীর্থদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং নিউজ পেপার দেখি।
জাগো নিউজ: মোহামেডানের জার্সিতে ডাবল হ্যাটট্রিক আপনার ক্যারিয়ারেরই সেরা ঘটনা নিশ্চয়ই? পেশাদার লিগে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিকম্যান, ইতিহাসে অক্ষয়।
নোয়াচু পল: অবশ্যই। আমি কখনো সেই স্মৃতি ভুলবো না। ওই ম্যাচে আমরা ৭-১ গোলে জিতেছিলাম রহমতগঞ্জের বিপক্ষে। আমি ৬ গোল করেছিলাম। ষষ্ঠ গোলের পর আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল। এসব স্মৃতি ভোলার নয়, ভোলা যায় না।
জাগো নিউজ: এক ম্যাচে ৬ গোল করার পরও আপনি ওই মৌসুমের সর্বাধিক গোলদাতা হতে পারেননি, তাই না?
নোয়াচু পল: আমি দ্বিতীয় সর্বাধিক গোলদাতা হয়েছিলাম। আমার চেয়ে এক গোল বেশি করে সর্বাধিক গোলদাতা হয়েছিলেন নাইজেরিয়ার জুনিয়র (জুনিয়র ওবাগবেমিরো)।
জাগো নিউজ: খেলা ছেড়ে কি ফুটবলের সাথেই আছেন? নাকি অন্য কোনো পেশায়?
নোয়াচু পল: আমি এখন ব্যবসায়ী। তবে ফুটবলেও আছি। আমি গার্মেন্টস ব্যবসা করি। তাছাড়া আমার একটা ফুটবল একাডেমিও আছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
জাগো নিউজ: দক্ষিণ আফ্রিকায় কেন?
নোয়াচু পল: আমি তো পরিবার নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায়ই থাকি। এখানে আছি ১৯৯৯ সাল থেকে। ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সের ফুটবলারদের নিয়ে আমার একটা একাডেমি আছে। সেখানে ২০০ ফুটবলার আছে। একাডেমি আর ব্যবসা আমি এক সাথেই চালাই।
জাগো নিউজ: পরিবারে অন্যরা কী করে?
নোয়াচু পল: আমার স্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়ে। সেও ব্যবসা করে। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। ছোট ছেলে ৫ বছর বয়সী রায়ান। সে ফুটবল খেলে।
জাগো নিউজ: আপনি ফোন রিসিভ করেই বাংলায় কথা বললেন। বাংলা ভাষা কতটা মনে আছে?
নোয়াচু পল: অল্প অল্প। কেমন আছো, সমস্যা নাই, বন্ধু, শিখেছি, ভাত খাই, খানা, গেলাম-এমন অনেক কিছুই আমার মনে আছে।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের কোনো খাবার আপনি মিস করেন?
নোয়াচু পল: বাংলাদেশের সাদা ভাত ও সবজি আমি মিস করি। ওখানকার মাটন বিরিয়ানি ভালো লাগতো। আর মোহামেডানের খাবার তো ছিলই। তা ভোলার নয়।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশে অবস্থানকালে এমন কোনো ঘটনা আছে, যা এখনো মনে করেন?
নোয়াচু পল: চার বছরে অনেক ঘটনা আছে। সব মনে নেই। তবে ঢাকার যানজটের কথা মনে পড়ে। যদিও ঢাকা আর আমাদের নাইজেরিয়ার যানজটের অবস্থা একই রকম। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা তেমন না। এখানকার রাস্তায় তেমন যানজট নেই।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা আছে আবার?
নোয়াচু পল: হ্যাঁ। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর জুনেই আমি বাংলাদেশে আসবো ব্যবসার কাজে।
জাগো নিউজ: কয়দিনের সফর? ব্যবসার কাজ ছাড়া আর কী করবেন তখন?
নোয়াচু পল: আমি এক সপ্তাহ থাকবো বাংলাদেশে। ব্যবসার কাজ করবো। অবশ্যই আমি মোহামেডান ক্লাবে যাবো ওই সময়। আশা করি, তখন দেখা হবে।
জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
নোয়াচু পল: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরআই/এমএমআর/এমএস