মোরসালিনদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা
অবৈধভাবে বিদেশ থেকে মদ আনায় ৫ ফুটবলারের শাস্তি
গত বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্বে বসুন্ধরা কিংস থেকে লোনে শেখ মোরসালিনকে দলে নিয়েছিল মোহামেডান। নিজ ক্লাব কিংসের বিপক্ষে ম্যাচে গোল দিয়ে আলোচনায় আসেন তরুণ এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।
সাদাকালো জার্সিতে ৭ ম্যাচ খেলে ২ গোল করা মোরসালিনকে আবার ফিরিয়ে নেয় কিংস। কোচ অস্কার ব্রুজন গত মৌসুমে চার ম্যাচে একাদশে রেখেছিলেন, চার ম্যাচে নামিয়েছিলেন বদলি হিসেবে। মোট ৮ ম্যাচ, গোল একটি।
এর পর মোরসালিনের ভাগ্যটা খুলে দেন জাতীয় দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। আক্রমণভাগের খেলোয়াড় সংকটে মোরসালিনকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দলে নেন কোচ।
সাফের চার ম্যাচের প্রথম দুটিতে বদলি ও পরের দুটিতে তাকে একাদশে খেলিয়েছেন কোচ। মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে গোল করার পরই মিডিয়ার ফোকাসে চলে আসেন মোরসালিন।
সেমিফাইনালে কুয়েতের বিরুদ্ধে ম্যাচের শুরুর দিকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে না পেরে দলকে ডোবানো সেই মোরসালিন আবার আলোচনায়। এবার আলোচনায় বিপথগামী হয়ে, বিদেশ থেকে অবৈধভাবে মদ এনে।
এএফসি কাপ খেলে মালদ্বীপ থেকে ফেরার পর শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে দলের ৫ খেলোয়াড়কে নিষিদ্ধ করে বসুন্ধরা কিংস। সেই পাঁচজনের একজন তরুণ ফুটবলার মোরসালিন।
গতকাল (সোমবার) নিজেদের মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হয়েছে কিংসের। এএফসি কাপের অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও ওই ৫ খেলোয়াড়কে স্কোয়াডে রাখেনি কিংস। মোরসালিন, তপু বর্মন, তৌহিদুল আলম সবুজ, আনিসুর রহমান জিকো ও রিমন হোসেনরা তাই ছিলেন অস্কার ব্রুজনের তালিকার বাইরে।
গত দুই দিন ধরে ফুটবল অঙ্গনের সবচেয়ে বড় খবর, পাঁচ ফুটবলারের বিরুদ্ধে নেওয়া কিংসের শাস্তি। কী করেছিলেন তারা? যার জন্য ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে এএফসি কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তাদের নিষিদ্ধ করেছে কিংস?
জানা গেছে, মালদ্বীপ থেকে ফেরার পথে বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি-শপ থেকে অবৈধভাবে প্রচুর মদ কিনে এনেছেন মোরসালিনসহ ওই ৫ ফুটবলার। জানার সঙ্গে সঙ্গেই কিংসের সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্ত এতটাই সাহসী ও দৃষ্টান্তমূলক যে, প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চারবারের চ্যাম্পিয়ন ক্লাবটি।
তপু, সবুজ, জিকোরা জাতীয় দলে খেলছেন অনেকদিন ধরে। জাতীয় দলের সিনিয়র এই ফুটবলারদের চেয়ে এখন বেশি আলোচনায় সম্ভাবনাময় তরুণ শেখ মোরসালিন। মাত্র ১৭ বছর বয়সের এই ফুটবলারও যে মদে আসক্ত হতে পারে, তা জেনে বিস্মিত অনেকে।
সাফে গোল করে ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার পর থেকেই যেন মাটিতে পা পরছিল না মোরসালিনের। নিজেকে যেন ভাবতে শুরু করেন কাজী সালাউদ্দিন, সালাম মুর্শেদী। অনেকের চোখেই তার আচরণগত সমস্যা ধরা পড়ছিল।
মোরসালিনের আচরণগত সমস্যার বিষয়টি বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের কানেও গেছে। জাতীয় দলের জার্সিতে মাত্র ৭ ম্যাচ খেলা ফুটবলার মোরসালিন অবৈধভাবে মদ আনার দায়ে নিষিদ্ধ হয়ে আবার আলোচনায়।
মালদ্বীপের ক্লাব মাজিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হারের পর পাঁচ খেলোয়াড়ের এহেন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় বসুন্ধরা কিংসের কর্মকর্তাদের মধ্যে। তাই ভারতের ক্লাব ওড়িশার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে কোনো কার্পণ্য করেনি ক্লাবটি।
বসুন্ধরা কিংস শতভাগ পেশাদার। ক্লাবটির কাছে শৃঙ্খলা অনেক বড়। ক্লাবটি কেন ঘরোয়া ফুটবলে একের পর এক সাফল্য তুলে নিচ্ছে তার একটি বড় উদাহরণ তাদের এই সাহসী সিদ্ধান্ত।
ফুটবল অঙ্গনের অনেকেই মনে করেন, বসুন্ধরা কিংস যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নজির হয়ে থাকবে দেশের ফুটবলে। শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো প্রকার আপোস না করার ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় সাহসী ও দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তাদের এই সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে, কেন তারা সেরা।
সোমবার ওই ৫ জনকে বাইরে রেখেও দাপটের সঙ্গে জিতেছে কিংস। দলের জন্য এটাও ছিল দারুণ এক সাফল্য। খেলোয়াড় যত বড়ই হোক, সবকিছুর আগে শৃঙ্খলা। সেটাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে কিংস।
দেশের অন্য ক্লাবগুলোর, এমনকি জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টেরও এ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে। বসুন্ধরা কিংস ওই পাঁচ ফুটবলারকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি এরই মধ্যে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে)।
আরআই/এমএমআর/জেআইএম