‘আজ সেই গৌরবময় ঐতিহাসিক দিন’

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৩:০১ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২১

ঠিক ৫০ বছর আগে আজকের দিনে গৌরবময় ইতিহাস রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবলে। ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশের একদল ফুটবলসেনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত ও তহবিল গঠন করতে প্রথম ফুটবল ম্যাচটি খেলেছিলেন।

যে ফুটবল দলের নাম ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু ৫০ বছর আগের সেই ঐতিহাসিক স্মৃতি রোমান্থন করে বলেন- বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে আজকের দিনটি গৌরবময়।

জাগো নিউজ : ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি ও তহবিল গঠনের লক্ষ্যে ভারতে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। ম্যাচের পঞ্চাশ বছর পূর্তি আজ। কী অনভূতি আপনার এই দিনে?

জাকারিয়া পিন্টু : হ্যাঁ। আজ ২৫ জুলাই। ঠিক ৫০ বছর আগে এই দিনে আমরা ঐতিহাসিক ফুটবল ম্যাচ খেলেছিলাম ভারতে। প্রথমেই বলব, আজ আমাদের সেই গৌরবময় ঐতিহাসিক দিন।

জাগো নিউজ : অনেকবার সেই দিনের কাহিনী বলেছেন। গৌরবময় কাহিনী শোনার কোনো অতৃপ্তিও নেই। কেমন ছিল ওই দিনটি?

জাকারিয়া পিন্টু : সংক্ষেপেই বলি। আমরা নদিয়ার জেলা প্রশাসক ডিকে ঘোষকে চিঠি দিয়েছিলাম ম্যাচের সময় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর জন্য। কিন্তু তারা প্রথমে রাজি হননি।

জাগো নিউজ : পরে কীভাবে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন?

জাকারিয়া পিন্টু : জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলাম, পতাকা ওড়াতে না দিলে আমরা খেলব না। কলকাতা চলে যাব। তারপর জেলা প্রশাসক নিজেদের মধ্যে একটা মিটিং করে জানালেন মাত্র ১০ মিনিটের জন্য বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো যাবে। আমরা রাজি হলাম।

জাগো নিউজ : তারপর কী হয়েছিল?

জাকারিয়া পিন্টু : আমি ও সহ অধিনায়ক প্রতাপ শঙ্কর হাজরা পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করি। তারপর নদিয়ার জেলা প্রশাসক ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। আমি আমাদের দেশের পতাকা উত্তোলন করি।

জাগো নিউজ : ঐতিহাসিক ওই ম্যাচের ফলাফল কী ছিল?

জাকারিয়া পিন্টু : নদিয়া জেলা ক্রীড়া সমিতি দলের বিপক্ষে ম্যাচটি আমরা ২-২ গোলে ড্র করেছিলাম।

জাগো নিউজ : যাদের নিয়ে ভীনদেশে ফুটবল যুদ্ধে নেমেছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য, সেই সতীর্থদের অনেককে হারিয়েছেন।

জাকারিয়া পিন্টু : অনেককে হারিয়েছি। অনেকে অসুস্থ। যারা আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন আজকের এই দিনে তাদের শান্তি কামনা করছি। যারা বেঁচে আছেন, তারা যেন সুস্থ থাকেন সে কামনাও আমার।

জাগো নিউজ : বিদেশের মাটিতে দেশের পতাকা উড়িয়েছেন। তাও অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে।

জাকারিয়া পিন্টু : হ্যাঁ। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন স্মৃতি। পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় ঘটনা নেই যে, কেউ দেশের স্বাধীনতার জন্য অন্য দেশে গিয়ে ফুটবল খেলেছে। এটা আমাদের ও আমার গর্বের সবচেয়ে বড় জায়গা।

জাগো নিউজ : কোন অতৃপ্তি আছে?

জাকারিয়া পিন্টু : স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল এখনও স্বাধীনতা পুরস্কার পায়নি। আমি এখনও আশা করছি, মৃত্যুর আগে যেন দেখে যেতে পারি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে।

জাগো নিউজ : আপনি স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন, কাজী মো. সালাউদ্দিনও পেয়েছেন।

জাকারিয়া পিন্টু : সেটা আমরা ব্যক্তিগতভাবে পেয়েছি। আমি চাই পুরো দল এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি পাক।

জাগো নিউজ : ম্যাচের সময়তো স্থানীয় মানুষের অনেক সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়েছিলেন।

জাকারিয়া পিন্টু : হ্যাঁ। যখন আমরা পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করছিলাম ও পতাকা উত্তোলন করেছিলাম তখন হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়েছিল। আমি আজকের দিনে সেই মানুষদের এবং ম্যাচটি আয়োজনের জন্য প্রশাসনের যারা সহযোগিতা করেছিলেন তাদের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।

আরআই/এসএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।