ঢাকা যেভাবে ‘দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের রাজধানী’

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) জন্ম ১৯৯৭ সালে। শুরুতে সাফের সদস্য ছিল বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। সপ্তম দেশ হিসেবে ভুটান সদস্য হয় ২০০০ সালে।

বয়স ২৬ বছর হলেও প্রথম এক যুগ সাফ পরিচিত ছিল ব্রিফকেস সংগঠন হিসেবে। ব্রিফকেস থেকে বেরিয়ে সাফ এখন পুরোদমে পেশাদার সংগঠন। নিজস্ব কার্যালয়, প্রয়োজনীয় লোকবল। ঠিক যেন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান।

রাজধানী ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা বনানীর ১১ নম্বর সড়কের ৫৬ নম্বর বাড়ির নবম তলায় ৩ হাজার স্কয়ারফিটের ছিমছাম সাফ সেক্রেটারিয়েট। যেখান থেকেই এখন পরিচালিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সব কার্যক্রম। মোটা দাগেই বলা যায় ঢাকা এখন ‘দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের রাজধানী।’

বনানীর ওই অফিসটি সাফের প্রাণকেন্দ্র। এই প্রথম নিজস্ব ওই কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির সভা করতে যাচ্ছে সাফ। আগামীকাল (শনিবার) বিকেল তিনটায় বেশ কয়েকটি এজেন্ডা নিয়ে সভায় বসছেন সাফের কর্মকর্তারা। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল কার্যক্রম ঢাকার কোন এবং কেমন কার্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে সেটা এই প্রথম দেখবেন সাফের অনেক সদস্য।

নিজস্ব কার্যালয়ে প্রথম সভায় বসার আগের বিকেলে সাফ সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন বললেন, ‘এক সময় সাফের কোনো অফিস ছিল না। এখন অফিস আছে, দুইজন বিদেশিসহ (নেপাল ও ভুটান) ১০ জন স্টাফ আছেন। সাফের কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। আগামীতে আরো বাড়বে। আমার ভালো লাগছে যে, নিজেদের কার্যালয়ে প্রথমবারের মতো নির্বাহী কমিটির সভা করতে যাচ্ছি।’

দক্ষিণ এশিয়ার এই ফুটবল সংগঠন যাত্রা করেছিল অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) প্রাক্তন সভাপতি পি.পি লক্ষ্মণকে সভাপতি করে । তিনি দায়িত্বে ছিলেন ২০০১ সাল পর্যন্ত। তাঁর কাছ থেকে সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন নেপালের গনেশ থাপা। তিনি সভাপতি ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত।

ওই বছর থেকে সাফের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। টানা চারবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাফের সভাপতি হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশের কিংবদন্তি এই ফুটবলার। সাফের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দেশের অভিজ্ঞ সংগঠক আনোয়ারুল হক হেলাল। তার আগে ছিলেন বাংলাদেশের আরেক কৃতি সংগঠক প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু।

এক সময় ছিল এই সংগঠনের কার্যক্রম বলতে ছিল একটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। কাজী মো. সালাউদ্দিন সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর সাফের কলেবর বাড়তে থাকে। ২০১০ সাল থেকে সাফের ক্যালেন্ডারে যোগ হয়েছে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। যার যাত্রাও শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে।

এর বাইরেও আছে ছেলে ও মেয়েদের বেশ কয়েকটি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট। কার্যক্রম বাড়ায় প্রতি বছরই হয়ে থাকে সাফের বিভিন্ন আয়োজন। আগামীতে যোগ হবে সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ।

শনিবারের নির্বাহী কমিটির সভায় যেসব এজেন্ডা আছে তার মধ্যে একটি আগামী বছরের ক্যালেন্ডার তৈরি। ওই ক্যালেন্ডারেই ঢুকে যাবে সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ। এ বিষয়ে সাফের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন শুক্রবার জাগো নিউজকে বলেছেন,‘সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ হবে সেটা চূড়ান্ত। এখন শুধু খেলার তারিখ ও ভেন্যু ঠিকঠাক করা বাকি। শনিবারের সভায় আশা করি তারিখ নির্ধারণ হয়ে যাবে।’

