‘লেওয়ানডস্কি আমাদের দলের তরুণদের রোলমডেল’
বেশি দিন হয়নি পোল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চেসল মিখনিয়েভিকজ। ৩১ জানুয়ারি দায়িত্ব পাওয়ার পর কোচ খুব কম সময়ই পেয়েছিলেন দলটিকে গুছিয়ে নিতে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বটা যখন তার সামনে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ছিল সুইডেনের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ওই ম্যাচের ওপর নির্ভর করছিল তাদের কাতারের টিকিট। নিজ দলকে বাছাই পর্ব পাড় করে মিখনিয়েভিকজ এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন কাতারের। বিশ্বকাপ খেলতে কাতার যাওয়ার আগে ফিফা ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোল্যান্ড কোচ তাদের প্রস্তুতি ও সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
প্রশ্ন: যখন দেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তখন কেমন অনুভূতি ছিল আপনার? দল নিয়ে আপনার প্রত্যাশা ও লক্ষ্য কী ছিল?
মিখনিয়েভিকজ: বছরের শুরুটা দুর্দান্ত ছিল আমার জন্য। আগের কোচ অপ্রত্যাশিতভাবে বহিষ্কার হওয়ার কারণেই আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটা পেয়ে যাই। এটা আমার স্বপ্ন ছিল, যেটা সত্য হয়েছে। আমি এটা জানি যে, আগে যত কাজই করেছি তার চেয়ে এই দায়িত্বটার চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। ফুটবল নিয়ে অনেক দিন কাজ করছি। এই কাজে সব সময়ই চাপ থাকে। তবে যখন আপনি দেশের কোচের দায়িত্ব পালন করবেন সে চাপটা অন্যরকম।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লেঅফ শুরু হওয়ার দুই মাস আগে আমি দায়িত্ব পেয়েছিলাম। আমি সরাসরি কাজে যোগ দিয়েছিলাম। খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করে তাদেরকে আমার দর্শন জানিয়ে তারপর ইউরোপ সফরে রওনা হয়েছিলাম।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম কাজ ছিল দলকে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করানো। সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচের আগে কোন চাপ অনুভব করেছিলেন?
মিখনিয়েভিকজ: এটা অপ্রত্যাশিত একটা পরিস্থিতি ছিল। যা আমাদের প্রস্তুতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। নিয়োগের পর থেকেই আমাকে ভাবতে হয়েছিল রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে। ওই ম্যাচটি বাতিল হওয়ার পর আমরা সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচের দিকে নজর দিয়েছিলাম। তখন প্রচণ্ড চাপ ছিল। কারণ, আমরা শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছিলাম। আমি পোলিশ সমর্থকদের প্রত্যাশা সম্পর্কেও সচেতন ছিলাম।
প্রশ্ন: রাশিয়া বিশ্বকাপের পর কাতার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়ায় আপনি ও দলের খেলোয়াড়রা কতটা খুশি?
মিখনিয়েভিকজ: কোয়ালিফাই করার ম্যাচে যখন শেষ বাঁশি বেজেছিল, তখন অনুভূতি ছিল অন্যরকম। আনন্দ ছিল বিশাল। আমাদের দলে কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে। সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তাদের মনের অবস্থা ছিল দারুণ। জিতলে বিশ্বকাপে-এমন অনুভূতি ছিল তাদের মধ্যে।
প্রশ্ন: আপনার ফুটবল দর্শন কি? আপনার কৌশলটাই বা কি?
মিখনিয়েভিকজ : আমার লক্ষ্য থাকে দলের জন্য ভালো ফুটবল খেলা। প্রতিটি প্রতিপক্ষের জন্যই আমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, কৌশল নির্ধারণ করতে হয়। এ জন্য আমি প্রতিপক্ষদের সম্পর্কে ধারণা নিতে বিশেষভাবে মনোযোগী হই। কোচের কাজই হলো প্রতিপক্ষকে ভালোভাবে চেনা।
প্রশ্ন: আর কয়েকদিন পর কাতারে বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে। মেগা এই টুর্নামেন্টের জন্য আপনি কেমন অপেক্ষায় আছেন?
মিখনিয়েভিকজ: বিশ্বকাপের জন্য আমি উম্মুখ হয়ে আছি। এ ধরনের টুর্নামেন্টের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা হবে আমার। তাই খুব রোমাঞ্চিত। বিশ্বকাপ অন্যরকম টুর্নামেন্ট। আশা করি, কাতারে আমাদের আরো ভালোকিছু হবে। কোনো কিছুতে সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন: গ্রুপপর্বে আপনি মেক্সিকো, সৌদি আরব এবং আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলবেন। এই ম্যাচগুলো থেকে কি প্রত্যাশা করছেন?
মিখনিয়েভিকজ: আমাদের গ্রুপে তিনটি অ-ইউরোপীয় দল। তাই ব্যক্তিগতভাবে প্রতিপক্ষের ম্যাচ দেখা আমাদের জন্য একটু কঠিন। তবে এটা নিশ্চিত যে, আমরা তিনটি কঠিন দলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। আমি এরই মধ্যে আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর কয়েকটি ম্যাচ সরাসরি দেখেছি। ওই দুই দেশের অনেক ফুটবলার ইউরোপে খেলে। ওইসব ক্লাবের খেলা দেখেও খেলোয়াড়দের সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগুতে চাই। প্রথম ম্যাচ যেহেতু মেক্সিকোর বিপক্ষে, তাই আমাদের মনোযোগ এখন ওই ম্যাচ নিয়ে।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, পোল্যান্ড নকআউট পর্বে উঠতে পারবে?
মিখনিয়েভিকজ: সেটা হলে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে। পাশাপাশি দেশের ভক্ত ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রত্যাশাও পূরণ হবে। আমাদের আকর্ষণীয় একটা স্কোয়াড আছে। যেই স্কোয়াডে আছেন রবার্ট লেওয়ানডস্কির মতো ফুটবলার। তিনি বিশ্বমানের খেলোয়াড়।
দলে কিছু প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড়ও আছে। যারা নিজ নিজ ক্লাবে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। আর রবার্ট লেওয়ানডস্কির কথা যদি বলি, তিনি চমৎকার ফুটবলার। আমি দেখি তিনি সবসময় দলের তরুণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেন, নিজের অভিজ্ঞতায় তাদের পরামর্শ দেন। এটা দারুণ একটা দিক। দলের তরুণসহ সব খেলোয়াড়ের কাছেই লেভানদোভস্কি রোলমডেল।
আরআই/এমএমআর/এএসএম