রাহুল দ্রাবিড়ের প্রশংসা ও অভিনন্দনে সিক্ত জাকির
অনেকেরই ধারনা ছিল সিলেটের টপ অর্ডার কাম কিপার জাকির মূলত ফ্রি-স্টেক মেকার। দীর্ঘ পরিসরের চেয়ে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতেই কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কিন্তু জাকির হাসান জায়গামত পারফরম করতে পারেন। যে ফরম্যাটে যখন যেমন দরকার তেমনই খেলতে পারেন। আর তা পারেন বলেই গত ১৮দিন আগে কক্সবাজারের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে ভারতের ‘এ’ দলের বিপক্ষে বিপদের সময় ম্যাচ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা (৬২৩ মিনিট) ব্যাট করে দেখিয়েছেন, ‘আমি সবই পারি।’ ৪০২ বলে ১৬ বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায় সাজানো জাকিরের ১৭৩ রানের বিরাট ইনিংসটিই বাংলাদেশ ‘এ’ দল হার এড়িয়ে ম্যাচ ড্র করেছে।
সেই জাকির আজ শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অভিষেক টেস্টে ২১৯ বলে শতরান করলেন ভারতের বিপক্ষে; দল যখন অনিবার্য্য হারের মুখে, তখন।
পাহাড় সমান চ্যালেঞ্জ সামনে। ২৪ বছরের এ যুবা সব চাপ সামলে, ভয়-ডর না পেয়ে একজন পরিণত পারফরমারের মত ধৈর্য্য, সংযম দেখিয়ে বলের মেধা ও গুন বিচার করে খেলে উপহার দিলেন ১০০ রানের দারুণ পরিপাটি ইনিংস।
টেস্ট জীবনের শুরুতে এমন আস্থা ও আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ ভারত কোচ রাহুল দাবিড়ও। তিনি তাকে অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তা জানিয়ে জাকির বলেন, ‘স্যার (রাহুল দ্রাবিড়) বলেছেন যে খুব ভালো ব্যাটিং করেছি। অভিনন্দন জানিয়েছেন আরকি।’
দ্রাবিড়ের মতো কেউ কিছু বললে কেমন লাগে? ‘অবশ্যই খুব ভাল। এমন গ্রেট একজন প্লেয়ার (দ্রাবিড়) আর গ্রেট একজন কোচ এসে যদি অনুপ্রাণিত করে অবশ্যই খুব ভালো লাগে।’
তার নিজের অনুভুতিও বেশ ভাল, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো। সেঞ্চুরি করতে পেরে ভালো লাগছে আরকি।’
অভিষেকে শতরানের আশা ছিল কি? জাকিরের সহজ-সরল জবাব, ‘না। চেষ্টা ছিল যতটুকু ব্যাটিং করা যায়, যতটা লম্বা সময় ব্যাটিং করা যায়। যেহেতু দুই দিন পিছিয়ে, বড় টোটাল।’
মানছেন ‘এ’ দলের হয়ে ভারতীয় ‘এ’ দলের বিপক্ষে এ ১৭৩ রানের ইনিংসটি অনেক কাজে দিয়েছে। ওই ইনিংসটার জন্য কনফিডেন্স ছিল মনের ভেতরে। ওই প্রসেসটা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করছিলাম আরকি। ওইটাই ব্যাক অফ দ্য মাইন্ডে ছিল, প্রসেসটা ঠিক রেখে খেলার চেষ্টা করব।’
কিন্তু আপনিতো ওপেন করেন না, সাধারন তিন চার ও পাঁচে ব্যাট করেন। টেস্ট অভিষেকে উমেশ যাদব আর মোহাম্মদ সিরাজের মত ফাস্টবোলারের বিপক্ষে সরাসরি ওপেন করতে গিয়েও বুক কাঁপেনি আপনার? ‘ওপেনিং খুব একটা করিনি, তিন-চারে সবসময় ব্যাটিং করেছি, নতুন বল সবসময়ই মুখোমুখি হতে হয় প্রথম শ্রেণিতে। তখন তো নতুন বলই ফেস করতে হয়। ওই কনফিডেন্স ছিল যে পারব।’
জাকিরের রোল মডেল মুমিনুল হক সৌরভ। তা জানিয়ে এ সেঞ্চুরিয়ানের কথা, ‘আমার রোল মডেল মুমিনুল হক সৌরভ ভাই। ছোটবেলা থেকে সৌরভ ভাইকে (মুমিনুল হক) দেখে এসেছি। উনি আমার উচ্চতার, বাঁ-হাতি ব্যাটিং করেন। সৌরভ ভাইকে দেখে আরও একটু অনুপ্রাণিত হয়েছি। তার ডিসিপ্লিন, সবকিছুই খুবই ভালো লাগে।’
৫১৩ রানের প্রায় অসম্ভব টার্গেট সামনে রেখে চতুর্থ দিন শেষে দলের স্কোর ৬ উইকেটে ২৭২। সাকিব-মিরাজের ব্যাটে আশা। তারা কতদুর যেতে পারেন? জাকিরের আশা, ‘অবশ্যই, সাকিব ভাই আর মিরাজ যেভাবে ব্যাটিং করছে আশা করি তারা যদি খেলতে পারে আরও একটু আমাদের লক্ষ্যেও পৌঁছানো সম্ভব।’
এআরবি/আইএইচএস