কী ফরম্যাটে শুরু করতে চান সাফের এই নতুন টুর্নামেন্ট? জবাবে কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘বেশ কয়েকটি অপশন নিয়ে কাজ করছে সাফ সেক্রেটারিয়েট। ৭ দেশের ক্লাব নিয়ে হতে পারে। যদি সেন্ট্রাল ভেন্যুতে হয় তাহলে আয়োজক দেশের একটি ক্লাব বেশি নিয়ে ৮ দলের টুর্নামেন্ট হতে পারে। এমনও হতে পারে সাফের বাইরে থেকে অতিথি একটি দল আমন্ত্রণ করা হতে পারে। আবার ৭ দেশের ৭ ক্লাব নিয়ে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতেও হতে পারে। শনিবারের সভায় এসবই চূড়ান্ত হবে।’

বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি অতিথি দল আমন্ত্রণ করেছিলেন। এই উদ্যোগে সাফ কতটা সফল বলে মনে করেন? ‘আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই টুর্নামেন্টটিকে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা। আপনি যখন নিজেদের চেয়ে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলবেন তখন আপনিও শক্তিশালী হবেন। লেবানন ও কুয়েতের মতো দল অন্তর্ভূক্ত করায় অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন বাংলাদেশ হয়তো এবার আরো খারাপ করবে। কিন্তু আমরা দেখলাম এই সাফে বাংলাদেশ দুর্দান্ত ফুটবল খেলে ১৪ বছর পর সেমিফাইনালে উঠেছিল। কেবল বাংলাদেশের জন্যই নয়, এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর জন্যও দুই অতিথি দলের অন্তর্ভূক্তি পজিটিভ ছিল’-বলছিলেন সাফ সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন।

দুই অতিথি দল নিয়ে বেঙ্গালুরুর সফল আয়োজনের পর নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি? কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা সাফকে আরো ওপরে নিতে চাই। সাফের টুর্নামেন্টগুলোকে এতটা আকর্ষণীয় করতে চাই যাতে এ অঞ্চলের বাইরের ভালো ভালো দল এখানে খেলতে মুখিয়ে থাকে। এবার যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ লেবানন ও কুয়েতকে অতিথি দল হিসেবে এনেছিলাম, সেভাব আগামীতেও আরো শক্তিশালী দল সাফে দেখবেন। এমন কি আগামীতে আমাদের বয়সভিত্তিসহ অন্যান্য টুর্নামেন্টেও এ অঞ্চলের বাইরের দলকে খেলাবো। যাতে প্রত্যেকটি টুর্নামেন্ট আগের চেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। আমরা চাই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে গোটা এশিয়া যেন একটি মর্যাদার টুর্নামেন্ট হিসেবে দেখে।’

শনিবার বিকেল ৩টায় শুরু হতে যাওয়া সাফের এই নির্বাহী কমিটির সভায় এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের ডাইরেক্টর পুরুশত্তম কাটেল উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন সাফের মার্কেটিং কোম্পানী স্পোর্টস ভাইভ-এর প্রতিনিধিরা। সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু, ফরমেশন এবং আগামী বছরের ক্যালেন্ডার নিয়ে আলোচনার জন্যই এ সভায় থাকবেন মার্কেটিং কোম্পানির প্রতিনিধি।

সাফের চারটি স্ট্যান্ডিং কমিটি এ সভায় চূড়ান্ত হবে। ‘আমাদের কিছু কমিটি করতে হবে। সদস্যদের কাছে কমিটির বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছিল। সবাই মতামত দিয়েছেন। এখন সভায় বসে কমিটিগুলো চূড়ান্ত করা হবে। আমরা এ সভায় ফাইন্যান্স কমিটি, কম্পিটিশন কমিটি, ডেভেলপমেন্ট কমিটি ও মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন কমিটি গঠন করবো’-বলছিলেন সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল।

বর্তমানে সাফের নির্বাহী কমিটি ৬ সদস্যের। যখন সাফের নির্বাচন হয় তখন ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ ছিল শ্রীলঙ্কা। যে কারণে তাদের প্রতিনিধি নেই কমিটিতে। পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি নেই বলে তাদেরও কেউ নেই সাফের নির্বাহী কমিটিতে। ৬ সদস্যের মধ্যে মালদ্বীপের প্রতিনিধি ফিজিক্যালি থাকছেন না। তিনি সভায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন সাফের সাধারণ সম্পাদক।

আরআই/এমএমআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।